বারবার প্রস্রাব গিয়েও ক্লিয়ার হয় না। সব সময় অস্বস্তি! কেন হয় এই সমস্যা? চিকিৎসার হদিশ দিলেন সল্টলেক আইএলএস হাসপাতালের ইউরোলজিস্ট গৌতম পিপারা। লিখলেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
ঘনঘন প্রস্রাব পাচ্ছে কিন্তু বাথরুমে যাওয়ার পর কিছুতেই ক্লিয়ার হচ্ছে না। প্রস্রাব করার পর মনে হচ্ছে আরও একটু হবে হয়তো। কেউ কেউ বাথরুমে বসে অপেক্ষাও করছেন তবুও হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব যেন জমা থেকে যাচ্ছে। এ এক অদ্ভুত বিড়াম্বনা! স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়। বাড়ি থেকে বেরতে ভয় লাগে। অফিসে বা বাইরে বেড়াতে যেতে লজ্জা লাগে। কোনও না কোনও সময় কমবেশি এই সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে বয়স বাড়লে পুরুষ-মহিলা উভয়ের এই সমস্যা বাড়ে।
কোন সমস্যায় ক্লিয়ারে বাধা?
পুরুষের প্রস্টেটে সমস্যা থাকলে বা প্রস্টেটের আকার বড় হয়ে গেলে প্রস্রাব ক্লিয়ার হতে অসুবিধা হয়। এছাড়া স্ট্রিকচার ইউরেথ্রা (প্রস্রাবনালি সরু বা ছোট হয়ে গেলে), মহিলাদের মূত্রাশয়ের মুখ ছোট গেলেও একই সমস্যা হয়।
ডেকে আনে অসুখ
ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে যেতে পারে। দুটো কিডনি দ্রুত ড্যামেজ হতে পারে। তখন প্রয়োজনে ডায়ালিসিসও করতে হতে পারে। ব্লাডার বা মূত্রনালিতে গঠনগত ত্রুটি থাকলে বা যদি কোনও কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে তখনই বাড়ে ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভাবনা। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বছরে অন্তত একবার আক্রান্ত হন এই ব্লাডার ইনফেকশনে। আবার অনেকের সমস্যা লেগেই থাকে। তবে এই সমস্যা হলে প্রথম থেকেই সতর্ক হতে হবে।
অনেকদিন ধরে প্রস্রাব মূত্রথলিতে জমতে থাকলে ইউরো সেপসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার লক্ষণ প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হওয়া। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন। আবার প্রস্রাবের বেগ থাকলেও তা ক্লিয়ার না হওয়া বা ফোঁটা ফোঁটা হওয়া মূত্রাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ পর্যন্ত হতে পারে। ব্লাডার ক্লিয়ার না হওয়ার লক্ষণ ঘনঘন প্রস্রাব পাওয়া, প্রস্রাব করতে গিয়ে তা পুরো ক্লিয়ার না হওয়া, কিছু আটকে আছে মনে হওয়া।
[আরও পড়ুন: রামধনু অন্তর্বাসে পুনম, শান্তির বার্তা অনন্যার, যোগের মায়ায় আচ্ছন্ন তারকারা ]
কাদের বেশি হয়?
স্ট্রিকচারের সমস্যা কম বয়সেও দেখা যায়। তবে বাকি সমস্যাগুলি মূলত ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষের হতে পারে। সত্যি কথা বলতে কী, এই বয়সের পর সকলেরই মূত্রনালি একটু সরু হয়ে যায়। তবে সমস্যা কারও খুব কম হয়। কারও বেশি হয়। যাদের বেশি হয় তারাই ডাক্তারের কাছে ছুটে আসে।
যে সব মহিলার কম বয়সেই কোনও কারণে হিস্টেরেকটমি বা ইউটেরাস বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রস্রাব সংক্রান্ত এই সমস্যা তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যেতে পারে। অনেকে ভাবেন জল কম পান করলে মূত্রনালিতে ইনফেকশন বা প্রস্রাব ভালো করে ক্লিয়ার হচ্ছে না। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। জল বেশি বা কম পানের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
চিকিৎসা
এই সব টেস্টের রিপোর্ট দেখে ঠিক করা হয় রোগীকে ওষুধ দেওয়া হবে না কি সার্জারি করতে হবে। পুরুষদের এমন সমস্যা হলে সার্জারির ক্ষেত্রে সিস্টোস্কোপি করা যেতে পারে। এর সাহায্যে চিকিৎসক প্রস্রাবনালি (ইউরিনারি ট্রাক্ট), ব্লাডার, ইউরেথ্রা নিখুঁতভাবে দেখতে পান চিকিৎসক। স্ট্রিকচারের সমস্যা হলে ইউরেথ্রোপ্লাস্টি করা হয়। নিয়াটো স্টেনোসিস থাকলে অর্থাৎ মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রাশয়ের দ্বার ছোট হয়ে গেলে নিয়াটো ডাইল্যুশন করে নিতে হবে।
এই সব প্রসিডিওর খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। মাইক্রোসার্জারি মাধ্যমে সার্জারি করা হয়।
দু-একদিনের মধ্যেই সমস্ত কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই করতে পারবেন রোগী। প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা ক্লিয়ার না হওয়া নিয়ে আকছার সমস্যায় পড়েন বয়স্করা। কিন্তু অনেকেই প্রথমে বিশেষ গুরুত্ব দেন না।
সমস্যা দেখা দিলে দু-একদিনের মধ্যেই ইউরোলজিস্টের কাছে যান। বয়স্ক পুরুষের প্রস্টেট বেড়ে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এছাড়া প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদেরও প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা ঘনঘন হতেই পারে। এঁদের ক্ষেত্রে প্রথমে ক্যাথেটার দিয়ে জমে থাকা ইউরিন ক্লিয়ার করে দেওয়া হয়। তারপর কিছুদিন ওষুধ দিয়ে দেখা হয়। তাতে উপকার না হলে সার্জারির পরিকল্পনা করা হয়।
ফোন - ৪০২০৬৫০০