বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ঐক্যমত্য না হওয়ায় সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরি বাছাই পার্টি কংগ্রেসের ওপর ছেড়ে দিল সিপিএম। পার্টি কংগ্রেসে তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদক বাছাই করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে কেরলের এম এ বেবিকে নিয়ে মালয়ালি নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সেলিমের ক্ষেত্রে বাংলার নেতারা আপত্তি তোলেনি বলে সূত্রের খবর।

বরং দিল্লিতে পার্টির অভ্যন্তরে বাংলার গুরুত্ব বাড়াতে সেলিমের পক্ষে বঙ্গকুলের কমরেডরা সায় দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আবার সেলিমকে লেখা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, বিতর্ক ধামাচাপা দিতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ও বিজেপিকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট’ বলার ক্ষেত্রে কোনও বাধা রাখছে না সিপিএম।
পার্টির ইতিহাসে আগে কখনও কোনও সংখ্যালঘু বা মহিলা সিপিএমের শীর্ষপদে বসার সুযোগ পায়নি। এবার সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে যে দু’জনের কথা ভাবা হচ্ছে তারা দু’জনেই সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু মুখকে সামনে এনে পার্টির হাল ফেরানোর কৌশল নিয়ে নিয়েছে সিপিএম। পাশাপাশি মহিলা মুখ নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু সংখ্যালঘু মুখ সামনে আনলেই সুদিন ফিরবে এমন সম্ভাবনাও কম। কারণ বাংলায় মহম্মদ সেলিমকে সম্পাদক করেও কোনও লাভ হয়নি। এখনও বাংলায় টিমটিম করে জ্বলছে আলিমুদ্দিন। জনসমর্থন তলানিতে। ছাত্র যুবদের সামনের সারিতে এনেও হাল ফেরান সম্বব হয়নি। ত্রিপুরাতেও ৭ বছর হলো পার্টি ক্ষমতাচ্যুত। একমাত্র কেরালাতে টিমটিম করে জ্বলছে পিনারাই বিজয়নের সরকার। কিন্তু সেখানেও বেহাল অবস্থা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সে রাজ্যে ক্ষমতাবদল এখন সময়ের অপেক্ষা। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। কুড়িটি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই জয় পেয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। তবে পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুতে পার্টির শক্তি বৃদ্ধি পেলেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। এর মধ্যে ইয়েচুরির আকস্মিক মৃত্যু পার্টিকে আরও বিপাকে ফেলেছে।
বর্তমানে সিপিএম পলিটব্যুরো বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছে। ১৫ জন সদস্যর মধ্যে প্রকাশ ও বৃন্দা কারাত, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র, পিনারাই বিজয়ন ও কৃষকনেতা অশোক ধাওলে পার্টির বেধে দেওয়া বয়সসীমা অতিক্রম করার মুখে দাঁড়িয়ে। ফলে ইয়েচুরির উত্তরসূরি খুঁজতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা কমরেডকুলের নেতাদের। শনি ও রবিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত অমীমাংসীত রইল। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলার এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এরমধ্যেই এম কে স্ট্যালিন ইন্ডিয়া জোটের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের যে বৈঠক ডেকেছিলেন সেখানে সিপিএমের মহম্মদ সেলিমকে আমন্ত্রণ জানানোয় জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। আপাতত কো-অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ চালাচ্ছেন প্রকাশ কারাট। তাঁকে বাদ দিয়ে স্ট্যালিন কেন সেলিমকে আমন্ত্রণ জানালেন জল্পনা সেখানেই।