সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২৫-এ পা দিল পৃথিবী। সমস্ত দেশের মতো ভারতের পদক্ষেপের দিকেও তাকিয়ে কূটনৈতিক বিশ্ব। ২০২৪ সালেই মোদি সরকার পরিষ্কার করে দিয়েছে 'বিশ্ববন্ধু' হয়ে উঠতে চায় ভারত। স্বাভাবিক ভাবেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রতিবেশী দেশ থেকে বিশ্বের অন্য শক্তিশালী দেশের সঙ্গে ভারত কেমন সম্পর্ক রাখবে সেদিকে নজর ওয়াকিবহাল মহলের।
বাংলাদেশ
সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন, সেদিকে তাকিয়ে ভারত কোন নীতি নিয়ে চলবে তা বারবার আলোচনায় উঠে আসছে। একদিকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে চাপানউতোর বাড়ছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। অন্যদিকে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারির পর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন ঘিরে নানা প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ফোনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সরকারের সমর্থন থাকবে। তবে সেই সঙ্গেই সেখানে বসবাসকারী হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েও তিনি জানান, বাংলাদেশের আমজনতার প্রতি ভারত তাদের সমর্থন জারি রাখবে। এদিকে হাসিনাকে ফেরত না দিলেও দিল্লির সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কারণ এর সঙ্গে আমাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে।
পাকিস্তান
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ২০২৪ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন এসসিও সামিটে যোগ দিতে। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনও প্রশাসনিক প্রতিনিধি সেদেশে গেলেন। কিন্তু তাঁর এই সফরে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়নি। এদিকে ভারত 'সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে নয়' নীতিই বজায় রেখেছে। তবে জয়শংকর লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, অন্য প্রতিবেশীদের মতো পাকিস্তানের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় ভারত। তবে সেক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানকেও বোঝাতে হবে তারা আগের ভাবমূর্তি ভেঙে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।
চিন
২০২৪ সালে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। সীমান্তের সংঘাত মেটাতে একমত দুই দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে চিন ও ভারত সামরিক ও কূটনীতিক দুই স্তরেই দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা চালিয়েছে বারবার। আর এবার দুই পক্ষই প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। সেই চুক্তি স্বাক্ষরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন বছরে সেই সম্পর্ক কোন পথে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।
মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ককে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছে নয়াদিল্লি। ২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার ও কুয়েতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মধ্যে আমিরশাহিতে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বাপস হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন থেকে ভারত মার্টের লঞ্চ- এই ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি কাতারে ভারতের প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিকের মৃত্যুদণ্ড রদ করতে দিল্লির ভূমিকা ছিল দেখার মতো।
আমেরিকা
আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ২০২৫ সাল যে সকলের কৌতূহল থাকবে তা স্বাভাবিক। ২০২৪ সালের শেষলগ্নে ভোটে জিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতেই তাঁর শপথগ্রহণ। তাঁর সঙ্গে মোদির সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখে বলাই যায়, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি হবে বলেই ধরা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়া
গোটা বিশ্ব যখন মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার দিকে তাকিয়ে, ভারত বরং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি নিতে চাইছে। এবং তাও নিঃশব্দে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বদল আনছে ভারত। উত্তর কোরিয়ার ভারতীয় দূতাবাসের বন্ধ দরজা ফের খুলেছে। আমেরিকার ‘বড় শত্রু’ কিম জং উনের দেশের সঙ্গে প্রায় গোপনেই এই বদলকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে পিয়ংইয়ং-এ ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। এরপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক গুরুত্ব ক্রমেই বেড়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে অরাজি হওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে এদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করলে তাদেরও অবস্থান মজবুত হবে।
রাশিয়া
রাশিয়া বরাবরই ভারতের 'বন্ধু'। যদিও ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের সংঘাতে যুদ্ধের বিরুদ্ধেই থেকে নয়াদিল্লি, তবুও সব মিলিয়ে পুতিনের হাতই ধরতে চেয়েছেন মোদি। ২০২৪ সালে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন মোদি। এবছর দুই দেশের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এদেশে আসার কথা পুতিনের। সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।