সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দিয়ে গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইনে বদল এনেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এত দিন ১০০ দিনের কাজের যে প্রকল্প 'মনরেগা' নামে পরিচিত ছিল, এখন তার নাম হয়েছে বিকশিত ভারত-গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)। সংক্ষেপে জিরামজি। এই সংক্রান্ত বিল পাশও হয়ে গিয়েছে সংসদের দুই কক্ষে। তা নিয়ে এ বার মুখ খুললেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প 'মনরেগা'র উপর বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার! সরকারের নয়া বিলকে 'কালো আইন' বলেও আখ্যা দিয়েছেন সোনিয়া।
মোদি সরকার নতুন বিলে ১০০ দিনের বদলে ন্যূনতম কাজের গ্যারান্টি ১২৫ দিন করার প্রস্তাব এনেছে। চলতি অর্থ বছরে রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্পে ৮৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। নতুন বিলে বলা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্পে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করবে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যার অর্থ, প্রায় সাড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকারগুলোকে বহন করতে হবে। এত দিন একশো দিনের কাজের কর্মীদের মজুরির পুরো খরচই কেন্দ্রীয় সরকার দিত। আইনে সংশোধন করে মোদি সরকার সেই খরচের ৪০ শতাংশ বোঝা রাজ্যের উপরে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে দেশের লাখ লাখ কৃষক, শ্রমিক এবং গৃহহীন মানুষ বিপদে পড়বেন বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেত্রী।
ভিডিওবার্তায় সোনিয়া বলেন, "২০ বছর যখন মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন সর্বসম্মতিক্রমে মনরেগা আইন পাশ হয়েছিল। সেটা একটা বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ছিল। এই প্রকল্প এতকাল দেশের গরিব, বঞ্চিতের মানুষের পেটে ভাত জুগিয়েছে।" তাঁর সংযোজন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, সম্প্রতি সরকার মনরেগার উপর বুলডোজার চালিয়েছে। শুধু মহাত্মা গান্ধীর নাম মুছেছে তা নয়, মনগেরার আসল রূপ এবং কাঠামো যথেচ্ছ ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। কোনও আলোচনা ছাড়াই, বিরোধীদের পরামর্শ ব্যতীত এ হেন কাজ করেছে কেন্দ্র।’’
প্রসঙ্গত, কেন মনরেগা বা মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইনে সংশোধন করে মহাত্মা গান্ধীর নাম মোদি সরকার বাদ দিচ্ছে, সংসদেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীরা। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান তার সদুত্তর দিতে পারেননি। বিল পেশের সময় ‘জি রাম জি’-তে বাড়তি জোর দিয়ে শিবরাজ দাবি করেছেন, মোদি সরকার মহাত্মা গান্ধীর আদর্শেই চলছে। বিলে ‘রাম’ রয়েছে বলে বিরোধীরা আপত্তি করছেন বলেও যুক্তি দিয়েছেন।
