সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ফি বছর ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে হইচই-এর ভুতুড়ে সারপ্রাইজ মাস্ট! এবারেও তার অন্যথা হয়নি। শুক্রবার মুক্তি পেল জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'নিশির ডাক'। অমাবস্যার আবহে কতটা ভয় ধরাল এই সিরিজ?
গল্পের প্রেক্ষাপট সোনামুখী গ্রাম। যেখানে রাতে বাতাসে ভেসে আসে এক অভিশপ্ত সুর, নিস্তব্ধতার আড়ালে শোনা যায় প্রতিশোধের কণ্ঠ। এক বিস্মৃত গায়িকা 'নিশিগন্ধা'কে নিয়ে গবেষণা করতে সেই গ্রামে পৌঁছয় ছয় বন্ধু। যারা প্রত্যেকেই সঙ্গীতের পড়ুয়া। কিন্তু সেই অভিশপ্ত গ্রামে পা রাখতেই তাদের সঙ্গে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকী বন্ধুবিয়োগ পর্যন্ত হয়। সেই রহস্যের উন্মোচন করতে গিয়েই ইতিহাসের এক 'ছেঁড়া পাতা' খুঁজে পায় ওই ছয় বন্ধু। যা তাদের জীবনে অভিশাপের অন্ধকার বয়ে আনে। এমন গা ছমছমে ভুতুড়ে গল্প নিয়েই এগিয়েছে 'নিশির ডাক'। যেখানে গান গাওয়া মানেই সাক্ষাৎ মৃত্যুকে ডেকে আনা।
অতীত এবং বর্তমানকে সমান্তরালে রেখে সাজানো হয়েছে 'নিশির ডাক'-এর চিত্রনাট্য। গল্পের নায়িকা রবি ঠাকুরের স্নেহধন্যা নিশিগন্ধা ভাদুরী। গান গাওয়ার জন্য ভয়ানক 'সাজা' ভোগ করতে হয় নিশিকে। তার পর থেকেই সোনামুখী গ্রামে আঁধার নামলে গান গাওয়া নিষিদ্ধ! কারণ গ্রামে কেউ গাইলেই প্রতিশোধী আত্মা ফিরে ফিরে আসে। যার ফলভোগ করতে হয় ওই ছয় বন্ধুকেও। নিশি রাতের ডাকে হাতছানি দিয়ে তারাও নিজেদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। এমন আবহেই সোনামুখীর অন্ধকার অতীতের হদিশ পান তারা। তার পর? বাকিটা জানতে হলে হইচইয়ের পর্দায় চোখ রাখতে হবে। কালীপুজোর আবহে এহেন গা ছমছমে রহস্য রোমাঞ্চকর সিরিজ উপভোগ্য বটে। তবে গল্প এবং অভিনয়ে নিশির ডাক ছক্কা হাঁকালেও, চিত্রনাট্য এবং সম্পাদনায় আরেকটু পোক্ত হলে জমে যেত! সেটা কীরকম?
অতীত-বর্তমানের সমান্তরাল সমাবেশ মাঝেমধ্যে দর্শককে গুলিয়ে দেয়। অতীতের 'অভিশপ্ত অধ্যায়ে'র অংশের বাঁধুনি আরেকটু পোক্ত হতে পারত। এক্ষেত্রে চিত্রনাট্য এবং সম্পাদনার উপরই সেই গুরুভার বর্তায়। তবে এই দুটি বিষয়ই খানিক দুর্বল। বাকি, সিরিজের গল্প ছক্কা হাঁকিয়েছে। শিরদাড়া দিয়ে হিমস্রোত বইতে বাধ্য! নিশির ভূমিকায় সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন অনবদ্য, তেমনই তার সই-এর চরিত্রে সৃজা দত্তও প্রশংসার দাবিদার। এছাড়াও সত্যম ভট্টাচার্য, ঋক চট্টোপাধ্যায়, শ্বেতা মিশ্র, অরুণাভ কাঞ্জিলাল, অনুভব কাঞ্জিলাল, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং রাজদীপ গুপ্ত যে যার চরিত্রে যথাযথ। তবে সত্যম ভট্টাচার্যের চরিত্রটিকে দর্শকের আবিষ্কার করার আরেকটু সুযোগ থাকলে ভালো হত। তবে সবমিলিয়ে মন্দ নয় 'নিশির ডাক'। এখনও না দেখে থাকলে এই অমানিশিতেই দেখে ফেলুন সিরিজটি।
