সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গাপুজো। দেশের বাকি প্রান্তের মানুষের কাছে নেহাত দিন দশেকের আনন্দ হলেও, বাঙালির কাছে এ উৎসবের সংজ্ঞা ভিন্ন। রাজ্যবাসীর কাছে দুর্গাপুজো আবেগ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের প্রতীক। সাধারণ মানুষের আয় থেকে বাংলার জিডিপি- দুর্গার আশীর্বাদ সবত্র। আর সাম্প্রতিককালে সেই ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানায় ছোঁয়া লেগেছে শিল্পেরও। যে শৈল্পিক ভাবনা এবং সৃজনের হাত ধরে আজ বিশ্বজনীন কলকাতার দুর্গাপুজো। তারই মুকুটে জুড়ল নতুন পালক। প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিয়েনালেতেও স্থান করে নিল পুজো শিল্প। যা প্রতিটি বাঙালির কাছেই অত্যন্ত গর্বের।
কোচি মুজিরিস বিয়েনালেতে প্রতি বছরই বসে চাঁদেরহাট। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নামজাদা শিল্পীদের অনন্য শিল্পকর্মে আলোকোজ্জ্বল হয় প্রদর্শনী। এবারও হল না তার ব্যতিক্রম। তবে ব্যতিক্রমী একটি বিষয় নজর কাড়ল গোটা দুনিয়ার শিল্পীদের। প্রথমবার কোচি বিয়েনালেতে জায়গা করে নিল দুর্গাপুজো আর্ট বা দুর্গাপুজো শিল্প!
মাসআর্টের তত্ত্বাবধানেই ফুটিয়ে তোলা হল কীভাবে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হয়ে উঠেছে ওপেন আর্ট গ্যালারি। দুর্গাপুজোর আঙিনা এখন শিল্পের জীবন্ত জাদুঘর। যার দ্বার খোলা প্রত্যেকের জন্য। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যার সাক্ষী থাকতে পারেন। শিল্পীর সৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখার, তাঁর ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার, তাঁর সৃজনের নির্যাসে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান।
শিল্পী ভবতোষ সুতার, দীপ দাস, ঈশিকা চন্দ্র, মানস দাস এবং প্রদীপ দাসের শিল্পকলা প্রদর্শিত হল এখানে। প্রদর্শনীতে দুর্গা প্রতিমা না থাকলেও পুজো ও শিল্পের যোগসূত্রের ভাবনাই ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। মূল বিষয়বস্তু কাঠামো। শিল্প হোক বা পুজো, সবটার ভিত কাঠামোই। সেখানে বাঁশের তৈরি নৌকার কাঠামোর মধ্যে দিয়ে বাংলার জীবনযাত্রা এবং একইসঙ্গে দুর্গার গমন-আগমনের পৌরাণিক দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে। একই রকম ভাবে প্রদর্শনীতে স্থান করে নিয়েছে পুজোর প্রধান বাদ্যি ঢাক। কোচির মঞ্চে কখনও উঁকি দিয়েছে উত্তর কলকাতার অলিগলি তো কখনও বেজে উঠেছে মা দুর্গার বিসর্জনের সুর।
যুগের পরিবর্তন ঘটেছে। তালমিলিয়ে বদলেছে পুজোর চাকচিক্য। মণ্ডপে ঢুকে পড়েছে লাইভ পারফরম্যান্স। কখনও অত্যন্ত সহজ ভাষায় শিল্পী দর্শকদের বুঝিয়েছেন পুঁজিবাদ, ক্ষমতা আর প্রতিষ্ঠার চোখ রাঙানি। তো কখনও দিয়েছেন সামাজিক বার্তা। আসলে পুজো আর্টকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিতেই প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাস আর্ট। আর সেই লক্ষ্যেই আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাঙালির উৎসব।
