নির্মল ধর: পরিচালক তরুণ মনসুখানি ও প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা হাত মিলিয়ে 'হাউসফুল' সিরিজের পঞ্চম ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবি বানালেন। এখনও পর্যন্ত ভারতে যেসমস্ত কমেডি ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়েছে, তার মধ্যে এটা নিঃসন্দেহে সফলতম তো বটেই, পাশাপাশি পরিচালক-প্রযোজক একটা নতুন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করে নতুন মাইলফলকও গড়লেন বলিউডে। কী সেই চমক? আসলে কমেডির মোড়কে তৈরি এই ছবিতে থ্রিলার-গোয়েন্দা ঘরানার স্বাদ দিতে চেয়ে দুটি পৃথক ভার্সন তৈরি করেছেন নির্মাতারা। এবার প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারার আগে দর্শকদের সংশয় হতেই পারে, একই সিনেমার 'এ' এবং 'বি' ভার্সন কেন? তাহলে প্রথমেই একটু ব্যাপারটা খোলসা করে বলা যাক। আসলে দুটি পৃথক ভার্সনের গল্প একই খাতে বইলেও আলাদা ক্লাইম্যাক্সেই রয়েছে চমক!
দুটি গল্পের চিত্রনাট্য একইরকমভাবে সাজানো। ট্রেলারে ইতিমধ্যেই দেখানো হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের খুন হয়ে যাওয়ার বিষয়টা। সন্দেহভাজনের তালিকায় বাকি ছয় জন। এবার প্রশ্ন খুনি কে? এখানেই সিনেমার 'এ' এবং 'বি' ভার্সনের তফাৎ। কারণ দুটো ভার্সনে দুজন আলাদা খুনিকে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ নাক ঘুরিয়ে একজন দর্শক যাতে উৎসাহ নিয়ে প্রকৃত খুনি কে, সেটা জানতে ছবির দুটি ভার্সনই দেখতে পারেন। এটা নির্মাতাদের ব্যবসা বাড়ানোর কৌশলী ছাড়া আর কিছুই নয়! তবে আমার যেহেতু 'বি' ভার্সনটাই দেখা। তাই সেটুকুর সিনেম্যাটিক ট্রিটমেন্ট দেখেই হলফ করে বলতে পারি, একটি ছবি দেখলে দর্শকের মধ্যে আরেকটি ভার্সন দেখার ধৈর্য সর্বপরি ইচ্ছে থাকবে কিনা, সেটা বলা মুশকিল।
গল্পের শুরুটা কীরকম? রঞ্জিত ডোবরিয়াল নামে এক বিলিয়নিয়ার তাঁর একশোতম জন্মদিনে সকলকে এক প্রোমোদতরীতে আমন্ত্রণ জানান ‘উইল’ পড়ে শোনানোর জন্য। যোগ্য উত্তরাধিকারের হাতে তুলে দেবেন তাঁর এই বিপুল সম্পত্তি। কিন্তু গোল বাঁধে ছেলের নাম ‘জলি’ নিয়ে। কারণ সেই পার্টিতে আরও দুজনের নাম জলি। রঞ্জিত ডোবরিয়ালের আসল উত্তরাধিকার কে? সম্পত্তি পাওয়ার জন্য এবার শুরু হয় নানা ফন্দি-ফিকির! এসবের মাঝেই গল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র খুন হয়ে যায়। বয়স্ক রঞ্জিত ওই জাহাজেই তাঁর ব্যবসার উত্তরাধিকার ঘোষণা করার আগের দিন তিনি হঠাৎ মারা গেলেন। এরপর তার সন্তান 'জলি'র পরিচয় নিয়ে হাজির হয় তিন নকল জলি, সঙ্গে তাঁদের তিন সুন্দরী বান্ধবী। এবার কে আসল জলি, সেটা নির্ধারন করতেই এই ছয়জন এবং হাসপাতালের ডাক্তার, কোম্পানির বিভিন্ন অফিসার মিলে এক জগাখিচুড়ি ঘটনা ঘটাতে শুরু করেন। ইতিমধ্যেই উপস্থিত হয় লন্ডন থেকে সাসপেন্ডেড দুই পুলিশ অফিসার জ্যাকি শ্রফ ও সঞ্জয় দত্ত এবং সাধুবাবার বেশে নানা পাটেকার। এবার ষোলোকলা পূর্ণ। নাচগান, আর মাঝে মাঝে খুনি ধরার অজুহাতে কমেডির নামে অশালীনতার ভাঁড়ামি। প্রকৃত খুনিকে খোঁজার সেই অভিযানটিকেই দুটো ভার্সনে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে। সিনেমায় অভিনয় করেছেন, অক্ষয় কুমার, অভিষেক বচ্চন, রীতেশ দেশমুখ, ফারদিন খান, ডিনো মোরিয়া, চাঙ্কি পান্ডে, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, চিত্রাঙ্গদা সিং, নার্গিস ফকরি, সোনাম বাজওয়া, ববি দেওল, শ্রেয়াশ তালপড়ে প্রমুখ।
পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে 'নামিদামী', অনামী-বেনামী এক দঙ্গল অভিনেতার যে কী কিম্ভুত কাণ্ডকারখানা! গল্পহীন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য চিত্রনাট্যকারের কলম এবং পরিচালকের ক্যামেরা থেকে যেসব দৃশ্য অবর্ণনীয় যন্ত্রনায় দেখতে হল, তারপর আর অন্য ভার্সন দেখার ইচ্ছে কোনও দর্শকেরই থাকবে না! আসলে কমেডির নামে কার্যকারণহীন হাসির কিছু দৃশ্য জুড়ে এর আগে চারটি ছবি বেশ আর্থিক সাফল্যের সঙ্গেই পরিবেশন করেছিলেন নির্মাতারা। তবে এবার যে তাঁদের কলম-ক্যামেরায় জোর নেই, তা বেশ বোঝা গেল।
নইলে প্রায় পুরো ছবি জুড়ে যৌনরসে মাখানো সংলাপ আর শরীরী অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে দর্শক ধরে রাখার প্রচেষ্টা তারা কেনই বা করবেন? যৌনআবেগ কিংবা স্বল্পাবাস নারীদের দেখানো ভারতীয় সিনেমার পর্দায় নতুন নয়! তবে 'হাউসফুল ৫'-এ যেভাবে অধিকাংশ নারী চরিত্রদের শরীরের অনাবৃত অংশে ক্যামেরার লেন্স বোলানো হয়েছে, তা বড্ড বেখাপ্পা লাগে দেখতে। ছবির অনেকাংশে সংলাপ বলার ভঙ্গি, চরিত্রগুলির বডিল্যাঙ্গুয়েজও অযথা যৌনতার ইশারা দেখানো হয়েছে। শেষপাতে বলে রাখি- এবার এটা নিশ্চিত যে 'হাউসফুল ৬' হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। গল্পের গরুকে সেভাবেই মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এই ছবিতেও অক্ষয় কুমার এবং অভিষেক বচ্চন কিন্তু আগের পর্বগুলোর মতোই বেশ লড়ে গিয়েছেন- এটুকুই যা সান্ত্বনা!