আলাপন সাহা: অনেক দিন পর আবার চেনা শহরে ফেরা। মহম্মদ সামির (Mohammed Shami) সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে মনে হল হয়তো একটু নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছেন। জনান্তিকে বলছিলেন, কলকাতায় এসে কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।
প্র্যাকটিস শেষে বেরনোর সময় শুভমান গিলকে নিয়ে ইডেনের গেটের সামনে তুমুল চিৎকার। কেকেআর (KKR) ব্যাটিংয়ের একটা সময় বড় ভরসা ছিলেন। কিন্তু দু’বছর আগে আইপিএল নিলামের সময় কেকেআর তাঁরে রিটেইন করেনি। কে জানে শুক্রবার ইডেনে নামার পর সেই সব স্মৃতিগুলো শুভমানের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠছিল কি না! নেটে যেভাবে একের পর এক বল গ্যালারিতে ফেলছিলেন, সেটা বাজয় থাকলে উমেশ যাদব, সুনীল নারিনদের ভাগ্যে ভালরকম দুঃখ আছে। ঋদ্ধিমান সাহাকে (Wriddhiman Saha) আবার বেশ খোশমেজাজে পাওয়া গেল।
[আরও পড়ুন: ব্রিজভূষণের জেল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, জানিয়ে দিলেন কুস্তিগির বজরং পুনিয়া]
কেকেআর বনাম গুজরাট টাইটান্স (Gujarat Titans) যুদ্ধের সঙ্গে শনিবার ইডেনে সমান্তরালভাবে আরও একটা যুদ্ধে চলবে। নাইট বনাম প্রাক্তন নাইট। শুভমানের সঙ্গে সামি আর ঋদ্ধিও একটা সময় কেকেআরে খেলেছেন। ঋদ্ধির আবার কেকেআরের বিরুদ্ধে আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরিও আছে। ঋদ্ধি ওসব পরিসংখ্যানক বিশেষ গুরুত্ব-টুরুত্ব দিতে চান না। প্রেস কনফারেন্সে এসে পরিষ্কার বলে গেলেন, ‘‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি যাতে শুরুটা ভাল করা যায়। আমার কাছে টিমই আসল। নিজে সেঞ্চুরি করলাম কিন্তু টিম যদি না জেতে তাতে কী লাভ। তার চেয়ে ভাল যদি পঁচিশ-পঞ্চাশ করি আর তাতে টিম জেতে।’’
আমেদাবাদে শেষ ওভারে কেকেআরকে অবিশ্বাস্যভাবে জিতিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। শনিবাসরীয় যুদ্ধে নামার আগে প্রথম পর্বের রেজাল্ট যে কেকেআরকে আত্মবিশ্বাস দেবে, সেটা বলে দেওয়াই যায়। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে আগের ম্যাচের জয়। হারতে হারতে প্রায় আইসিইউতে ঢুকে যাওয়া নাইটদের যে অক্সিজেন জুগিয়েছে আরসিবি-বধ, তা লিখে দেওয়াই যায়। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের টিমকে অনেক বেশি চনমনে দেখাচ্ছিল। কেকেআরের সহকারী কোচ জেমস ফস্টার এসে রীতিমতো হুঙ্কারের সুরে শুনিয়ে গেলেন, তাঁদের টিম ভয়ডরহীন ক্রিকেটই খেলবে। বলছিলেন, ‘‘যদি ব্যাটিং ইউনিটের কথা বলেন, তাহলে সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে।’’
আসলে কেকেআরের এখন জীবন-মৃত্যুর উপত্যকায় এসে দাঁড়িয়েছে। একটু এদিক থেকে ওদিক হওয়ার অর্থ প্লে-অফ প্রায় মৃতপ্রায় হয়ে যাবে নীতীশ রানাদের কাছে। এহেন লড়াইয়ে নামার আগে সুখের খবর থাকছে নাইট শিবিরে। রহমান্নুল্লাহ গুরবাজ আর শার্দূল ঠাকুর চোট সারিয়ে পুরো সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। কেকেআর অবশ্য আদৌ উইনিং কম্বিনেশনে কোনও বদল আনবে কি না, তা নিয়ে ভালরকম ধোঁয়াশা রয়েছে। একটা বদল হতে পারে ডেভিড ওয়াইজির জায়গায় ফিরতে পারেন গুরবাজ। খেলতে পারেন শার্দূল।
গুজরাট শিবিরের আবহটা আবার সম্পূর্ণ অন্যরকম। সাতটার মধ্যে পাঁচটায় জিতে গুজরাত এমনিতেই লিগ টেবিলের উপর দিকে রয়েছে। শনিবার জিততে পারলে ফের শীর্ষস্থানে চলে যাবেন হার্দিক পাণ্ডিয়ারা। কোচ আশিস নেহরা দলে খুব একটা বদল করতে চান না। এদিনের প্র্যাকটিস যদি বির্চার্য হয়, তাহলে মনে হয় না ক্যাপ্টেন হার্দিক দলে তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটাবেন। এদিন যেভাবে তিন দফায় প্র্যাকটিসে এল গুজরাট টিম, তা বেশ অভিনব। একটা টিম বাস এল ওই দুপুর সওয়া একটা নাগাদ। তাতে খুব বেশি কেউ ছিলেন না। শুভমান, ঋদ্ধি আর ডেভিড মিলার।
পরের দফায় এলেন মহম্মদ সামি, রশিদ খান, বিজয় শঙ্কররা। সবার শেষে গাড়িতে একাকী এলেন হার্দিক। যাঁরা আগে এসেছিলেন তাঁরা প্র্যাকটিস শেষ করে ফিরলেও সবার আগে। শোনা গেল এরকম দফায় দফায় প্র্যাকটিসে আসার বিশেষ একটা কারণ আছে। এমনিতেই আইপিএলে ক্রিকেটারদের প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়েছে। তারউপর শনিবার দুপুর ম্যাচ। গরমে যাতে ক্রিকেটাররা নিজেদের তরতাজা রাখতে পারেন, তার জন্যই এরকম অভিনব সিডিউল রাখা হয়েছিল। একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে, প্রথম পর্বের হারের বদলা নিতে হার্দিকরা ভালরকম তেতে।
শেষমেশ ইডেন কী দেখবে? শুভমানের রোষের সঙ্গে রশিদ ঘূর্ণি নাকি বিরাটদের দুরমুশ করে আসার ফর্মটাই ধরে রাখবেন জেসন রয়রা। দেখাই যাক না। অপেক্ষা তো আর কয়েক ঘণ্টার।