অ্যাক্টিভ ফান্ডসমূহকে ১০ গোল দিয়ে এখন মাঠ কাঁপাচ্ছে নানা ধরনের প্যাসিভ ফান্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এদের প্রাধান্য আরও বাড়বে। সেই আভাসই জোরালো করে বাজারে আসছে একের পর এক প্যাসিভ ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট। এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগের প্রচুর সুবিধা রয়েছে। জানা থাকলে বুদ্ধিমান গ্রাহকও এগোতে পারেন এই পথে। বিশদ তথ্য সংকলনে ইউটিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহাদ গদিওয়ালা
প্যাসিভ ফান্ড কী? কেন বিনিয়োগ করবেন এই ফান্ডে?
ভারতের বাজারে মিউচুয়াল ফান্ড কতটা সফল, সেই খতিয়ান যাঁরা জানেন, তাঁরা নিশ্চিতভাবেই প্যাসিভ ফান্ডে বিনিয়োগের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড সম্পর্কেও সমানভাবে সচেতন। দেশে এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগের হার বাড়ছে এবং চোখে আঙুল দিয়ে এই পুরনো ধারণাকেও ভ্রান্ত প্রমাণ করছে যে-কেবলমাত্র জটিল প্রকারের লগ্নিতেই বড়সড় রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ট্রেন্ড আগামিদিনে আরও গতি পাবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা, নতুন নতুন প্যাসিভ ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট বাজারে আনতে শুরু করেছে।
ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘ফিনিটি’-র ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বছর মার্চ মাসে যেখানে এইউএম (অ্যাসেটস আন্ডার ম্যানেজমেন্ট) ৩ ট্রিলিয়ন টাকা ছিল, সেটাই ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ ট্রিলিয়ন টাকার গণ্ডি ছাপিয়ে যাবে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির সামগ্রিক অ্যাসেটের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে প্যাসিড অ্যাসেটের বৃদ্ধি ২০২১ সালের মার্চ মাসে যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ ছিল, সেটাই ২০২৫ সালের মধ্যে বেড়ে হবে ৩৭ শতাংশ।
[আরও পড়ুন: লগ্নিকারীর জন্য আসছে সুযোগ, জেনে নিন বাজারের হালহকিকত]
বিভিন্ন গোত্রের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং উচ্চ হারে দীর্ঘমেয়াদি রিটার্ন তৈরির ক্ষমতা রয়েছে বলেই বাজার-ভিত্তিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডের এত জনপ্রিয়তা। আমরা লগ্নির ধরন অনুযায়ী ‘অ্যাক্টিভ’ এবং ‘প্যাসিভ’-এই দু’ভাগে ভাগ করতে পারি।
প্যাসিভ ফান্ডগুলি ইনডেক্স সূচকের ট্র্যাক নজরে রাখে। এই ফান্ডে স্টক যে হারে থাকে, ইনডেক্সেও তাই থাকে। এই ফান্ডগুলির এনএভি (নেট অ্যাসেট ভ্যালু) বেড়ে যায় যখন ইনডেক্স বেড়ে যায়। আবার ইনডেক্স পড়লে এনএভি-ও পড়ে যায়।
প্যাসিভ ফান্ডসমূহের সুযোগসুবিধা :
১. নির্ঝঞ্ঝাট বিনিয়োগ : এক শ্রেণীর লগ্নিকারীদের কাছে প্যাসিড ফান্ড আকর্ষণীয় হতে পারে। এই তালিকায় যেমন প্রথম বার বিনিয়োগ করছেন এমন মানুষ থাকতে পারেন, তেমনই থাকতে পারেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীও। প্রথম বারের লগ্নিকারীদের কাছে অ্যাক্টিভ ফান্ডের বিপুল সম্ভারের মধ্যে নিজের জন্য সঠিকটি বেছে নেওয়া কঠিন কাজ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্যাসিভ ফান্ড তাঁদের পক্ষে ইকুইটি মার্কেটে পা রাখার জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ বিকল্প হতে পারে। অন্যদিকে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্যাসিভ ফান্ডের ঝুলিতে অনেক সুযোগসুবিধা রয়েছে। যেমন স্মার্ট বিটা বা ফ্যাক্টর-ভিত্তিক বিনিয়োগ কৌশল।
