সুলয়া সিংহ: ভণ্ড সাধু। সেই ভণ্ড সাধুর বিলাশবহুল আশ্রম আর অগণিত ভক্ত। বাস্তবের দুনিয়ার এই 'নামী' ভণ্ড সাধুর কী পরিণতি হয়েছে, তা কারও অজানা নয়। রিল লাইফের ভণ্ড সাধুর পরিণতিও যে একই পথে এগোচ্ছে, তা আশ্রম সিরিজের প্রথম থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু কীভাবে আজকের রাজা কাল ভিখারিতে পরিণত হবে, সেটাই ছিল কৌতূহলের জায়গা। তা দেখতেই নতুন করে এম এক্স প্লেয়ার ডাউনলোড করে চোখ রাখা বাবা নিরালার আশ্রমের দিকে। সত্যি কথা বলতে এবার নিরাশ হতে হয়নি। বরং অবশেষে যে 'ভগবানে'র দীর্ঘ কাহিনি অন্তিম লগ্নে এসে পৌঁছেছে, সেটা দেখে স্বস্তি পাওয়া গেল।

বাস্তবের ঘটনায় ভিত্তি করে ছবি তৈরি করতে ভালোবাসেন পরিচালক প্রকাশ ঝা। একইভাবে OTT প্ল্যাটফর্মেও হইচই ফেলে দিয়েছিল তাঁর 'আশ্রম'। ববি দেওলকে সাধুর চরিত্রে এনে বেশ চমকে দিয়েছিলেন পরিচালক। তারপর 'জপনাম, জপনাম' বলতে বলতে ভক্তি, ভয়, মাদক পাচার, যৌনতা, রাজনীতি, পালটা রাজনীতির মোড়কে এগিয়ে যায় গল্প। সিরিজের তৃতীয় ভাগে নায়িকাকেই (পাম্মি) তোলা হয় কাঠগড়ায়। আর হাজারো 'পাপ' করেও বহাল তবিয়তে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকে ভগবান নিরালা। সদ্য মুক্তি পাওয়া তিন নম্বর সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে পরিচালক দর্শকদের নিয়ে গিয়েছিলেন মন্টি ওরফে নিরালার 'সাধু' হয়ে ওঠার দিনগুলিতে। কীভাবে সন্তকে সরিয়ে ছলেবলে কৌশলে সেই আসন দখল করেছিল মন্টি (ববি দেওল) এবং তার বন্ধু ভোপে (চন্দন রায় সন্যাল)। এটা যেমন গল্পের এক পিঠ, তেমনই অন্য পিঠে উঠে আসে পাম্মি পহেলবানের ফন্দি। বাবা নিরালাকে উচিত শিক্ষা দিতে প্রতিনিয়ত নানা ছক কষছে সে। আর সেই ছকেই শেষমেশ পর্দাফাঁস হয় সাধুর। তবে এই সফরে রয়েছে একাধিক টুইস্ট। বাবা নিরালার সত্যিটা সামনে আনতে গিয়ে কাছের মানুষকেও হারাতে হয় পাম্মিকে। যা টানা দেখতে যেতে ইচ্ছা করবে।
পাম্মির অভিসন্ধি জানা থাকলেও কে তার সঙ্গ দিচ্ছে আর কে তার ফাঁদে পা দিচ্ছে, এনিয়ে ভালোই ধন্দ তৈরি করেছেন পরিচালক। চন্দন রায় সন্যালের অভিনয় এখানে অতিরিক্ত প্রশংসার যোগ্য। গোটা সিরিজেই তাঁর উপস্থিতি উজ্জ্বল। তবে শেষ ভাগে তিনিই যেন যাবতীয় লাইম লাইট কেড়ে নিলেন। এবারের সিরিজে আরও একটি ভালো বিষয় হল প্রায় প্রতিটি এপিসোডই মেদহীন, ঝরঝরে।
রাজনীতির বিছানো জালে বাবা নিরালার নিজেরই ফেঁসে যাওয়া কোথাও গিয়ে রিল এবং রিয়েল ঘটনাকে মিলিয়ে দিয়েছে। অর্থ আর প্রতিপত্তির দম্ভের করুণ পরিণতি ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। তবে শাসনের সিংহাসন যে কখনওই ফাঁকা থাকে না, সে কথাও জানাতে ভোলেননি প্রকাশ ঝাঁ। এবার সেই আসনে কে আসিন হচ্ছে, সেটাই বড় প্রশ্ন। কিন্তু সৎ পথে চলা পাম্মি শেষমেশ কোন পথ বেছে নিল, তাও খানিক অবাক করা। গুরুত্বপূর্ণ হলেও খানিক ফ্যাকাসে তৃধা চৌধুরীর চরিত্রও। অ্যানিমেল ছবিতে কামব্যাক করা ববি আবারও নিজ অভিনয়ে মন ভরিয়েছেন। তবে ভোপা আর পাম্মির রসায়নই এবারের পর্বের ইউএসপি।