সুলয়া সিংহ: বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ নিয়ে যখন সরগরম বিহার, ঠিক তখনই ওটিটি-তে আবির্ভাব 'মহারানি'র। রক্তাক্ত রাজনীতি, ক্ষমতার আস্ফালন থেকে নারীশক্তির রণ কৌশল নিয়ে হাজির সিরিজের চতুর্থ সংস্করণ। বিহারের রাজনীতি নিয়ে এই সিরিজ শুরু হলেও এবার মহারানির লক্ষ্য দিল্লির মসনদ। মুখ্যমন্ত্রী রানি ভারতী থেকে প্রধানমন্ত্রীর কুরসি নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রানির 'মহারানি' হয়ে ওঠার দীর্ঘ পথ এবং সেই পথের কাঁটা দিয়েই গল্প বুনেছেন পরিচালক পুনিত প্রকাশ। এ সিরিজের গোড়ায় দর্শকরা রাবড়ি দেবীর প্রতিচ্ছ্ববি খুঁজে পেয়েছিলেন রানির চরিত্রে। তবে এবার সেই চরিত্রে যে রং লেগেছে, তা মনে করিয়ে দিচ্ছে আরও এক বাস্তব চরিত্রকে। কার, তা নয় হয় নিজেরাই দেখে বুঝে নিন। তবে আপাতত দেখা যাক কেমন হল মহারানি ৪।
বিহারের রাজনীতিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই পা রাখতে হয়েছিল রানিকে (হুমা কুরেশি)। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাকে ধীরে ধীরে ক্ষুরধার রাজনীতিবিদে পরিণত করেছে। আর এবার সেই রানি দিল্লি দখলের রণনীতি কষছেন। এবারের কাহিনি শুরু হচ্ছে খানিকটা এইভাবে। কেন্দ্রের সরকার বিহারে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর। কিন্তু তারই মধ্যে শরিকরা হাত ছেড়ে দেওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে খোদ প্রধানমন্ত্রীর। সরকার বাঁচাতে তখন বিরোধী রানির 'দ্বারস্থ' প্রধানমন্ত্রী সুধাকর শ্রীনিবাস যোশী (বিপিন শর্মা)। কিন্তু সে প্রস্তাব খারিজ করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে দেয় রানি। দিল্লির তখ্ত পেতে ছেড়ে দেয় মুখ্যমন্ত্রীর আসনও। আঞ্চলিক দলগুলোকে একজোট করার কাজ শুরু করে দেয় পুরোদমে। বাস্তবের মাটিতে এনডিএ-র বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোটের ছবিই যেন পর্দায় ফুটে ওঠে ধীরে ধীরে।
তাহলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে কে? এখানেই ঢুকে পড়ে পরিবারবাদ। মেয়েকে প্রশাসনিক প্রধানের পদে বসিয়ে ছেলেকেও সক্রিয় রাজনীতিতে উৎসাহ দেয় রানি ভারতী। উলটোদিকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় যোশীও। শুধু কূটনৈতিক মার-প্যাঁচেই নয়, সরাসরি রানির পরিবারকেও নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী। আর তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিহার থেকে দিল্লির রাজনীতি। তবে এসব বিষয় ফুটিয়ে তুলতে অতিরিক্ত মিউজিক কিংবা লার্জার দ্যান লাইফের মতো দৃশ্যের ব্যবহার করে খিচুড়ি রাঁধেননি পরিচালক। বরং সাদামাটা অথচ সুস্বাদু ডাল-ভাত পরিবেশনেই 'মহারানি' হয়ে উঠতে পেরেছে অনেক বেশি বাস্তবধর্মী। একইসঙ্গে সরকারের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যবহার, 'ডবল ইঞ্জিন সরকার', 'কুরসি কি পেটি বাঁধ লিজিয়ে', 'পরিবারতন্ত্রে'র মতো শব্দগুলো কানে যেতেই বর্তমান রাজনীতির ছবির সঙ্গে যেন আরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এই সিরিজের চরিত্রগুলোও কম ইন্টারেস্টিং নয়। কাউকেই ভালো কিংবা কালোর আধারে ফেলে দেওয়া যায় না। প্রত্যেকের চরিত্রের ধূসর দিকটাকেও সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। কখনও পরিবারবাদ তত্ত্ব রানি ভারতীর সঙ্গে কাবেরী (কানি কুশ্রুতি) এবং মিশ্রাজির দূরত্ব তৈরি করেছে, তো কখনও মায়ের সম্মান পেতে মরিয়া জয় জড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতিতে। মেয়ে রোশনী মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেও দ্বিধাগ্রস্ত। আবার দুর্নীতি আর আত্মমুগ্ধতায় ডুবে থাকা প্রধানমন্ত্রীর প্রেমিক সত্ত্বাও বাদ যায়নি। তবে আলাদা করে বলতেই হয় গৌরী শংকরের (বিনীত কুমার) কথা। মিশ্রাজি যদি বিহার রাজনীতির চাণক্য হয়, তাহলে গৌরীবাবু নিঃসন্দেহে নারদ। তাঁর পাশার চালেই এলোমেলো হয়ে যায় রানির যাবতীয় সমীকরণ। আর রানি? মানে হুমা কুরেশি এককথায় অনবদ্য। একাধারে তিনি শান্ত, ক্ষুরধার, পরিণত, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাজনীতিক, আবার অন্যদিকে মা হিসেবেও তিনি ততটাই মমতাময়ী। তবে যে শপথ এই সিজনের শুরুতে রানি ভারতী নিয়েছিল, তা পূরণ না হওয়াই যেন স্পষ্ট করে দিল, বিহার রাজনীতির হাঁড়ির খবর আরও একবার পাওয়া যাবে।
