সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ''ভুলে যাবেন না আপনাদের দু'টি চিকেন নেক রয়েছে। আমাদের চিকেন নেকের দিকে তাকালে বা আক্রমণ করলে ভারত আপনাদের দু'টি চিকেন নেকেই আক্রমণ করবে।'' এভাবেই বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসকে হুঁশিয়ারি দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের একটা চিকেন নেক রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিকেন নেকের সংখ্যা দু'টি। যদি বাংলাদেশ আমাদের চিকেন নেককে আক্রমণ করে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের দুটো চিকেন নেকেই আক্রমণ করব। মেঘালয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাটি ভারতের চিকেন নেকের চেয়েও পাতলা। প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে সেটি অবস্থিত।” ভারতের সামরিক শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিজেপি নেতার হুঁশিয়ারি, “ভারত আক্রমণ করার আগে বাংলাদেশকে ১৪ বার জন্ম নিতে হবে"।
কিন্তু বাংলাদেশের কোন দুটি চিকেন নেকের কথা বললেন হিমন্ত? মনে করা হচ্ছে, বৃহত্তম বন্দর শহর চট্টগ্রামের সঙ্গে যে সরু করিডর বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, সেটি হল প্রথম চিকেন নেক। অপরটি রংপুরের কাছে অবস্থিত। রংপুর ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে।
কিন্তু ভারতের কাছে কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ চিকেন নেক? এই এলাকা ‘শিলিগুড়ি করিডর’ নামেও পরিচিত। শিলিগুড়ি শহরে অবস্থিত এই করিডর ভূকৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এটির প্রস্থ প্রায় ২০ কিলোমিটার। নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই তিন দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে শিলিগুড়ি করিডর। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে বেঁধে রেখেছে এই সংকীর্ণ স্থলভাগ। যার তুলনা করা চলে মুরগির গলার সঙ্গে।
সমরশাস্ত্রের সূত্র মেনে ভারতের মতো মহাশক্তিধর দেশকে দুর্বল করতে এই শিলিগুড়ি করিডরকেই পাখির চোখ করেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। তিনটি দেশের সীমান্ত এক জায়গায় মেশায় এই পথেই অস্ত্রশস্ত্র, মাদক ও জাল নোট ভারতে পাচার করার ছক কষেছে জেহাদিরা। পাশাপাশি সীমান্তের ছিদ্রপথে সন্ত্রাসবাদীদের এদেশে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই চিকেন নেক টার্গেট পাকিস্তানেরও। এই অঞ্চলকে ভারতের থেকে আলাদা করে দিতে চায় চিনও। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ লাগলে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ চিকেন নেককে নিশানা করতে পারে পাকিস্তান। সঙ্গী হতে পারে ‘নতুন’ বাংলাদেশও। কিন্তু সব রকমভাবে প্রস্তুত ভারতও।
শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক চিত্র আমূল বদলে গিয়েছে। যে দেশ এক সময়ে ‘ভারতবন্ধু’ ছিল তারাই চিন, পাকিস্তানকে কাছে টানছে। বেজিংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত (সেভেন সিস্টার) ভেঙে ফেলার আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখছে ঢাকা। উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্যের সঙ্গে গোটা ভারতের সংযোগ করে ‘চিকেন নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর। চিনের আধিকারিকরা এসে জায়গাটি পরিদর্শনও করে গিয়েছে বলেও সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী রংপুরের লালমনিরহাট জেলায় বেজিংয়ের সহায়তায় বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে ঢাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই রংপুর ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। সূত্রের খবর, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এই বায়ুসেনা ঘাঁটি নির্মাণের খবর এসেছে। গোটা পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইউনুসকে কড়া বার্তা দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।
