সুলয়া সিংহ, অযোধ্যা: বলো শ্রীরামচন্দ্র কি, জয়। শ্রী নরেন্দ্র মোদি কি, জয়। শ্রী যোগী আদিত্যনাথ কি, জয়! রামায়ণে রামের নামের পর সীতা এবং লক্ষ্মণের নামই নেওয়া হয়েছে বারবার। কিন্তু কলিযুগের অযোধ্যার ছবিটা এক্কেবারে আলাদা। রামমন্দিরের (Ram Mandir Inauguration) জন্য সেজে ওঠা এ শহর রামের পরই যে দুজনের নামে ধ্বনি তুলছে, তাঁদের একজন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যজন যোগী আদিত্যনাথ।
রেল স্টেশন অথবা বিমানবন্দর থেকে রামমন্দির যাওয়ার পথে যতই গাড়ি এগোবে, ততই চোখে পড়বে রাম ‘ভক্ত’ মোদি এবং যোগীর সুবিশাল পোস্টার, ব্যানার। কখনও রামের কাছে নতজানু মোদি, তো কখনও হাসিমুখে গোটা বিশ্বকে অযোধ্যায় (Ayodhya) স্বাগত জানাচ্ছেন মোদি এবং যোগী। তাঁরা মসনদে না থাকলে যে রামলালা ঘরই পেত না! রামমন্দির তৈরির ৫০০ বছরের অপেক্ষার ইতিহাসের হ্যাপি এন্ডিংয়ের কাণ্ডারি তো তাঁরাই। তাই রাম ভক্তরা এখন শুধুই মোদি-যোগী ভক্ত। আহমেদাবাদ থেকে আসা এক রামভক্ত যেমন বলে দিলেন, তাঁর কাছে মোদিই (Narendra Modi) রাম। আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) লক্ষ্মণ। অন্যজন একজনের কথায়, “অনেকেই মুখে অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু এই দুজনই করে দেখিয়েছেন। অযোধ্যার ভোলবদলে দিয়েছেন এঁরা।” রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে এভাবেই অযোধ্যাজুড়ে ‘মোদি-যোগী বিরাজমান’।
[আরও পড়ুন: রানওয়েতেই যাত্রীদের খাওয়ানো! ইন্ডিগো, মুম্বই বিমানবন্দরকে বিশাল জরিমানা কেন্দ্রের]
লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দিরকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিজেপি। প্রাণ প্রতিষ্ঠা নয়, নেহাতই রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। এমন দাবি করেই কংগ্রেস ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। যদিও অযোধ্যায় স্থানীয় কংগ্রেস বেশ দুর্বল। এখানে গেরুয়া শিবিরের প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টি। যেভাবে রামের নামে গোটা শহরে অকাল দিপাবলী, সেখানে তাঁদের লড়াইয়ের হাতিয়ার কী? এককালে তো অযোধ্যায় সপার দাপট কম ছিল না। এখনও দুই বিধায়ক রয়েছেন। রামলালার আবির্ভাবে তাঁরা কীভাবে নিজেদের ঘুঁটি সাজাবেন? উত্তর খুঁজতে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হল প্রাক্তন সপা বিধায়ক তেজনারায়ণ পাণ্ডের সঙ্গে। রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া? প্রশ্ন শুনেই বললেন, “আমি ব্যস্ত। সন্ধেয় ফোন করুন।” সন্ধের ফোনে বললেন, “কিছু শোনা যাচ্ছে না।” তারপর ফোন বেজেই গেল। তাহলে কি রামমন্দিরের পালটা অস্ত্র তৈরি করতে আরও খানিকটা সময় লাগবে সপার? লোকসভায় বিজেপির প্রধান বিরোধী হতে চলেছে ইন্ডিয়া জোট। তাদের রামমন্দিরের ‘অ্যান্টিডোট’ কোথায়?
‘হিন্দু হে হাম। অভিমান হামারা ভাগবা।’ সরযূর তীরে জোরে জোরে বাজছে গানটা। এ কোন ‘ভাগবা’ (গেরুয়া)? ধর্মের রংকে যে রাজনীতির সঙ্গে এভাবে জড়ানো যায়, রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে যে রামলালাকেও পিছনে ফেলে দেওয়া যায়, চন্দ্রযানের সাফল্যের যুগেও যে রামের নামে ভোটবাক্স ভরতি করা যায়, তার সাক্ষাৎ প্রমাণ এই অযোধ্যানগরী। শ্রীরামচন্দ্র কি জানতে পারছেন?