নির্মল ধর: কলকাতার ময়দানে ফুটবল খেলা নিয়ে সাত থেকে নয়ের দশকে নাকি বিরাট জুয়া খেলা হত। সেখানে মদত দিত শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনেরা। এবং জনাকীর্ণ সেই মাঠে ঢুকে শুধু খেলা পণ্ড নয়, ক্লাবের কর্মকর্তা সহ দর্শকেরও ডজন ডজন লাশ পড়ে যেত। জানি না, ময়দানে খেলার ইতিহাসে সত্যিই এমন কোনও ঘটনা আছে কিনা বা লালবাজারের পুরনো নথি খুঁজলে এমন ঘটনার কোনও রেকর্ড পাওয়া যাবে কিনা। অবশ্য প্রযোজক-নায়ক জিৎ (Jeet) এবং তাঁর পরিচালক রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি ৩-৪ বছরের পরিশ্রমে ‘চেঙ্গিজ’ (Chengiz) সিনেমার চিত্রনাট্য বানিয়েছেন। এমনকি মুম্বইয়ে গিয়েও তা নিয়ে নীরজ পাণ্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
এই এত পরিশ্রমের নিটফল আড়াই ঘণ্টার অ্যাকশন, মুহুর্মুহু মুড়িমুড়কির মতো গুলি বিনিময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের মধ্যে। যার মধ্যমণি চেঙ্গিজ ওরফে জয়দেব। কিশোর জয়দেব চোখের সামনে দেখেছিল সমাজবিরোধী রশিদ খানের হাতে মা ও পুলিশ অফিসার বাবার মৃত্যু। অনাথ জয়দেব আশ্রয় পায় সৎ পুলিশ অফিসার মামা সমীরের কাছে। একটু বড় হতেই মামা-মামী জয়দেবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বড় হয়ে সে কী হতে চায়? জয়দেবের জবাব ছিল, একদিন সে বাবা-মায়ের খুনি রাশিদকে মেরে ফেলতে চায়।
[আরও পড়ুন: ‘টাইগার ৩’র সেটে সলমনের ধূমপানের ভিডিও ভাইরাল! কী বললেন অনুরাগীরা?]
এই জবাব দেওয়ার পরদিন থেকেই উধাও হয়ে যায় জয়দেব। খেলার ময়দানে টিকিটের কালোবাজারিতে হাত পাকিয়ে ওমর নামের এক ডনের নজরে পড়ে। জয়দেব হয় চেঙ্গিজ। ব্যাংকক থেকে কলকাতা শহরে মাদক চালানের প্রধান। প্রতিষ্ঠিত ডনেরা হয়ে দাঁড়ায় তার প্রতিপক্ষ। সুতরাং গুলি-বন্দুকের জগঝাম্প হতে আর কতক্ষণ! প্রায় প্রতি মিনিটে হয় চেঙ্গিজ, নয়তো প্রতিপক্ষের সঙ্গে তুমুল অ্যাকশন। নাহ, সেজন্য প্রেমে খামতি রাখা হয়নি। ব্যাংকক যাতায়াতের পথে নন্দিনী নামে এক সুন্দরী বিমানসেবিকাকে।
এদিকে কলকাতার লালবাজারের ঘরে তৈরি হয়েছে পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড। যাতে চেঙ্গিজ ওরফে জয়দেবের মামা সমীরও রয়েছে। আর বিশেষ এই দলের একটাই লক্ষ্য। চেঙ্গিজ ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যান্য ডনের নিকেশ করা। জিতের ছবি মানেই যুক্তিহীন মারপিট, রক্তারক্তি, দু’ছটাক প্রেম, এক ছটাক গান। জানা গিয়েছে, এই ছবির বাজেট নাকি পাঁচ কোটি টাকা। প্যান ইন্ডিয়ার বাজার ধরার জন্য হিন্দি সংস্করণও হয়েছে। নাম চরিত্রে জিৎ একমেবাদ্বিতিয়াম। মামা সমীর হয়েছেন রোহিত রায় এবং ওমরের ভূমিকায় শতাফ ফিগার। নায়িকা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় নৈবেদ্যর ওপর ফুলের পাপড়ির মতো। কে বা কারা কেমন অভিনয় করলেন, তার চাইতে বড় কথা জিৎ পাঁচ কোটির বাজি জিতবেন তো! সেই প্রশ্নটা রয়েই গেল। সত্যিই, বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য জিতের এমন মানসিক, শারীরিক পরিশ্রম ও আর্থিক বিনিয়োগ সার্থক হোক, নইলে যে সাড়ে সর্বনাশ! অবশ্য বক্স অফিসে চেঙ্গিজের ফিরে আসা সম্ভাবনা প্রবল।
সিনেমা – চেঙ্গিজ
অভিনয়ে – জিৎ, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, রোহিত রায়, শতাফ ফিগার, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বরূপ বিশ্বাস, মৌসুমী দাস
পরিচালনা – রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়