কুণাল ঘোষ: ‘রক্তবীজ’ দেখেছি। মুগ্ধ। এবার ‘রক্তবীজ ২’। ঘটনাচক্রে শুরু থেকে যোগাযোগ ছিল। চিত্রনাট্য লেখার পর এক দুপুরে নাটকীয় পাঠের মাধ্যমে শুনিয়েছিল অন্যতম পরিচালক শিবপ্রসাদ। এখন ওদের অফিসের স্ক্রিনিং রুমে বসে দেখলাম। চিত্রনাট্যে যা সম্মোহিত হয়েছিলাম, সম্পূর্ণ সিনেমা দেখে তার চারগুণ অভিভূত। এটুকু লিখে দিতে পারি, ‘রক্তবীজ ২’ শুধু মেগাহিট হবে না, এই ছবি ভবিষ্যতের ‘রক্তবীজ ৩’ ঝড় তোলার বীজটাও নিশ্চিতভাবে বপন করে রাখল।
আমি সিনেমার বিশেষজ্ঞ নই, দর্শক। আমি চাই বাংলা ছবির দর্শক বাড়ুক। পুজোয় চারটি ছবি নিয়ে হইচই, চারটির প্রতিই শুভেচ্ছা থাকল। কিন্তু, ছবি দেখার সুবাদে বলতে পারি, ‘রক্তবীজ ২’ এমন ছবি, যা কন্টেন্ট দিয়েই বাজার মাত করে দেবে, লিখে রেখে দিন। গতবছর ‘রক্তবীজে’র গল্পে দুর্গাপুজোয় গ্রামের বাড়িতে আসা রাষ্ট্রপতিকে হত্যার চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা, নেতৃত্বে মুনির আলম। রহস্যঘন নাটকীয় পরিস্থিতিতে তা ব্যর্থ করেন ডিআইজি আবির, এসপি মিমি। তবে তখনই শেষদিকে জেগে উঠেছিল নতুন মুনির। এবার ‘রক্তবীজ ২’ দেখাচ্ছে, প্রণববাবুর আদলে তৈরি ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন বাংলাদেশ সফরে। আর সেখানেই তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা এবং এ সংক্রান্ত নাটকীয় কিছু টার্গেট পরিবর্তন করে আরও গভীর ক্ষত তৈরির চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ীর একটি বইয়ের সূত্র ধরে জিনিয়া গল্পটা লিখেছেন ফাটিয়ে। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার জুটির পরিচালনা বাংলা সিনেমাকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। অ্যাকশন, রহস্য, দম বন্ধ করা মুহূর্ত একদিকে; আবার রোমান্স, কমেডি, সম্পর্কের রসায়ন আরেক দিকে। অভিনয় অনবদ্য। গান জমিয়ে দিয়েছে।
ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় যেন আসল প্রণববাবু। অনসূয়াদেবী তাঁর এক অসাধারণ দিদি। আবির রোমান্স এবং অ্যাকশন, দুটোতেই একশোয় একশো। অ্যাকশন হিরো মানেই মাসল দেখাতে হবে, এসব ধারণা ভেঙে তছনছ করে স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত, মেধাসম্পদের ব্যবহারে ধারালো পুলিশ অফিসারকে এনে নতুন ঘরানা করে দিচ্ছেন আবির। মিমির ক্ষেত্রেও একই কথা বলব। দারুণ লাগল অঙ্কুশকে। ছদ্মবেশী ভিলেনের চরিত্রে যতরকম শেড, সবক’টিতে সফল অঙ্কুশ। কৌশানীকে যত দেখছি, অবাক হচ্ছি। অলরাউন্ডার অভিনেত্রী। কাঞ্চন মাপা কমেডিতে ঠিকঠাক। অনন্যা স্মার্ট পুলিশ অফিসারে মানানসই। এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ছায়ায় সীমা বিশ্বাস দারুণ। অন্যরাও গুছিয়ে করেছেন। ফোটোগ্রাফি, কোরিওগ্রাফি, আবহ, সবেতেই গভীর যত্নের ছাপ। এর সঙ্গে বাড়তি মাত্রা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট। একে আবির কেন্দ্রীয় পুলিশ, মিমি রাজ্য পুলিশ; তার সঙ্গে যোগ ভারত-বাংলাদেশ পুলিশের রেষারেষি; জিনিয়া গল্পের বিস্তারে জাদু দেখিয়েছেন। জঙ্গিরা কখন কোন অঙ্কে কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে মারতে চায়, এদের নাটকীয় প্লট পরিবর্তন কাহিনিকে আরও টানটান করেছে।
‘রক্তবীজ ২’ একটা কমপ্লিট ছবি, যা দর্শকের দৃষ্টি এবং মনঃসংযোগ সারাক্ষণ পর্দায় টেনে রাখার চৌম্বকীয় ক্ষমতা রাখবে। এর আগে ‘রক্তবীজ’, ‘বহুরূপী’ দিয়ে পুজোর মরশুম দখল করে ফেলেছিলেন শিবপ্রসাদরা, নায়ক হিসাবে আবিরও। এসব ছবির টিভি বা ওটিটি রাইটসও বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। ‘বহুরূপী’র বক্স কালেকশন তো রেকর্ড। যেখানে অনেক বড় বড় নামের ছবির রাইট এখনও বিক্রি হয়নি। বা হলেও রেটিং কম। সেই কারণে এবার উইনডোজের এই নতুন সিনেমা যাতে কম শো পায়, তার জন্য নানা প্রভাব খাটানো চলছে শুনেছি। কারণ সমান শো দিয়ে সবাই শুরু করলে ‘রক্তবীজে’র বিপুল জয় আরও উজ্জ্বল হবে। তাই যে বা যারা জানে তাদেরটা কম চলবে, তারা প্রথমেই শো বাড়িয়ে কিছু কালেকশন করে নিতে চাইছে। তাতে লং টার্ম লাভ হবে না। এখন কয়েকমাস ধরে চলবে ‘রক্তবীজ ২’। আমি এই ছবিটা দেখে উত্তেজিত, রোমাঞ্চিত, অভিভূত। একজন দর্শক হিসাবে বলতে পারি, যিনি দেখবেন, তিনি নিজে আবার দেখবেন, পরিচিত অন্যদের দেখতে বলবেন।
আর শেষ সাড়ে তিন মিনিট? বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা মুহূর্তগুলোর অন্যতম। এ নিয়ে লেখা উচিত না। দর্শক নিজে দেখে স্বাদটা পাবেন। ওই ঝটকার প্রতিক্রিয়ায় ফেটে যাবে হল, আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি।
