রোজই মাছ-মাংস-ডিম খান? ভাবছেন প্রোটিনের জোগান ঠিকই রয়েছে শরীরে। ভুল ধারণা। পাতে ভিন্ন ধরনের প্রোটিনের সংযোজন দরকার। কেন? কীভাবে মেটাবেন এই চাহিদা? পরামর্শ দিলেন ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
ডায়েটে সর্বদা রাখা উচিত কমপ্লিট প্রোটিন। সাধারণত, প্রাণীজ প্রোটিনকে কমপ্লিট প্রোটিন বলা হয় কারণ এতে সবকটি এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড (ইএএ) থাকে। কিন্তু তাই বলে কি প্রাণীজ প্রোটিন যত ইচ্ছে খাওয়া যায়? না, কারণ উপকারিতার সাথে সাথে এই ধরনের প্রোটিনের আধিক্যের ক্ষতিকর কিছু দিকও আছে।
জিরো ফাইবার: আমরা অনেকেই মাছ বা ডিম প্রতিদিন খাচ্ছি কিন্তু ভুলতে বসেছি ফাইবার। যদিও একটা হেলদি ডায়েটে ফাইবার হওয়া উচিত দৈনিক প্রায় ৩৮ গ্রাম। দেখা যায়, যারা সপ্তাহে সাতদিনই প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণ করে তাদের দৈনিক ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ সর্বাধিক ১০-১৩ গ্রাম।
IGF-1: অতিরিক্ত পরিমাণে ইএএ গ্রহণ ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর নামক হরমোনের ক্ষরণও বাড়িয়ে দেয়। এই প্রকার হরমোন সাধারণ হেলদি কোষের পাশাপাশি ক্যানসার কোষের বিভাজন বাড়িয়ে দেয়। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণ প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণ ক্যানসারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
TMAO প্রোডাকশন: ট্রাই মিথাইল N অক্সাইড ধমনীর গাত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ইনফ্ল্যামেশন বাড়িয়ে দেয় এবং ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে শুরু করে। এই TMAO-র প্রোডাকশনও কিন্তু অধিক পরিমাণে প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণের সাথে বাড়তে থাকে।
ফসফরাস: প্রাণীজ প্রোটিনে সর্বদাই ফসফরাস বেশি থাকে। রক্তে ফসফরাসের মাত্রা বেশি থাকলে তা ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর ২৩-এর প্রোডাকশন বেশি হয়। এই যৌগ হার্টের পেশির কার্যক্ষমতা কমায় এবং হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
হিম আয়রন: প্রাণীজ প্রোটিন হিম আয়রন সমৃদ্ধ। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এর আধিক্য হলে বিভিন্ন ধরনের GI ক্যানসারের প্রবণতা বাড়তে থাকে।
সালফার ও বোন হেলথ: প্রাণীজ প্রোটিনে থাকে প্রচুর পরিমাণে সালফার। কার্টিলেজে সালফারের পরিমাণ বেশি হলে তার নেচার অ্যাসিডিক হয়ে যায় এবং এই অ্যাসিডিক অবস্থা প্রশমনের জন্য ক্যালশিয়াম হাড় থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে হাড়ের ক্ষয় হতে শুরু করে।
কোলেস্টেরল: একসময় বিজ্ঞানীরা বলতেন ডায়েটরি কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য দায়ী নয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, কিছুটা হলেও এই কোলেস্টেরল দায়ী। প্রাণীজ প্রোটিনে কোলেস্টেরলের সাথে সাথে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রাও বেশি থাকে। যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কার্ডিয়াক সমস্যার জন্য দায়ী।
[আরও পড়ুন: বিয়ের আগে উদ্দাম পার্টি সোনাক্ষী-জাহিরের! শেয়ার করলেন একাধিক ছবি]
শাকাহারী হলে লাভ-ক্ষতি
আজকাল বহু মানুষ যে শাকাহারী হতে চাইছেন তার কারণ কিন্তু একাধিক।
হজমক্ষমতা বৃদ্ধি: যে কোনও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে রয়েছে প্রচুর সলিবল ও ইনসলিবল ফাইবার যেমন লেনটিল, সয়াবিন, বিভিন্ন
সিডস ইত্যাদি। এগুলি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি গাট জাতীয় সমস্যা কমে।
মেটাবলিজম বৃদ্ধি: এই ধরনের প্রোটিনে প্রচুর ফাইবার থাকার জন্য খুব ধীরে ধীরে পরিপাক হয়। ফলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকে, মেটাবলিজম বাড়ে।
হার্ট হেলথ: উদ্ভিজ্জ স্টেরল সর্বদাই হার্ট হেলদি। এছাড়াও এতে উপস্থিত পুফা ও মুফা (PUFA, MUFA) হার্টের জন্য উপকারী
ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস: যে কোনও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলসে ভরপুর। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ক্যালোরি কম: প্রাণীজ প্রোটিনের তুলনায় উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে ক্যালোরি বেশ কম থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে ও ডায়াবেটিসে বিশেষ সহায়ক।
তবে হ্যাঁ, প্রাণীজ প্রোটিন হোক বা উদ্ভিজ প্রোটিন - কোনওটিই বেশি খাওয়া ঠিক নয়। রোজ অতিরিক্ত উদ্ভিজ প্রোটিন গ্রহণে দেহে বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়। তবে এখন ব্যালান্স ডায়েটের সংজ্ঞা অনেক বদলেছে। উদ্ভিজ প্রোটিন বলতে শুধু ডাল বা সয়াবিন নয়, এই তালিকায় রয়েছে চিয়া সিড, সানফ্লাওয়ার সিড-সহ বহু উপকারি বীজ, উপকারি বাদাম যেমন আমন্ড, আখরোট ইত্যাদি। রয়েছে কিনওয়ার মতো খাবারও যা কি না আমরা ভাতের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারি। এটি ফাইবার ও প্রোটিনে পরিপূর্ণ। তাই কোনও একপ্রকার প্রোটিন নয়, সপ্তাহে সাতদিন বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন মিলেমিশে ডায়েটে রাখলে প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হয় আবার আধিক্যের কোনও সম্ভাবনাও থাকে না।