২. স্বল্প খরচ : যেহেতু ফান্ডগুলিকে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করার দরকার পড়ে না, তাই প্যাসিভ ফান্ডের খরচ অ্যাক্টিভ ফান্ডগুলির তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশ কম। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে প্যাসিভ ফান্ডগুলি সাশ্রয়ী বিকল্প।
৩. ডাইভারসিফিকেশন : ব্রড মার্কেট ইনডেক্স-ভিত্তিক প্যাসিভ ফান্ড সমূহ বিনিয়োগকারীদের ডাইভারসিফিকেশনের সুবিধা দেয়। এই ধরনের ফান্ড ইন্ডাস্ট্রি, সেক্টর, থিম, মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ক্যাটেগরি এবং বিনিয়োগ কৌশল প্রভৃতির নির্দিষ্ট ইনডেক্স অনুসরণ করে চলে।
৪. দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স : যেহেতু প্যাসিভ ফান্ড ইনডেক্স মেপে এগোয়, তাই তারা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিসরে ভাল ফল করে, কোনও বিনিয়োগকারীর নিজের উদে্যাগে খাটানো স্টকসমূহের তুলনায়। তাই যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ চাইছেন, তাদের কাছে প্যাসিভ ফান্ড ভাল ‘চয়েস’ হতে পারে।
প্যাসিভ ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে কী কী দিকে নজর রাখবেন?
# যদি ঝুঁকি নিতে না চান, তাহলে এমন প্যাসিভ ফান্ডে লগ্নি করুন যা ব্রড মার্কেট ইনডেক্স মেনে এগোয়। এমন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ফান্ডে লগ্নি করবেন না, যা সেক্টোরাল/থিম্যাটিক বা নির্দিষ্ট কিছু স্মার্ট বিটা কৌশল মেনে এগোয়।
# এমন ফান্ড হাউস চয়ন করুন, যা প্যাসিভ ফান্ডে বড় অ্যাসেট পরিচালনা করে। এদের প্যাসিভ স্ট্র্যাটেজি কার্যকর করতে পারার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।
# মনে রাখবেন, যত কম ট্র্যাকিং এরর এবং ট্র্যাকিং ডিফারেন্স হবে, ততই ফান্ডের ইনডেক্স পারফরম্যান্স ট্র্যাক করা এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় রাখার সক্রিয়তা বাড়বে।
# যে ফান্ডের ট্র্যাক রেকর্ড ভাল (অর্থাৎ ট্র্যাকিং এরর এবং ট্র্যাকিং ডিফারেন্স কম), তার পরিচালনায় তত কম খরচ এবং ফান্ড ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা লাগে।
অ্যাক্টিভ ফান্ডের পক্ষে সওয়াল করার প্রচুর কারণ রয়েছে। কিন্তু বতর্মানে বাজার যতটা দ্রুতগতির, তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্যাসিভ ফান্ডের পক্ষে হাওয়া জোরালোভাবে বইছে। তবে আপনি যদি এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করতে এখনও দ্বিধায় থাকেন, তাহলে ছোট ছোট পা ফেলুন। স্বল্প পরিসরে শুরু করুন। প্যাসিভ ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিজের ইকুইটি অ্যালোকেশনের ১৫-২০ শতাংশ রিজার্ভ করে যাত্রা শুরু করতে পারেন।
বাজার ক্রমশ পরিণত হচ্ছে, আলফা জেনারেশন সংকুচিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্যাসিভ ফান্ড অচিরেই বিনিয়োগ বিকল্পের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। যখন বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, তখনও প্যাসিভ ফান্ড আপনার পোর্টফোলিওকে স্থিতিশীলতা দিতে পারে।
শেষে বলি, কেউ দাবি করতেই পারেন যে প্যাসিভ ফান্ড চালানো সোজা, চয়নে সোজা এবং গতি ট্র্যাক রাখার ক্ষেত্রেও সোজা। কম খরচে পাওয়া যায় বলে এই ফান্ডগুলি আপনার ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিওতে থাকা অ্যাক্টিভ ফান্ডগুলির থেকেও বেশি উপকারী। হালের বাজার যেমন দ্রুতগতির, তা বিচার করে বলা যায়, মিউচুয়াল ফান্ডের পরবর্তী মেগাট্রেন্ডসেটার প্যাসিভ ফান্ডই হতে পারে।