shono
Advertisement

Breaking News

সাপের কামড়? ‘রুল অফ ১০০’ জানলেই বাঁচা সম্ভব

জনমানসে ভ্রান্ত ধারণার ফলেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে৷ The post সাপের কামড়? ‘রুল অফ ১০০’ জানলেই বাঁচা সম্ভব appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:57 PM Sep 03, 2016Updated: 04:36 PM Jun 12, 2018

রাতে বিছানায় উঠে আসে বিষধর কালাচ৷ কেন ওঠে? গোখরো, কেউটের কামড়ে মৃত্যু হচ্ছে আকছার৷ আর যেন কারও প্রাণ না যায়৷ তবে সাপ মারবেন না৷ ওরা শত্রূ নয়৷ জেনে রাখুন বিষধরদের মতিগতি৷ সাপ কামড়ালে ঝাড়ফুঁক নয়, ‘রুল অফ ১০০’ জানলেই বাঁচা সম্ভব৷ কীভাবে? খোঁজ নিলেন গৌতম ব্রহ্ম

Advertisement

বর্ষাকাল মানেই সাপের উৎপাত৷ সর্পদংশনের ঘটনাও এই সময়ই বেশি হয়৷ পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রতিবছর সাপের কামড়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷ বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা লক্ষাধিক৷ অথচ অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের দেশে থেকে অনেক বেশি বিষধর সাপ থাকলেও মৃত্যু হয় পাঁচবছরে সাকুল্যে দুই থেকে তিন জনের৷ আসলে আমাদের দেশে এখনও বহু মানুষ সর্পদংশনের পর ডাক্তারদের তুলনায় ওঝা, ঝাড়ফুঁকের উপর বেশি ভরসা রাখে৷ ফলে রোগী গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কয়েক ঘণ্টা (গোল্ডেন আওয়ার) বিনা চিকিৎসায় নষ্ট হয়ে যায়৷ সমীক্ষা অনুযায়ী সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে আসেন৷ জনমানসে ভ্রান্ত ধারণার ফলেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে৷

ঘাতক

ভারতে প্রায় আড়াইশো প্রজাতির সাপ আছে, তার মধ্যে ৫২টি প্রজাতি বিষধর৷ এর মধ্যে ৪০টিরও বেশি প্রজাতির সাপ সামুদ্রিক৷ পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ছটি বিষধর প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে চারটি সাপের কামড়েই বেশি মৃত্যু হয়৷

গোখরো

ফণাধর ও নার্ভবিষযুক্ত৷ এদের ফণার পিছনে ইংরাজি ইউ অক্ষরের মতো একটি চিহ্ন থাকে৷ যাকে খড়ম চিহ্নও বলা হয়৷ এদের কামড়ে ক্ষতস্থানে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং ক্রমাগত ফুলতে থাকে৷ এদের স্থানীয় নাম খরিস৷ এক ছোবলে ১৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বিষ ঢালতে পারে৷

কেউটে

ফণাধর ও নার্ভবিষযুক্ত৷ এদের ফণার পিছনে থাকে পদ্মচিহ্ন৷ এদের স্থানীয় নাম আলকেউটে, কালকেউটে, শামুকভাঙা৷ বিষের মারণডোজ ১৫ মিলিগ্রাম৷

চন্দ্রবোড়া

এই সাপের বিষ রক্তকণিকা ধ্বংস করে৷ এটি বাংলার একমাত্র হিমোটক্সিক সাপ৷ এই সাপ সবথেকে বেশি প্রাণ কাড়ছে বাংলায়৷ সাপটি মোটা চেহারায়৷ বাদামি বা কাঠ রঙের৷ ফণাহীন সাপ৷ গায়ে চন্দন হলুদ চাকা চাকা দাগ৷ এরা কামড়ালে রোগীর রক্ততঞ্চনের গন্ডগোল হয়৷ চিকিৎসায় দেরি হলে রোগীর কিডনি নষ্ট হতে থাকে৷ মূত্রে রক্ত এসে যায়৷

কালাচ

এটি ভয়ংকর বিষধর৷ রহস্যময় সাপ৷ ফণাহীন মাঝারি চেহারার এই সাপটির গায়ের রং কালো, তার উপর সরু সরু সাদা ব্যান্ড৷ দিনের বেলা এদের প্রায় দেখাই যায় না৷ রাতে এরা খোলা বিছানায় উঠে আসে৷ কেন ওঠে তা আজও অজানা৷

এছাড়া আছে মারাত্মক বিষধর শাঁখামুটি সাপ৷ চেহারায় বেশ বড়৷ গায়ের রং উজ্জ্বল হলুদ আর কালোর উপর ব্যান্ড৷ এরা খুবই শান্ত প্রকৃতির৷ সাধারণত মানুষকে কামড়ায় না৷ গেছো বোড়ার মতো মৃদু বিষযুক্ত সাপ সুন্দরবনের বাদাবনে দেখা যায়৷ তবে এদের কামড়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই৷

বিষহীন সাপ

ঘরচিতি, কালনাগিনী, দাঁড়াশ, লাউডগা, তুতুর, লালবাড়ি বোড়া, বেত আছড়া, অজগর, জলঢোঁড়া, মেটেলি, জলমেটেলি৷

