shono
Advertisement
Sharthopor film review

সমাজের চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক ভাবনার সুতোয় টান দিল কোয়েল-কৌশিকের 'স্বার্থপর', পড়ুন রিভিউ

পয়লা ছবিতেই দক্ষ পরিচালক হিসেবে নিজের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখলেন অন্নপূর্ণা বসু।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 02:10 PM Oct 24, 2025Updated: 05:27 PM Oct 24, 2025

নির্মল ধর: পরিচালক অন্নপূর্ণা বসুর প্রথম ছবি। আর পয়লা সিনেমাতেই নারী অধিকারের বার্তা দেওয়ার জন্য তাঁর বিষয় ভাবনাকে 'সাবাশি' দিতেই হয়। ভাইবোনের মধ্যে বিরোধের কারণে সম্পত্তির ভাগ নিয়ে আইন-আদালতের দ্বারস্থ হওয়া আজকের যুগে কোনও নতুন ঘটনা নয়। আকছার হচ্ছে, হয়ও। কিন্তু অন্নপূর্ণা তাঁর 'স্বার্থপর' ছবিতে সমাজের চিরাচরিত, রদ্দিমার্কা পুরুষতান্ত্রিক ভাবনার সুতোয় টান দিলেন! ভাইবোনের সম্পর্কে সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের কথা তিনি বলেননি। বরং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, সম্পত্তির সমান অংশীদার বোনের অনুমতি না নিয়ে এক দাদার পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে দেওয়ার মন-মানসিকতা এবং ধৃষ্টতা! অন্নপূর্ণা তাঁর 'স্বার্থপর' সিনেমায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সেই 'অহমবোধ'কেই তুলে ধরেছেন।

Advertisement

দাদা সৌরভ (কৌশিক সেন) বোন অপর্ণাকে (কোয়েল মল্লিক) না জানিয়েই পৈতৃক ভিটে বিক্রি করার কাজ শুরু করে। তাই অনায়াসেই 'নো অবজেকশন'-এর চিঠিতে সই করে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ হয় না তাঁর। এদিকে অপর্ণা সম্পত্তি চায়না, সে চায় আত্মসম্মান। তাই বাধ্য হয়েই সরব হতে হয় তাঁকে। কারণ আজ সে চুপ করে গেলে পরবর্তী প্রজন্মও সেটাই শিখবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখবে না। তেমন এক পরিস্থিতি থেকেই দাদাবোনের সম্পর্ক আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক ভাইফোঁটার দিনে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় সৌরভ-অপর্ণা। বোন অপর্ণার রাগ, যে বাড়ি তাঁর কাছে এযাবৎকাল একমাত্র ঠাঁই বলে মনে হত, এবার সেই ভিটে সম্পর্কেই কোর্টে গিয়ে তাঁকে বলতে হবে যে, এই বাড়ির উপর তাঁর কোনও অধিকার নেই! এই যন্ত্রণা সইতে পারে না অপর্ণা। তবে দাদাবোন আদালতে মুখোমুখি হলেও অন্তত বোন অপর্ণা কিন্তু দাদাকে কখনও অশ্রদ্ধা করেনি। বরং বউদি মামলার কারনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর সেবা করেছে সে।

সমান্তরালে স্বার্থপর ছবি তুলে এনেছে সৎ ও অসৎ উকিলের লড়াইও। পরিচালক অন্নপূর্ণা তাঁর দক্ষ চিত্রনাট্যের মাধ্যমে সরখেল নামে বাদী পক্ষের উকিল (অনির্বাণ চক্রবর্তী) ও বিবাদী পক্ষের উকিলকে (রঞ্জিত মল্লিক) ভালোই লড়িয়ে দিয়েছেন এজলাশে এবং তার বাইরে। জমজমাট চিত্রনাট্যে দাদাবোনের সংসারের ছবিও সুন্দর ডিটেইলস পাওয়া গেল। দুই বাড়ির এই বিরোধের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপর্ণার স্বামী দেবর্ষি (ইন্দ্রজিৎ), তাঁর ভূমিকাটি বড়ই অস্বস্তিকর! নিজের স্ত্রী এবং শ্যালকের মধ্যে 'সমঝোতার সেতু' হতে চেয়েও পারছে না সে। সেই চরিত্র খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন ইন্দ্রজিৎ। বহুদিন পর ওঁকে দেখে ভালো লাগলো। অন্নপূর্ণা বসুর পরিচালনায় সাবলীলতা আছে, ছবির গতি মসৃণ। অতিনাটকীয়তা প্রায় নেই। একমাত্র অন্তিমপর্বে আদালতে যুধিষ্ঠির উকিলের (রঞ্জিত) রূদ্ধশ্বাস সংলাপ বলাটুকু ছাড়া। অবশ্য প্রায় এক নিঃশ্বাসে দীর্ঘসংলাপ শেষ করার পর দর্শকের হাততালি কুড়িয়েছেন রঞ্জিত মল্লিক।

সংলাপ রচনায় যেমন এখনকার জেন আলফা কিংবা জেন জেড-দের 'ভোকাবুলারি' ব্যবহারও করা হয়েছে। তেমনই সিনেমার দুটি গানের ('এই শোন, খেলতে যাবি চল', এবং 'ভেসে যায় সব খেলা একদিন') কথা ও সুর গল্পের গতি বাড়িয়েও দেয়। গানগুলি সুন্দর। অভিনয়ে অপর্ণার ভূমিকায় গ্ল্যামার ঝেড়ে ফেলে কোয়েল মল্লিক অনেক বেশি ঘরোয়া, স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত সংসারের বউ হয়ে উঠেছেন। তাঁর কিছু নীরব মুহূর্ত মনে থেকে যাবে। কৌশিক সেন এই ধরনের নেগেটিভ চরিত্রে অনেকবার অভিনয় করেছেন, কিন্তু এখানে তাঁর চরিত্রে নেগেটিভ ভাইবের সঙ্গে ঠিক নিচের লেয়ারে একটা নীরব কোমল স্নেহের পরত ছিল, সেটুকু তিনি খুবই ছোট-ছোট আঁচড়ে তুলে এনেছেন অনুপ সিংয়ের ক্যামেরার সামনে। আর দুই উকিলের চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী ও রঞ্জিত মল্লিকের অম্লমধুর সমীকরণ নজর কাড়ে। একটি ক্যামিও চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্যও নজর কাড়লেন। সব মিলিয়ে পয়লা ছবিতেই দক্ষ পরিচালক হিসেবে নিজের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখলেন অন্নপূর্ণা বসু।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পয়লা সিনেমাতেই নারী অধিকারের বার্তা দেওয়ার জন্য অন্নপূর্ণা বসুর বিষয় ভাবনাকে 'সাবাশি' দিতেই হয়।
  • অন্নপূর্ণা তাঁর 'স্বার্থপর' সিনেমায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সেই 'অহমবোধ'কেই তুলে ধরেছেন।
  • অপর্ণার ভূমিকায় গ্ল্যামার ঝেড়ে ফেলে কোয়েল মল্লিক অনেক বেশি ঘরোয়া, স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত সংসারের বউ হয়ে উঠেছেন।
Advertisement