সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজের খোঁজে কেরলে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে ছত্তিশগড়ের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। বাংলাদেশি সন্দেহে ৩১ বছরের রামনারায়ণ বাঘেলকে পিটিয়ে খুন করা হয়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারির পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পাশাপাশি দেশে ‘ঘৃণার রাজনীতির প্রচার’ করার জন্য সংঘ এবং বিজেপিকে আক্রমণও শানিয়েছে বাম সরকারের এক মন্ত্রী।
এই বিষয়ে পালাক্কড়ের সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী এমবি রাজেশ বলেন, ‘‘ওই পরিযায়ী শ্রমিক সংঘ পরিবারের ঘৃণার রাজনীতি এবং জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁর উপর চড়াও হয় জনতা। আক্রমণকারীদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আরএসএস কর্মীও ছিলেন। এঁদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা ফৌজদারি মামলা রয়েছে।’’ সত্যিই কি সংঘের সদস্যরাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত? তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলার বাসিন্দা রামনারায়ণ। গত ১৭ ডিসেম্বর পালাক্কড় জেলার আট্টাপাল্লাম অঞ্চলে তাঁকে পটিয়ে খুন করা হয়। নৃশংস হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা গিয়েছে, ‘তুই বাংলাদেশি’ বলে এলোপাথাড়ি লাথ-ঘুসি-চড় মারা হচ্ছে ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা যুবককে। অর্ধমৃত রামনারায়ণকে এক সময় জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কোন ভাষায় কথা বলিস?’ সে অবশ্য বর্বর অত্যাচারে কথা বলার অবস্থায় ছিল না। একটা সময় যন্ত্রণা ডিঙিয়ে জানায়, গ্রামে বোন রয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠে, ‘তোর বোনও বাংলাদেশি’। নারকীয় অত্যাচারে এক সময় মৃত্যু হয় রামনারায়ণ বাঘেলের।
দেহ ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকরা জানান, মৃত যুবকের শরীরে ৮০টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। প্রাণঘাতী আঘাত করা হয়েছে মাথায়। এছাড়াও পেটে, বুকে এবং পিঠে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন ছিল। বিভিন্ন অঙ্গের ভিতরে রক্তপাতে মৃত্যু হয়েছে রামনারায়ণের। ইতিমধ্যে কেরল পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মৃত যুবকের তুতো ভাই শশীকান্ত বাঘেল জানান, আট ও দশ বছরের দুই সন্তান রয়েছে রামনারায়ণের। শোকের পাশাপাশি অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারটি। সরকারি সাহায্যের দাবি করেছেন শশীকান্ত। ন্যক্কারজনক ঘটনায় মুখ খুলেছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা। নিহত রামনারায়ণের বাঘেলের পরিবারকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন হল, নিহত যুবককে নয় ভুল করে বাংলাদেশি ভাবা হয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশি হলেই বা পিটিয়ে খুন করা হবে কেন? যদি সে অবৈধ উপায়ে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে আইনানুগ শাস্তি দিতে পারে একমাত্র সরকার।
