আকাশ মিশ্র: প্রথমেই বলে রাখা দরকার 'সেক্টর ৩৬' দেখতে বসলে, অবশ্যই মাথায় রাখবেন, এই ছবি আপনাকে একাধারে বিরক্ত, অধৈর্য এবং মানসিক চাপ দেবে। এই ছবির প্রতিটি ফ্রেমই আপনার মস্তিষ্কে আঘাত হানবে। কখনও রোমাঞ্চে হাতের নখ খেয়ে ফেলবেন। কখনও আবার চোয়াল শক্ত করবেন রাগে। হ্যাঁ, হাড়হিম করা বাস্তব ঘটনা নিঠারি হত্যাকে প্রেক্ষাপট করেই তৈরি হয়েছে 'সেক্টর ৩৬' এর গল্প। ২০০৬ সালে এই বাস্তব ঘটনাকেই যেন চোখের সামনে ভয়াবহ ভাবে তুলে ধরলেন পরিচালক আদিত্য নিমবালকর।
এই ছবি প্রথম থেকে থমথমে। চিত্রনাট্য এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা কখনও ঢিলে হয়ে যায় না। বরং প্রতিটি ফ্রেম যেন একেকটা গল্পের দলিল। আর তার উপর সঠিক সংগত অভিনেতা বিক্রান্ত মাসে ও দীপক দোবরিওয়াল।
প্রথম দৃশ্য থেকেই 'সেক্টর ৩৬' বড্ড বেশি ডার্ক। যা কিনা প্রথমেই আভাস দিয়ে দেয়, এই সিনেমা একেবারেই সহজ নয়। বিশেষ করে, যেভাবে ক্যামেরা চলেছে পুরো সিনেমা জুড়ে, তা ছবিকে আরও বেশি ভয়ঙ্কর করে তোলে। চিত্রনাট্যের সঙ্গে একেবারে মিলে মিশে যায় চিত্রায়ণ।
'সেক্টর ৩৬' নিঠারি হত্যাকে প্রেক্ষাপট করে এক সিরিয়াল কিলারের গল্প বলে। যে একদিকে শিশুদেরকে তার লালসার শিকার বানায়, তো আরেক দিকে সে নরখাদকও। বিক্রান্ত মাসে এমনই এক চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়েছেন। যাকে দেখে আপনার রাগ হতে বাধ্য। ঘেন্নাও হবে। তবে অভিনেতা হিসেবে নিজের একশো শতাংশ দিয়েছেন বিক্রান্ত।
তবে 'সেক্টর ৩৬' ছবির মাস্টারস্ট্রোকই হল ছবির চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্যকার বোধায়ন রায়চৌধুরীই তাঁর লেখনির জোরে এই ছবিকে অন্যমাত্রা দিয়েছেন। বিশেষ করে এই ছবির ক্লাইম্যাক্স আপনাকে স্তব্ধ করে দেবে।
বাস্তব ঘটনাকে প্রেক্ষাপট করে ছবি তৈরি করা বরাবরই চ্য়ালেঞ্জিং। কেননা, এই ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই দর্শকরা ওয়াকিবহল। বিশেষ করে, বাস্তবে ঘটে যাওয়া কোনও ভয়াবহ ক্রাইমকে পর্দায় তুলে ধরার সময় তথ্য বিকৃতি হওয়ার সুযোগ থাকে। এই ছবির ক্ষেত্রে পরিচালক মূলত রিসার্চের উপর ভিত্তি করে এগিয়েছেন। গল্পকে তুলে ধরার থেকেও, পরিচালক বেশি জোর দিয়েছেন ছবির উপস্থাপনার উপর। আর তাই তো 'সেক্টর ৩৬', এক সাইকোলজিক্য়াল থ্রিলারে পরিণত হয়েছে। সবশেষে বলা ভাল, এই ছবি দেখতে বসলে, অনুরাগ কাশ্যপের ছবি তৈরি ভাষা আপনার মাথায় আসবেই। বিশেষ করে অনুরাগের 'আগলি' ছবি, মেঘনা গুলজারের 'তলোয়ার' ছবির থমথমে ভাবটা রয়েছে এই ছবিতে।