সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হামলা পালটা হামলায় ঝরেছে হাজার হাজার রক্ত। বাদ যায়নি নিষ্পাপ শিশুরাও। কিন্তু এবার যুদ্ধের কালো মেঘ সরতে চলেছে লেবাননের আকাশ থেকে। ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হেজবোল্লার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে ইজরায়েল। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ফের একবার কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বার্তা দিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।
মঙ্গলবার রাতে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয় ইজরায়েলের মন্ত্রিসভা। এর পর নীতিগত ভাবে এই চুক্তি অনুমোদন করেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তেল আভিভ ও হেজবোল্লার মধ্যে সম্পন্ন হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ২৭ নভেম্বর স্থানীয় সময় ভোর ৪টে থেকে কার্যকর হচ্ছে এই সংঘর্ষবিরতি। আপাতত ২ মাসের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও হামলা চালাবে না দুপক্ষ। পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো হবে চুক্তির মেয়াদ। এর পরই বার্তা দেওয়া হয় ভারতের তরফে। যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রক বলে, 'ইজরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা সব সময়ই বৈঠক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে ফেরার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা আশা করি এই পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।'
গাজা যুদ্ধের মাঝেই গত জুলাই মাস থেকে সংঘাত তীব্র হয় ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে। ইজরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির এক ফুটবল স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়েছিল শিয়া জঙ্গি সংগঠনটির রকেট। হামলায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। এই ঘটনাতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে আক্রমণের ধার বাড়ায় ইজরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হন হেজবোল্লার প্রধান হাসান নাসরাল্লা। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর উত্তরসূরি হাশেম সাফেদ্দিনকেও খতম করে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তার পর বিবৃতি দিয়ে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে ৭১ বছরের নাইম কাসেমকে নির্বাচিত করে হেজবোল্লা। এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইরানও। ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে তেহরান ও তেল আভিভের মধ্যে। এর মাঝে এই যুদ্ধবিরতিকে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে আশার আলো হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গিয়েছে, লেবাননের হেজবোল্লা ও ইজরায়েলের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতির মূল কারিগর আমেরিকা ও ফ্রান্স। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে বার্তা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি লেখেন, ‘আমার কাছে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে অত্যন্ত ভালো একটি খবর রয়েছে। ইজরায়েল ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এর পর অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শেষ করতে আমেরিকার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে দুই পক্ষ।’ আমেরিকার পাশাপাশি এই শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফ্রান্সও। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার জন্য আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে বার্তা দিয়েছেন, ‘যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হলেও এর মেয়াদ কতদিন থাকবে তা নির্ভর করছে লেবাননের উপর। যদি কোনওভাবে এর শর্ত লঙ্ঘন করা হয় সেক্ষেত্রে কড়া জবাব দিতে দ্বিধা করব না আমরা।’
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে বলা হয়েছে, হেজবোল্লা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন ইজরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠবে না। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে, লেবানন নিজেদের এলাকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করতে পারবে। লেবাননে হেজবোল্লা তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নতুন করে তৈরি বা বাড়াতে পারবে না। যদি হেজবোল্লা বা অন্য কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইজরায়েলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে তেল আভিভের।