shono
Advertisement
AARI Movie Review

বাংলায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের কামব্যাক ছবি 'আড়ি' কেমন হল? পড়ুন রিভিউ

মৌসুমী ম্যাজিকে মন ছুঁতে পারলেন কি পরিচালক?
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 06:40 PM Apr 26, 2025Updated: 06:40 PM Apr 26, 2025

নির্মল ধর: বাংলার মেয়ে এবং মুম্বইতেও স্বনামধন্য অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় যখন দীর্ঘকাল বাদে বাংলা সিনেমা করতে আগ্রহী হলেন, স্বাভাবিকভাবেই দর্শক হিসেবে আগ্রহ একটু বাড়তি ছিল বইকী! প্রিমিয়ারে দেখতে গেলাম 'আড়ি'। ট্রেলারে মা-ছেলের দুষ্টু-মিষ্টি রসায়ন দেখিয়ে নজর কেড়েছিল 'আড়ি'। এবার সিনেমায় সম্পর্কের জটিল ধাঁধা, বার্ধক্যের ভারে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত এক মাকে নিয়ে ছেলের জীবনযুদ্ধের কী পরিণতি হল? এবার আসা যাক, সেই গল্প নিয়ে।

Advertisement

সমুদ্রের পাড়ে এক মেছো বন্দর চন্দ্রপুর গল্পের প্রেক্ষাপট। সেখানে থাকেন অ্যালঝাইমার-ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বৃদ্ধা জয়া (মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়) আর তাঁর একমাত্র ছেলে জয় (যশ দাশগুপ্ত)। যিনি স্বামীকে হারিয়েছেন বহু আগেই। আরেক চরিত্রে নুসরত জাহান। শহর থেকে ক্যামেরা হাতে সেখানে যাওয়া এক তরুণী সাংবাদিক অদিতির ভূমিকায় তিনি। কাজ করেন এক সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিসে। আর আছে মাছের ব্যবসা এবং স্থানীয় রাজনীতির জন্য উপস্থিত দুই দলের কমেডিয়ান মার্কা নেতা ত্রিলোক (পার্থ ভৌমিক) আর সামন্ত (অভিজিৎ গুহ)। সুতরাং গল্পজুড়ে ঘটনার ঘনঘটা। দেখা গেল, মা জয়াকে ঘিরেই আবর্তিত জয়ের জীবন। একাই অসুস্থ মাকে আগলে রাখে। নিজে হাতে সংসারের সবটা সামাল দেয়। আসলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর মৌসুমীর চরিত্রটি সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। তাই তো কখনও ছেলে তার কাছে হয়ে ওঠে স্বামী আবার কখনও বা ছোট্ট আদরের সোনা। আবার কখনও বাড়ির ঠিকানা মনে করতে পারে না জয়া। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজার চলতি ব্যবসায়িক চর্বিত-চর্বণ! চর্বণ মশলার অভাব রাখেননি গল্পলেখক ও চিত্রনাট্যকার অমিতাভ ভট্টাচার্য।

স্মৃতিভ্রংশ মা জয়ার যত্রতত্র হারিয়ে যাওয়া, ডিমেনশিয়ার কারণে তাঁর ভুল বকা, সুন্দরী নুসরতকে ছেলে যশের জন্য বধূ করে ফেলার আলাপ-প্রলাপের সঙ্গে কমেডি ও রক্তারক্তি রাজনীতির অ্যাকশন ও ডোজ অনুযায়ী মিশেল ঘটিয়ে একটি 'লোভনীয় প্যাকেজ' দর্শককে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী। চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মৌসুমী ম্যাজিকে দর্শকদের মন ছুঁতে পারলেন কি? কিংবা নিষ্প্রাণ চিত্রনাট্যে মৌসুমী তাঁর অভিনয় দিয়ে কতটা প্রাণ সঞ্চার করতে পারলেন? সেই বিচার নাহয় টিকিট কেটে প্রকৃত বিচারকের আসনে বসে দর্শকই স্থির করবেন। তবে আমার মতে, বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ মৌসুমী নিশ্চয়ই চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। সিনেমাটা দেখতে বসে ব্যক্তিগতভাবে মনে হল, প্রবীণ অভিনেত্রীর চরিত্রের সাজসজ্জায় একটা ঘোলাটে চশমা যোগ করলে মন্দ হত না! চিত্রনাট্য নিয়ে আরেকটু অভিযোগ রয়েছে। যশ-নুসরতের রোমান্টিক জুটির আরও জায়গা পাওয়া উচিত ছিল।

আসলে চিত্রনাট্যের গতিবিধি ঠাহর করা দায়। কখন, কোথায় যাচ্ছে, কেনই বা যাচ্ছে? তার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘটনা বাস্তব হলেও সেটিকে সিনেমার জন্য সাজানোর কোনও কারিকুরি নেই! যে কারনে দর্শক বিভ্রান্ত হতে পারেন। চিত্রনাট্যকারের উচিত ছিল সেদিকটায় নজর দেওয়া। একাধিক প্লট সাজিয়ে চিত্রনাট্য আরও সুগ্রথিত হওয়া উচিত ছিল। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সম্পাদনা ও পরিচালনার কাজেও চিত্রনাট্যের ত্রুটি শুধরে নেওয়ার কোনও প্রয়াস দেখলাম না। 'ফটোগ্রাফড নাটক' মনে হল। প্রযোজক হিসেবে যশ-নুসরত তাঁর প্রযোজনার কাজে কোনও ত্রুটি রাখেননি, কিন্তু চিত্রনাট্যের দুর্বলতা তো আর আড়াল করা যায় না। রাজনীতির কুচুটেপনা ও কমেডি বাদ দিয়ে মন কাড়ল তিন রথী লিংকন রায় চৌধুরী, কেশব দে এবং অনিন্দ্যর গান। অভিনয়ে অবশ্য নুসরত ও যশ চিত্রনাট্যের বাইরে যাবার চেষ্টাও করেননি। ভালোই করেছেন। তবে 'আড়ি' থেকে প্রাপ্তি বলতে পার্থ ভৌমিক, অভিজিৎ গুহ, দেবরাজ ভট্টাচার্য এবং উন্মেষের পারফরম্যান্স। নিজেদের অংশগুলিতে জমিয়ে দিয়েছেন একেবারে। তবে 'বেচারি' কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি একেবারে নৈবেদ্যর সন্দেশের মতো। তবে যশ-নুসরতের সঙ্গে মৌসুমীর রসায়ন কতটা মাখোমাখো হল, সেটা পরখ করার জন্যই দর্শক অন্তত একবার হলমুখী হতেই পারেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজার চলতি ব্যবসায়িক চর্বিত-চর্বণ! চর্বণ মশলার অভাব রাখেননি গল্পলেখক ও চিত্রনাট্যকার অমিতাভ ভট্টাচার্য।
  • আসলে চিত্রনাট্যের গতিবিধি ঠাহর করা দায়।
  • যশ-নুসরতের রোমান্টিক জুটির আরও জায়গা পাওয়া উচিত ছিল।
Advertisement