সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেড মিট খেলে নিশ্চিত ভাবে কোলন বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসার (Colon Cancer) হয়। সম্প্রতি এমনই দাবি উঠেছে সোশাল মিডিয়ায়। ভারতে কোলন ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে রেড মিটকে কাঠগড়ায় তুলেছেন নেটিজেনরা। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই দাবি এক আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
রেড মিট নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে সেই ফলাফলের ভিত্তিতে সরাসরি ভারতীয় খাদ্যাভাসকে বিচার করা ঠিক হবে না। এর প্রধান কারণ হল খাদ্যাভ্যাসের পার্থক্য। আমেরিকায় একজন মানুষ বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কেজি রেড মিট খান। সেখানে অধিকাংশ ভারতীয়ের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বছরে মাত্র ৪ থেকে ৫ কেজি। নিউট্রিশনাল সায়েন্সে একটি রোগের ঝুঁকির ক্ষেত্রে খাবারের 'পরিমাণ' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ধরনের বিদেশি গবেষণা দিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে রোগের মূল কারণ নির্ধারণ করা সরাসরি সম্ভব নয়।
আমাদের দেশে কোলন ক্যানসার বৃদ্ধির মূল কারণ জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
১. দ্রুত বাড়ছে স্থূলতা এবং বিপাকীয় রোগ।
২. খাদ্যে তন্তু বা ফাইবারের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে কমছে।
৩. মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি অত্যাধিক প্রক্রিয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
৪. দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা বা অলস জীবনযাপন।
৫. ধূমপান ও মদ্যপানও পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভারতবর্ষে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর প্রোফাইলে রেড মিট মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত নয়। বরং অলসতা ও খারাপ বিপাকীয় স্বাস্থ্যের প্রভাব বেশি খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রক্রিয়াজাত মাংস ও টাটকা মাংসের পার্থক্য
মাংস মানেই ক্যানসার, এমন ধারণা ভুল। প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন—বেকন, সসেজ) ও টাটকা রান্না করা মাংস এক নয়। প্রক্রিয়াজাত মাংসে নাইট্রেট এবং নাইট্রাইট জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এগুলি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ভারতে টাটকা মাংস সাধারণত মশলা ও ভেষজের সঙ্গে রান্না করা হয়। হলুদ, জিরে, ধনে—এই ভারতীয় মশলাগুলিতে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। ভারতীয় থালির এই সুরক্ষামূলক প্রভাব পশ্চিমা গবেষণায় ধরা পড়ে না। ফলে সেই গবেষণা ধরে চললে ভুল ধারণা তৈরি হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হলে সামগ্রিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, যাতে পর্যাপ্ত ফাইবার থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন। রেড মিট কোলন ক্যানসারের মূল কারণ নয়।
