রমেন দাস: শনিবার আচমকা আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইজরায়েল। শ’য়ে শ’য়ে মানুষের রক্তে ভেসেছে প্যালেস্টাইন (Palestine)। কিন্তু হামাস বাহিনীর ইজরায়েলের উপর আক্রমণ আবার ইজরায়েলের হামাস (Hamas) রুখতে রক্তের হোলি খেলায় প্রশ্ন উঠেছে নিরন্তর। কে জঙ্গি, কে অপরাধী, বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আবার! অধিকার কায়েমের লড়াই, দখল-দখল মৃত্যুখেলায় বারবার ধরা দিয়েছে সাধারণের বিপদ! কিন্তু আসলে কী অবস্থায় রয়েছে বর্তমান ইজরায়েল? ঠিক এই আশঙ্কার দোলাচলেই বিপদে পড়েছেন সেদেশে আটকে থাকা ভারতীয়রাও।
কেন্দ্রের তরফে ‘অপারেশন অজয়’ (Operation Ajay India) এর উপর ভর করে ইচ্ছুক নাগরিকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু সিরিয়া থেকে ইউক্রেন (Ukraine), বারবার রক্ত, হিংস্র-কামড় বিপদে ফেলেছে সেই সাধারণকেই! এবারও তার অন্যথা হয়নি। লক্ষ লক্ষ ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের (Palestine) জনতার মতোই বিপজ্জনক আবহে আটকে রয়েছেন এরাজ্যের বহু বাসিন্দাও। ইজরায়েলে রয়েছেন ওয়াইজম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র অভিরূপ মজুমদার-ও। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’– এ তিনি জানালেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অন্দরের কথা।
“আমি ইজরায়েলের ওয়াইজম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল। এটি এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে লেগে রয়েছে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পদধূলি। পড়াশোনার সূত্রে বহুদিন এই দেশে আছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি আগাগোড়া বেশ সুন্দর। রাজনৈতিক বা নানা ধরনের সমস্যা থাকলেও খুব একটা সমস্যায় আমাদের পড়তে হয়নি। শুনলে বিস্মিত হবেন, যে মুহূর্তে আমি কথা বলছি, এই সময়ও কিন্তু খুব একটা বিপদ মনে হচ্ছে না আমাদের। কিন্তু যখন তখন এই বিষয়টি যে কী হয়ে যেতে পারে, বুঝতে পারছেন নিশ্চিত। যা হচ্ছে পুরো প্যালেস্টাইন বা সম্পূর্ণ ইজরায়েলে হচ্ছে এমন নয় বলেই শুনছি। বিভিন্ন সূত্রে। তবে চাপা উত্তেজনা, ভয় অবশ্যই রয়েছে। কোনও দেশে যুদ্ধ বাধলে ঠিক যে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তাই-ই হচ্ছি আমরাও।
[আরও পড়ুন: ‘সহানুভূতি নয়, অধিকারের সঙ্গে ফিরুক শান্তি …’ বলছেন প্যালেস্টাইনের ভূমিপুত্ররা]
এখনও পর্যন্ত গাজা (Gaza) বা ওই স্থানের কাছের কিছু স্থান ছাড়া বিপদ মধ্য ইজরায়েল পর্যন্ত পৌঁছয়নি। কিন্তু আশঙ্কা রয়েছে। যেকোনও মুহূর্তে বিরাট বিপদ আসতেই পারে। কিন্তু যেহেতু আমরা গাজা সীমান্ত থেকে অনেক দূরে রয়েছি। তাই, এই সব শহরে এখনও কোনও বিপদের আভাস নেই। ইজরায়েলের সরকার সমস্ত নির্দেশ মেনে চলতে বলেছে। বলা হয়েছে, সাইরেন বা আল্যার্ম বাজলে শেল্টারে আশ্রয় নিতে। সেটা করলে বিপদ নেই আর! যদিও এখানে আমরা যাঁরা ভারতীয় (Indian In Israel) ছাত্র রয়েছি, সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চলছে। অনেকেই দেশে ফিরতে চাইছেন। আমিও দেশে ফিরছি খুব শীঘ্রই। দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে শুনছি। দেশে ফিরব আমরাও। এই যুদ্ধ আরও বড় হতে পারে। সকলকে চিন্তা করতে বারন করছি। কিন্তু যে পরিস্থিতি রয়েছে সামগ্রিকভাবে তা খুব চিন্তায় না হলেও উদ্বেগের। আশঙ্কার। আমাদের পরিবার এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভেঙে পড়বে, চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই হবে। কিন্তু আমি আবার বলব, আমরা ভারতীয়রা শুধু নই, ইজরায়েলের গাজা বাদে বাকি অংশ যথেষ্ট সুরক্ষিত রয়েছে এখনও। এখানকার সেনা খুবই শক্তিশালী। চেষ্টা চলছে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার। এই অন্ধকার একদিন কাটবেই, ফের ইজরায়েলের ভূমিতেই পড়াশোনার স্বপ্নপূরণ হবে আমারও।”
[আরও পড়ুন: ‘নিগ্রহের’ প্রতিবাদ! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরনায় খোদ উপাচার্য]
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) অভিরূপ মজুমদার-সহ ভারতের একাধিক পড়ুয়া কেন্দ্রের ‘অপারেশন অজয়’ (Operation Ajay) এর বিশেষ বিমানে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।