সামুদ্রিক সাপ

চ্যাপ্টা লেজের সামুদ্রিক সাপ ভীষণ বিষধর৷ এই ধরনের সাপ কামড়ালে প্রাণে বাঁচানো মুশকিল৷ এএসভি ইঞ্জেকশন এই সাপের কামড়ে কাজ করে না৷

প্রাথমিক চিকিৎসা

‘RIGHT’ ফর্মুলা মাথায় রাখতে হবে৷ R(Reassurance)–প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে৷ কারণ রোগী খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন৷ আতঙ্ক মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷ রোগীকে বোঝান সাপের কামড়ে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিত্সার ফলে বেঁচে উঠেছে৷ আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন৷

I(Immobilization)–যত কম নাড়াচাড়া হবে, তত কম হারে বিষ সারা শরীরে ছড়াবে৷ স্কেল বা বাঁশের টুকরো সহ হাতে বা পায়ে (যে অংশে কামড়াবে) কাপড় দিয়ে হাল্কা করে বেঁধে দিন৷ হাত বা পা যাতে তিনি ভাঁজ করতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা৷

GH(Go to Hospital)–ফোন করে জেনে নিন আপনার নিকটতম হাসপাতালে এএসভি, নিওস্টিগনিন, অ্যাট্রোপিন এবং অ্যাড্রিনালিন আছে কি না৷ মাথায় রাখবেন, সাপের কামড়ের সম্পূর্ণ চিকিৎসা একটি ব্লক প্রাইমারি হেল্থ সেণ্টারেই সম্ভব৷

T(Tell Doctor For Treatment)–হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে সাপের কামড়ের চিকিৎসা করতে বলুন৷ রোগীর কথা জড়িয়ে যাওয়া, নাকি সুরে কথা বলা, চোখের পাতা পড়ে আসা এগুলি লক্ষ্য করতে চিকিৎসককে জানান৷

রুল অফ ১০০

সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলিলিটার এএসভি শরীরে প্রবেশ করালে রোগী বেঁচে যাবে৷

খেয়াল রাখুন, ডাক্তারকে বলুন

পথে আসার সময় কামড়ের জায়গায় ফোলা কতটা  বৃ‌দ্ধি পেয়েছে৷ ঠিক কত সময় আগে রোগী বলছেন যে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে৷ কতক্ষণ পর্যন্ত রোগী কথা বলতে পেরেছেন৷

কী করবেন

  • শান্ত থাকবেন
  • কাছাকাছির মানুষজনকে ডাকবেন৷
  • হাতে ঘড়ি বা চুড়ি, বালা থাকলে খুলতে হবে৷
  • ক্ষতস্থান যত সম্ভব স্থির রাখতে হবে৷
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে৷

কী করবেন না

  • কোনওরকম বাঁধন দেবেন না৷
  • কামড়ের জায়গায় কোনও কেমিক্যাল লাগাবেন না৷
  • কামড়ের স্থানে ঠান্ডা, গরম, বরফ জল দেবেন না৷
  • কেটে চিরে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না৷
  • মনে রাখবেন, সাপ যখন কামড়ায় তার বিষ দাঁতের মাধ্যমে ইঞ্জেকশনের মতো শরীরের ভিতরে চলে যায়৷ বিষ পাম্প বলে একরকম অবৈজ্ঞানিক বস্তু প্রয়োগ করে ভোজবাজি দেখানো হচ্ছে৷ এগুলি সব অর্থহীন৷ উল্টে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের পর ক্ষতস্থান চিরলে মারাত্মক রক্তপাত হতে পারে৷
  • রোগী নিজে দৌড়ে বা সাইকেল চালিয়ে আসবেন না৷
  • সাপ ধরে হাসপাতালে আনার দরকার নেই৷

সাপ ঠেকাবেন কীভাবে?

  • বাড়ির চারপাশ পরিচছন্ন রাখুন৷ কার্বলিক অ্যাসিড শরীরে লাগলে ক্ষতি হয় তাই ব্যবহার না করাই ভাল৷ চুনের সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে ছড়িয়ে দিন৷ এর ঝাঁঝালো গন্ধে সাপ আসে না৷
  •   রাতে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙিয়ে শোবেন৷ দরজা-জানলার নিচে ফাঁকা জায়গা কাপড় গুঁজে ভরাট করে রাখতে পারেন৷
  • অন্ধকারে হাঁটাচলা করবেন না৷ হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তা ঠুকে চলুন৷ হাততালি দিয়ে লাভ নেই, কারণ সাপের কান নেই৷
  • জুতো পরার আগে সেটা ঝেড়ে নিন৷ মাটির বাড়িতে ইঁদুরের গর্ত থাকলে তা বুজিয়ে ফেলুন৷

তথ্যসাহায্য- ডা. কৃষ্ণাংশু রায়, অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ও সৌম্য সেনগুপ্ত, স্কুল শিক্ষক৷

এই রোগ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আরও জানতে ক্লিক করুন epaper.sangbadpratidin.in

 

The post সাপের কামড়? ‘রুল অফ ১০০’ জানলেই বাঁচা সম্ভব appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement