সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ৫ জুলাই হইচইতে মুক্তি পেয়েছে 'বিজয়া'। বিচারের আশায় এক মায়ের অদম্য লড়াইয়ের গল্প বলে এই সিরিজ। বাস্তব ঘটনার আদলে কেমন হল? পড়ুন রিভিউ।
স্কুলের গণ্ডি পেরনো সাদা চোখে কত রঙিন স্বপ্নই না থাকে! বড় কলেজ। উজ্জ্বল কেরিয়ার। হয়তো বা কেউ সন্তানের লক্ষ্যপূরণের জন্য জীবনের সমস্ত পুঁজি ঢেলে দেন। কিন্তু সেই পথচলাটা সবসময়ে মোটেই গোলাপ বিছানো হয় না। আবার অচিরেই হয়তো থেমে যেতে পারে। ঠিক যেমনটা হয়েছে 'বিজয়া' সিরিজের নীলাঞ্জন বসুর ক্ষেত্রেও।
ব়্যাগিং একপ্রকারের সামাজিক বিষফোঁড়া! ঠিক কোন মানসিকতা থেকে এই ঘৃণ্য কাজ হয়? কেন পড়ুয়ারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ গড়তে এসে লালসার শিকার হন? কাদের মদতেই বা এহেন অপরাধীরা ঢাকা পড়ে যায় সমাজের চোখ থেকে? যাবতীয় জটিল ধাঁধার উত্তরকে একসুতোয় গেঁথে জবাব নিয়ে এল সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত 'বিজয়া'। সিরিজে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর নেপথ্যে ক্ষমতার আস্ফালন দেখিয়ে সিস্টেমকে বিঁধেছেন পরিচালক, তেমনই এক সন্তানহারা মায়ের লড়াই কতদূর গড়াতে পারে? এবং তার মধ্যে কতটা শক্তি, সেটাও দেখালেন সায়ন্তন। বিজয়ার ভূমিকায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। নিরাপরাধ সন্তান যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, তখন ন্যায়বিচারের আশায় মায়ের লড়াই চলছে থানা-পুলিশ, কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সিরিজে এই ক্রাইসিস মোমেন্ট অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন স্বস্তিকা। তিনি নিজেও একজন মা, সর্বপরি দক্ষ অভিনেত্রী। অতঃপর তিনি যে এহেন গল্পে মায়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে সিদ্ধহস্ত, তার প্রমাণ এর আগে নিখোঁজ সিরিজেও পাওয়া গিয়েছিল।
২০২৩ সালে যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর স্মৃতি আজও টাটকা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের মনে। পড়তে গিয়ে বয়েজ হোস্টেলে ভয়ানক ব়্যাগিংয়ের শিকার হয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনাচিত্রই বিজয়া সিরিজের গল্পের কাঠামো। সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবার। একমাত্র ছেলে নীলাঞ্জন বসুকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর বিজয়া। বড় কলেজে পড়াশোনা করে মা-বাবার নাম উজ্জ্বল করবে ছেলে। একাহাতেই সংসার সামলায়। স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয় নীল। নিজের সমস্ত সঞ্চয় জড়ো করে মন শক্ত করে তার জীবনের একমাত্র চলার সঙ্গী, নয়নের মণিকে শহরের খ্যাতনামা কলেজে পড়তে পাঠায় বিজয়া। দিন কয়েক যেতে আচমকাই অঘটন। একদিকে বাড়ির উপর স্বার্থান্বেষী মুনাফালোভী কনট্রাক্টরের নজর। অন্যদিকে, ছেলেকে বাইরে পড়তে পাঠানোর দুঃশ্চিন্তা। এমতাবস্থাতেই নতুন কলেজে গিয়ে ব়্যাগিংয়ের শিকার হয় নীল। ভয়ে, অপমানে লজ্জায় সে কী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল? শুরু হয় তদন্ত। রায় হয় বিপক্ষে। বিজয়া জানেন, তাঁর ছেলে আর যাই হোক আত্মহত্যা করবে না। তাহলে কার ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হল নীল? উত্তর খুঁজতেই শুরু হয় এক মায়ের লড়াই। "আপনি যত বড়ই অপরাধী হন না কেন আর আপনার যত ক্ষমতাই থাকুক না কেন, একজন মায়ের ক্ষমতার কাছে তা কিছুই নয়"- সিরিজে স্বস্তিকার মুখে এই সংলাপ অনেক মায়েদের বুকেই বিঁধবে।
'বিজয়া' সিরিজে এক ক্ষমতান্বেষী ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়। গল্প অনুযায়ী, তাঁর ছেলের হাতে ব়্যাগিংয়ের শিকার হয়েই নীলের মৃত্যু হয়। আর সেই অপরাধ ঢাকতেই নানা কৌশল প্রয়োগ করে সে। এমনকী ক্ষমতার আস্ফালন দেখিয়ে বলপ্রয়োগ করতে পর্যন্ত পিছপা হয় না সে। সিরিজের শেষও হয় 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন' বার্তা দিয়ে। ঘটনা-কাহিনীতে নতুনত্ব না থাকলেও ট্রিটমেন্টের দিক থেকে কিন্তু 'বিজয়া' সিরিজ বেশ প্রশংসনীয়। ৭ পর্বের সিরিজে কোনও বিষয়ই অতিনাটকীয় মনে হয়নি। অবশ্য থ্রিলার সাসপেন্স বজায় রেখে গল্প বলার ধরণে সায়ন্তন ঘোষালের মতো পোক্ত পরিচালকের থেকে এটাই কাম্য।