সুপর্ণা মজুমদার: নায়িকা হতে এসেছিলেন, হয়ে গেলেন আস্ত সিনেমা। ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ (Gangubai Kathiawadi)। এই নামেই সিনেমা তৈরি করেছেন সঞ্জয় লীলা বনশালি (Sanjay Leela Bhansali)। নাম ভূমিকায় আলিয়া ভাট। ছবি সম্পর্কে কিছু লেখার আগে একটি কথা জানানো প্রয়োজন। ছবির ট্রেলার দেখার পর আলিয়ার উপর তেমন ভরসা তৈরি হয়নি। মনে হয়েছিল, কামাথিপুরার ক্যুইনের ভূমিকায় মাধুরী দীক্ষিত, তাব্বু কিংবা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো নায়িকা হলে বোধহয় বেশ মানাত। এই চিন্তার উপরই মোক্ষম আঘাত হেনেছেন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট (Alia Bhatt)। নিজের অভিনয়ের জোরেই গাঙ্গুবাই হিসেবে মন জয় করেছেন তিনি।
ব্যারিস্টারের মেয়ে গঙ্গা (গাঙ্গুবাইয়ের আসল নাম)। বলিউডের নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রেমিক রমণিকের হাত ধরে ঘর ছাড়ে। টাকার বিনিময়ে গঙ্গাকে পতিতাপল্লিতে বেচে দেয় রমণিক। শরীর বেচার পেশায় এসে গঙ্গা হয় গাঙ্গুবাই। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে হয়ে ওঠে কামাথিপুরার একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী।
[আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে কী মত ভারতের কমিউনিস্টদের? বিবৃতি দিল সিপিএম]
প্রথমে ছবিটি ‘হীরা মাণ্ডি’ নামে তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন বনশালি। আর নায়িকা হিসেবে ভেবেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে। প্রিয়াঙ্কা হয়তো ভাল অভিনয় করতেন। তবে আলিয়ার কাছে এমন চরিত্র চ্যালেঞ্জিং ছিল। বলা যায়, রিস্ক নিয়েই এই চরিত্র করেছেন আলিয়া। বেশ্যালয়ের মালকিন হিসেবে যে মেজাজ প্রয়োজন তা কি তিনি আদৌ ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন? নিজেকেই এ প্রশ্ন করেছিলেন অভিনেত্রী। তাই বনশালি যখন তাঁকে গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, উত্তর না দিয়েই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। শান্ত মনে ভেবে তবেই বনশালির প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন আলিয়া। আর তাতেই বাজিমাত করেছেন।
নিজের শরীরী ভাষা, কথা বলার ভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন আলিয়া। প্রতিটি দৃশ্যে ক্যামেরার সামনে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন। এমনিতে সঞ্জয় লীলা বনশালির ছবির মানেই লার্জার দ্যান লাইফ। এ ছবিতেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। নিজের লং শট, টিল্ট আপ ও টিল্ট ডাউনের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। কালার টোন নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করেছেন পরিচালক। তবে কিছু জায়গায় অযথা গান দিয়ে ভরানো হয়েছে। আবার বেশ্যালয়ের নিষ্ঠুরতাও যেন কিছুটা রাখঢাক করে দেখানো হয়েছে।
গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্র বেশ গৌরবান্বিত করেই দেখিয়েছেন পরিচালক। আর তা করতে গিয়ে ছবির ক্লাইম্যাক্স যেন বড্ড ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। আফসান হিসেবে শান্তনু মহেশ্বরীর বিশেষ কিছু করার ছিল না। রহিম লালার ভূমিকায় অজয় দেবগন অনবদ্য। সীমা পাহওয়া, ইন্দিরা তিওয়ারি নিজেদের ভূমিকা পালন করেছেন মাত্র। তবে রাজিয়াবাই হিসেবে বিজয় রাজকে যেন সুযোগই দেওয়া হল না। অভিনেতার অভিনয় প্রতিভা গাঙ্গুবাইয়ের গৌরব বাড়াতেই উৎসর্গ হয়ে গেল। সবমিলিয়ে এ ছবিতে একটু বেশি নম্বর শুধুমাত্র আলিয়া ভাটের জন্যই দেওয়া যেতে পারে।
- ছবি – গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি
- অভিনয়ে – আলিয়া ভাট, অজয় দেবগন, শান্তনু মহেশ্বরী, বিজয় রাজ, সীমা পাহওয়া, ইন্দিরা তিওয়ারি, জিম সর্ভ, বরুণ কাপুর
- পরিচালনা – সঞ্জয় লীলা বনশালি