নির্মল ধর: ১৯৮৭ সালে মনি রত্নম 'নায়কন' নামে একটি ছবি করেছিলেন নায়ক কমল হাসানকে নিয়ে। সেখানে কমলের চরিত্র ছিল একজন দাগি মস্তনের। এত জীবন্ত অভিনয় করেছিলেন কমল হাসান যে সেরা অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার উঠেছিল তাঁরই হাতে। এবার দীর্ঘ আটত্রিশ বছর পর আবার মনিরত্নম-কমল হাসান জুটি ফিরল। সেটাও আবার সেই একই গল্পের সিক্যুয়েল নিয়ে।
প্রধান চরিত্রে সেই ভয়ানক মস্তান শক্তিভেল এবং তার দলবলের কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়েছে গল্প। চিত্রনাট্য লেখায় এবার হাত লাগিয়েছেন মনির সঙ্গে কমল নিজেও। পৌনে তিন ঘণ্টার ছবিতে অর্ধেকের বেশি সময় দুরন্ত অ্যাকশন দৃশ্য নিয়ে জমজমাট সিনেমা। শক্তিভেল মনে করে তাঁর দলের এক শুটআউটে একজন নিরীহ কাগজফেরিওয়ালাকে সে খুন করেছে। শোকসন্তপ্ত শক্তি সেই ব্যক্তির কিশোর সন্তান অমরকে নিজের ছেলের মতো বড় করে। একটা সময় শক্তির বিরোধী পক্ষের প্ররোচনায় অমর পিতৃসম শক্তির সাম্রাজ্যের দখল নিতে চায়। সুতারাং এর পর থেকে শক্তিকে সরিয়ে ফেলার নানা চক্রান্ত শুরু হয়। এবং প্রতিবারই শক্তি তাঁর বিশাল শরীর ও মনের জোরে প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। এমনকি নেপালের কৈলাশ পাহাড়ে তীর্থ করতে গিয়েও শত্রুর চক্রান্ত থেকে রেহাই পায় না কমল অভিনীত 'ডন' শক্তি। উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে বরফের গ্লেসিয়ারে ফেলে দিলেও সেখান থেকে সে বেঁচে ফিরে আসে। ইতিমধ্যে, তাঁর স্ত্রী জীবা মানসিক ভারসাম্য হারায়। অমর ও তার গোষ্ঠী হঠাৎই জানতে পারে শক্তিভেলের প্রত্যাবর্তনের কথা। ব্যস, এর পর থেকে গল্পের পরবর্তী চল্লিশ মিনিট একেবারে ধুন্ধুমার অ্যাকশনে ভরা।
গাড়ি চেজিংয়ের দৃশ্য থেকে আস্ত একটা বাংলো পোড়ানো, অমর ও শক্তির মধ্যে হাতপায়ের প্যাঁচ পয়জার, ছুরি চালানো, গুলির লড়াইয়ের যেন এক উৎসব চলল। ক্লাইম্যাক্সে কী ঘটে? সেটা এই পরিসরে না ভাঙাই বাঞ্ছনীয়। শেষটা হলে গিয়ে দেখাটাই বুদ্ধিমানের। কারণ যে মনিরত্নমকে আমরা 'মৌনরাগম','ইরুভার', 'থিরুদা থিরুদা', 'বম্বে', 'রোজা', 'যুবা'য় পেয়েছিলাম, তিনি তাঁরই নিজের ছবি 'নায়কন' এর ধারে কাছেও পৌঁছতে পারলেন না! এটা মনিরত্নমে কাছ থেকে আশা করা যায়নি। তিনি শুধু ঘটনা আর অ্যাকশন দৃশ্যের কোরিওগ্রাফিতে যেন মজে রয়েছেন। বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে বিবাদ ঝগড়ার ব্যাপারটাও বড্ড আলগা, গভীরে যাওয়ার কোনও চেষ্টাই নজরে পড়ে না। এমনকি এতো মানুষের ভয়ঙ্কর মৃত্যুমিছিলও কেমন যেন 'রিচুয়াল' হয়ে দাঁড়ায় এই ছবিতে। স্ত্রী জীবার মানসিক ভারসাম্যহীনতা ছাড়া আবেগ অনুভূতির কোনও স্থান নেই 'ঠাগ লাইফ'-এর চিত্রনাট্যে। ফরিদাবাদ রেল স্টেশনে দীর্ঘ মারপিটের দৃশ্য অবশ্যই কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম। শেষপাতে উল্লেখ্য, এ আর রহমানের সুরেও তেমন ঝাঁজ পেলাম না এই সিনেমায়। একটিও গান নেই, যেটা হল থেকে বেরোনোর পরও মনে থাকে! একমাত্র মনে রয়ে যায় কমল হাসানের শরীর-মন প্রাণঢালা অভিনয়। তিনিই এই ছবির একমাত্র ত্রাতা। অ্যাকশন দৃশ্যে তো বটেই, ছোটোখাট রোমান্টিক মুহূর্তে কিংবা আবেগ, অনুভূতি প্রকাশে 'কামাল' করলেম কমল হাসান। একমাত্র ওঁর জন্যই আরেকবার 'ঠাগ লাইফ' দেখা যায়।