বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: ফরাসি শো 'লা মাঁতে' থেকে অনুপ্রাণিত, নাগেশ কুকুনুর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ 'মিসেস দেশপান্ডে' খানিকটা আশা জাগিয়েছিল। মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত এই ক্রাইম থ্রিলারের গল্প প্রথম থেকেই অন্য পথে হাঁটে। পুলিশ এবং সিরিয়াল কিলার এক ঘাটের জল খায়। যদিও তাদের রাস্তা যে আলাদা, পরে বোঝা যায়। প্রথম এপিসোড শুরু হয় এক অভিনেতার খুন দিয়ে। প্রথমেই বলে দেওয়া হয় খুনির প্যাটার্ন আছে এবং এমন খুন আগেও হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, এইভাবে গলায় সবুজ দড়ি পেঁচিয়ে খুন করার যে মাস্টারমাইন্ড সে এখনও জেলেই। এই আসল খুনিই হল 'মিসেস দেশপান্ডে' (Mrs. Deshpande) (মাধুরী দীক্ষিত)। মিসেস দেশপাণ্ডের সাহায্য নিয়ে পুলিশ এই ক্রাইমের তল পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছয় এই নিয়েই সিরিজ ।
এই সিরিজের যেটা সবচেয়ে বড় গন্ডগোল, গল্প কোন দিকে এগোচ্ছে, এরপর খুন হবে কিনা সবটাই মোটামুটি বোঝা যায়। সেটা ক্রাইম থ্রিলারের জন্য খুব একটা একটা ভালো জিনিস না। এই সিরিজের গল্প যতই প্যাঁচালো হোক না কেন তার পূর্ভাবাস টের পেয়ে যাওয়া, দুর্বল অভিনয়, এবং চিত্রনাট্য দুর্দান্ত সম্ভাবনাময় এই সিরিজকে খানিকটা পিছিয়ে দেয়। প্রথম খুনেই আগেই যেমন সংলাপ 'রোজ কৌন সা সিরিয়াল কিলার সে মিলনেওয়ালে হ্যায়।' এই হিন্ট ড্রপ করা মানেই এইবার তো সিরিয়াল কিলার আসবেই। চিত্রনাট্যে ফাঁকফোকরগুলো বেশ সহজেই ধরা পরে। কিছু ঘটনা ঘটানো হয় যা জোড়াতালি দেওয়া এবং অযৌক্তিক। সেটা ঘটছে যাতে পরের গল্পটা জুড়ে দেওয়া যায় খুব বেশি পরিশ্রম না করেই। যেমন ধরুন এপিসোড থ্রিয়ে মিসেস দেশপান্ডে যখন পুলিশের বেড়াজাল ভেঙ্গে পালায় আমরা ভাবি, না জানি কী এক সাংঘাতিক প্ল্যান করবে এবার। একেবারেই না। সে যায় তার পরিবারকে দেখতে, এবং কোনও সাবধানতা অবলম্বন না করেই। কেন? যাতে এরপরের বড় চমকটা সামনে আনা যায়। অথচ এই লুকোনো সত্যিটা সে নিজেই চায়নি কারোর সামনে আসুক। পুলিশ অফিসার তেজস এবং তাঁর সম্পর্ককে সামনে আনার জন্য এর চেয়ে বেটার প্লট ভাবতে পারেননি নির্মাতারা ।
ঘটনা যেভাবে এগোয় সেখানে খুনির পরিচিতি কোনও ভাবেই বুঝে উঠতে পারে না পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে খুনির চেহারা বোঝার চেষ্টায় হঠাৎ করে পুলিশের বড় সাহেব বলে বসেন, ‘মে বি দেয়ার ইজ আ হোমোসেক্সুয়ালিটি অ্যাঙ্গেল টু ইট, মে বি হি ইজ গে।' এতে করে দুটো জিনিস হয়। এক দর্শকের মাথায় আলটপকা একটা ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং সমকামিতা বিষয়টা নিয়ে স্টিরিওটাইপ করা যেটা বেশির ভাগ অসংবেদনশীল, মেনস্ট্রিম, পপুলার সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ করেই থাকে। অর্থাৎ ধরে নেওয়া হচ্ছে একজন গে অথবা ট্রান্স মানুষকে চিহ্নিত করার একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে যা সংখ্যাগুরু সিস্- হেট সমাজ ঠিক করে নিয়েছে। যদিও ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য মাধুরি দিক্ষিতের সংলাপে রাখা হয়, ‘এই খুনি ট্রান্সজেন্ডার বলে খুন করছে এমন নয়, অন্য কারণে মারছে।' আবারও ভুল। কারও যৌন পরিচয়ের সঙ্গে তার ক্রাইমকে নিয়ে তুল্য মূল্য বিচার করে জেনারালাইজেশন করা যায় না। এই প্রসঙ্গের উত্থাপন হবেই বা কেন! এসব ছাড়াও পুলিশ যে এত নিরুপায় এবং অকর্মণ্য সেটাও বারবার বোঝানো হয়। বাস্তবে ততটাও নয়। কোনও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নিরূপায় হয়ে এক খুনির খামখেয়ালিপনায় এইভাবে সায় দেয় না। যেখানে খুনি বলছে আমি খুন করব আর আপনারা সেটা লাইভ ভিডিওতে দেখবেন! মাধুরী দীক্ষিতের অভিনয় কিছু দৃশ্যে দারুণ লাগে, আবার কিছু সময় একঘেয়ে লাগে। সব মিলিয়ে মিসেস দেশপান্ডে হতাশ করে।
