সন্দীপ্তা ভঞ্জ: প্রলোভনের হাতছানিতে চার শৈশবের বন্ধুর আপাতদৃষ্টিতে 'নিখুঁত জীবন' গোলকধাঁধায় জড়িয়ে যায়। সম্পর্কের জটিল ধাঁধায় জড়িয়ে সর্বনেশে গোপন খেলার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে? 'গভীর জলের মাছ' সিরিজের সিক্যুয়েলে আবারও সেই চেনা প্লটে ভয়ংকর খেলার গল্প ফাঁদলেন পরিচালক সাহানা দত্ত। তবে এবারের খেলার একটাই শর্ত- 'এই গভীর জলের মাছেরা যাহা বলিবে মিথ্যে বলিবে!'
এই প্রজন্মের ঘরণিরা কীভাবে ঘরে-বাইরে দু’দিক সামলায়? মজার ছলে নিজেদের মধ্যে বর পাল্টাতে গিয়ে কী বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের? চার নারীর জীবনের ওঠা পড়ার গল্প নাটকীয়তায় মোড়কে প্রথম সিজনেই দেখিয়েছিলেন সাহানা দত্ত। এবারের গল্পও এগিয়েছে সেভাবেই। তবে দ্বিতীয় মরশুমে 'কাহানি মে টুইস্ট!' এবারে খিলাড়ি সেই চারকন্যের স্বামীরা। স্ত্রীদের ট্রিপের সুযোগ নিয়ে 'পিএনপিসি' ক্যাফেতে নতুন ছক কষে ফেলল সকলে। যার কাণ্ডারী চন্দ্রিমার স্বামী তীর্থ। তার প্ল্যানে পা দিয়েই বাকি তিন বান্ধবীর স্বামীরা একের পর এক জটিল ধাঁধায় জড়িয়ে যায়। আগের মরশুমে চন্দ্রিমার মৃত্যুরহস্য কৌতূহল জাগিয়েছিল। আর দ্বিতীয় সিজনের দুই নম্বর পর্বেই দীতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপরই সব এলোমেলো হয়ে যায়! বিশাখা এবং আরাত্রিকা একে-অপরকে সন্দেহ করতে থাকে নিরন্তর। উপরন্তু থানা-পুলিশের উপদ্রব! কে সেই ঘাতক? যার জন্যে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত উঠে একের পর এক মৃত্যু ঘটছে! 'ফ্ল্যাশ ব্যাক' টেনে সেই খোঁজেই এগিয়েছে দ্বিতীয় সিরিজ।
কার সখের সাজানো বাগান, কে এলোমেলো করে দিচ্ছে? 'গভীর জলের মাছ ২'র একেকটা পর্বে সেটাই উন্মোচিত হতে থাকে। মোট আটটি পর্বের সিজন। খুব একটা বেশি দৈর্ঘ্যের নয়। প্রতিটা পর্বের প্লটে টুইস্ট থাকলেও চিত্রনাট্যের বাঁধন বড় আলগা। দীতি ওরফে তৃণা সাহার মৃত্যুর ঘটনা দেখানোর দৃশ্যটা নেহাতই একটা 'গিমিক' বলে মনে হয়েছে। সেই ক্রাইসিস মোমেন্টটাই ফুটে ওঠেনি সেভাবে। আরও হয়রান হতে হয় দীতির স্বামীকে দেখে। যখন 'পজেসিভ' স্বামী স্ত্রীর মৃত্যুতেও আচমকাই ভাবলেশহীন চেহারা নিয়ে বন্ধুমহলে ঘুরে বেড়ায়। স্ত্রী বিয়োগের কোনও ক্ষতর দুঃখ মাত্র নেই তার মধ্যে। প্রান্তিক ভালো অভিনেতা হলেও অগভীর চিত্রনাট্যের জেরেই এমনটা ঘটেছে বলে অনুমান! তবে এবারের সিরিজে এক নতুন মৎসকন্যার আবির্ভাব! তীর্থর অফিসের কর্মী বৃন্দা। এই রহস্যময়ী চরিত্রই যে দ্বিতীয় মরশুমের মূল ইউএসপি, তা বললে অত্যুক্তি হয় না। কীভাবে চন্দ্রিমার মৃত্যু ঘটল, এই মরশুমে সেই রহস্য সমাধান হলেও কি মূল 'কালপ্রিট'কে কি ধরা গেল? তার জন্য চোখ রাখতে হবে হইচইতে।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারে আক্রান্ত মিঠু, চলছে কেমো, স্ত্রীকে নিয়ে মুখ খুললেন ‘ফেলুদা’ সব্যসাচী]
ইতিমধ্যেই আগামী সিজনের আভাস মিলেছে। তবে আসা করা যায়, এই সিরিজের গল্পও চুয়িংগামের মতো টেনে অগভীর রহস্য তৈরি করবেন না নির্মাতারা। সাহানা দত্ত (Sahana Dutta)পরিচালিত ওয়েব সিরিজে স্বস্তিকা দত্ত (Swastika Dutta), তৃণা সাহা (Trina Saha), উষসী রায় (Ushasi Ray), অনন্যা সেন (Anannya Sen), রাজদীপ গুপ্ত (Rajdeep Gupta), সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Shoumo Banerjee), যুধাজিৎ সরকার (Judhajit Sarkar), প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় (Prantik Banerjee) সকলেরই অভিনয়ই প্রশংসার দাবিদার। তবে পরকীয়া কিংবা পার্টনার সোয়াইপ দেখাতে গিয়ে বেশকিছু দৃশ্য অতিকথন বলে মনে হয়েছে। তবে বিঞ্জ ওয়াচ হিসেবে মন্দ নয় 'গভীর জলের মাছ ২'।