ডায়েট করেন বলে মুখরোচক খাবার পুরো বাদ! মনখারাপ করবেন না। ডায়েটে রাখতে পারেন মাখনা। যা খেলে মোটা হওয়ার ভয় নেই, মনের সঙ্গে জিভের স্বাদও মেটে। মাখনার নানা গুণের কথাই জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ।
সন্ধ্যাবেলায় মুখরোচক কিছু খেতে মন চায়। ঝালমুড়ি, পাপড়িচাট, ফুচকা কিংবা একটু চিপস, চানাচুর। যেন নেশার মতো। অফিসের কাজের মাঝে কিংবা গল্প-অড্ডায় সান্ধ্য আহার একটা লোভনীয় জিনিস। কিন্তু হঠাৎ করেই এসব খাওয়া বন্ধ টুকটুকির। কারণ কিছুতেই ওজন কমছে না। পিসিওএস, ব্লাড সুগারে কাবু এই বছর তিরিশের যুবতী। কিন্তু তাতে বেজায় মনখারাপও। সন্ধ্যা হলেই মুডসুইং। কারণ সারাদিন সব খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু এই সান্ধ্য আহার বন্ধ হওয়ায় আরও অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে।
ছবি: সংগৃহীত
আমার কাছে সঠিক ডায়েটের পরামর্শ নিতে এসে অত্যন্ত অক্ষেপ করেই বলে, ‘চানাচুর, ফুচকা, এসব বাদ না দিয়ে কি রোগা হওয়া যায় না?’ সত্যিই এই অভ্যাস ছাড়া সহজ নয়। নিয়ন্ত্রণ করাটা বেশ কঠিন। এই জায়গা এখন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হিসাবে জায়গা করে নিচ্ছে ‘মাখনা’ বা ‘ফক্স নাট’। আগে ততটা প্রচলিত ছিল না, বর্তমানে অল্পবয়সিরা যে হারে ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছে, সেক্ষেত্রে তাদের কাছে মাখনা একটা ভাল অপশন।
মাখনা বা ইংরেজিতে ফক্স নাট। জানা যায়, এর প্রচলন ছিল আয়ুর্বেদ এবং চৈনিক ওষুধেও। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। ক্ষতস্থান নিরাময়ের ওষুধ হিসাবে কাজ করে থাকে এই বিশেষ বীজটি। বিহারে মাখনার উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। পদ্মের বীজের মধ্যে থাকে অসংখ্য দানা, প্রায় ২০টি বীজ। যা ৪০ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়। তারপর বীজ শুকিয়ে উচ্চ আগুনে সেঁকে নেওয়া হয়। তারপর বাইরের কালো খোসা ভেঙে সাদা পাফ বেরিয়ে আসে। এই বীজগুলোকেই আমরা মাখনা বলি।
[আরও পড়ুন: লাউ দিয়ে মুরগির মাংস, গরমের আদর্শ খাবার, জেনে নিন রেসিপি]
মুড়ির বদলে খেতে পারেন
মুড়িতে নুনের পরিমাণ বেশি থাক, যা অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরের পক্ষে ভালো নয়। মাখনায় সেসব ভয় নেই। মাখনায় রয়েছে ফাইবার। প্রতি ১০০ গ্রামে ফাইবার পাওয়া যায় ২৫.৫ গ্রাম। এটি ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, থায়ামিন, প্রোটিন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। চায়ের সঙ্গে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত স্ন্যাক্স। এছাড়া ক্ষীর, কোনও কারি, রায়তা বা পায়েস খেলে তাতে দিয়েও মাখনা খাওয়া যায়। এতে কোলেস্টেরল, সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।
স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর
১০০ গ্রাম মাখনায় রয়েছে ৩৪৭ ক্যালরি। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি, ৭৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন রয়েছে ৯.৭ গ্রাম। অনেকটা পরিমাণে রয়েছে ফাইবার, গুড ফ্যাট। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ লবণ যেমন ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম পাওয়া যায়। ওজন কমাতে খুব ভাল কাজ করে। শরীরে আসতে দেয় না বয়সের ছাপও। ত্বক সুস্থ এবং টানটান করে তোলে। এছাড়াও হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। কমায় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য অসুখের সম্ভাবনা।
ছবি: সংগৃহীত
যেহেতু, এখানে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, এটি আমাদের নার্ভের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। আয়রন সমৃদ্ধও। যারা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত, তাদের জন্যও এটি উপযুক্ত। এতে উপস্থিত ক্যালশিয়াম হাড় গঠনে, দাঁত শক্ত রাখতে উপকারি। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা স্ট্রেস থেকে শুরু করে নানা রকম মানসিক সমস্যা দূরে রাখে। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এই মাখনা। এছাড়াও এটি ‘গ্লুটেন ফ্রি’। যারা নিরামিষ খান, তাদের জন্যও
খুব ভালো। শরীরে হরমোনের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বন্ধ্যাত্বের সমস্যা প্রতিরোধ করে। মহিলাদের রিপ্রোডাকটিভ ফাংশন ঠিক রাখতে দারুণ কার্যকর এই খাবার। যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাঁদের জন্য এই মাখনা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর। যেহেতু এখানে ফাইবার রয়েছে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।