আকাশ মিশ্র: কারও জীবনের গল্পকে পর্দায় নিয়ে আসা বরাবরই চ্য়ালেঞ্জের। কেননা, বাস্তবকে সিনেমার আকারে উপস্থাপন করার সময় পরিচালক সিনেম্যাটিক করার তাগিদে গল্পে অনেক কিছু যুক্ত করেন আবার অনেক কিছু বাদও দেন। এই যুক্ত করা বা বাদ দেওয়ার পারদর্শীতাই কোনও বায়োপিককে সফল করে তোলে। পরিচালক তুষার হিরানান্দানির 'শ্রীকান্ত' ঠিক এমনই ছবি। যেখানে সিনেম্যাটিক হওয়ার কারসাজি কম, বরং সহজ সরলভাবে গল্পকে তুলে ধরা প্রচেষ্টাই বেশি। বলা ভালো, পরিচালক তুষার যেভাবে বাস্তবের 'হিরো' শ্রীকান্ত ভোলার জীবনের লড়াইকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তা অনুপ্রেরণা জোগায়। আর এখানেই হয়তো বাজিমাত করেছেন তুষার।
পরিচালক তুষার ছবির শুরুতে শ্রীকান্তের একটি সংলাপকে তুলে ধরেছেন। 'আমি দৌড়াতে পারি না, আমি কেবল লড়াই করতে পারি।' পরিচালক চাইলে, এই বক্তব্যকে ধরেই চরিত্রটিকে মহিমান্বিত করতে পারতেন, যেমনটি অন্য বায়োপিকগুলিতে হয়। কিন্তু তা করলেন না। বরং ছবির গল্পে মিশিয়ে দিলেন আবেগ ও বাস্তবতাকে সমান অনুপাতে।
[আরও পড়ুন: স্মৃতি হারিয়ে কলেজের ছাত্রী পর্ণা, ‘নিম ফুলের মধু’র ভিডিও দেখেই কটাক্ষ নিন্দুকদের]
ছবির শুরুর দৃশ্য দেখেই গায়ে কাঁটা অন্ধ্রপ্রদেশের মাছিলিপত্তনমে একটি ফাঁকা বাড়িতে একটি শিশুর জন্ম হয়েছে। তাঁর বাবা একজন কৃষক, তিনি চান যে ছেলে একজন ক্রিকেটার হোক। কিন্তু, তিনি জানতে পারেন যে শিশুটি অন্ধ। বাবা অন্ধ শিশুটিকে ভবিষ্যতের ঝামেলা থেকে বাঁচতে জীবন্ত কবর দিতে চায়। কিন্তু, পারে না। এখান থেকেই শিশুটির বেঁচে থাকার লড়াই শুরু। আর এই লড়াইটাকে পুরো ছবি জুড়ে তুলে ধরেছেন পরিচালক। যেখানে গল্পে এসেছে শ্রীকান্তেপ এমআইটি যাত্রা, হায়দরাবাদে ফিরে এসে দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এমন একটি কোম্পানির শুরু। প্রেমও রয়েছে, তবে তা জীবনে চলার অনুপ্রেরণা হিসেবে।
এমনিতেই শ্রীকান্তের জীবনের গল্প অনেকটাই এগিয়ে রাখে এই ছবিকে। তবে এই ছবির তুরুপের তাস হলেন রাজকুমার রাও। শ্রীকান্তের চরিত্রে এক কথায় তিনি অসাধারণ। এই চরিত্রটি রাজকুমার ছাড়া অন্য কেউ এত ভালো করতে পারত কিনা, তা সন্দেহ রয়েছে। এর পরেই রয়েছে জ্য়োতিকা সাদানা। তাঁর অভিনয় কিন্তু মুগ্ধ করবে। শারদ কেলকার রবির চরিত্রকে ভীষণই স্ট্রং। সবশেষে বলা ভালো, শ্রীকান্ত এমন এক ছবি, যা প্রতিটি ফ্রেমে আপনাকে সাহস জোগাবে। প্রতি ফ্রেমে লড়াই করার মন্ত্র শেখাবে এই ছবি।