সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাবুলে কায়েম হয়েছে তালিবানের (Taliban) শাসন। ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে মার্কিন ফৌজ। এহেন পরিস্থিতিতে যুদ্ধজর্জর দেশটিতে আতঙ্কের আরও এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)। বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় সংগঠনটি। এবার জেনে নেওয়া যাক এই জেহাদি দলটির খুঁটিনাটি তথ্য।
ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) আসলে কী?
নাম থেকেই স্পষ্ট যে মূল ইসলামিক স্টেট বা ‘ইসলামিক স্টেট ওফ ইরাক এন্ড সিরিয়া’-র (ISIS) শাখা সংগঠন হচ্ছে ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) বা ISIS-K । এর যোদ্ধারা, নিহত ISIS প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির অনুগামী। এক্ষেত্রে খোরাসান বলতে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের কিছু অংশকে বোঝায়। মূলত আফগানিস্তানের নানগরহার প্রদেশেই জেহাদি সংগঠনটির মূল ঘাঁটি। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করাই ISIS (K) সংগঠনের মূল লক্ষ্য। তাজিকিস্তান,উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিতে শিকড় ছড়ানোর চেষ্টা করছে তারা।
কখন তৈরি হয় ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)?
২০০৪ সালে ISIS জঙ্গি দলটির সূচনা করে আবু মুসাব আল-ঝারকাওই নামে জর্ডনের এক কুখ্যাত জেহাদি। ২০০৬ সালে ইরাকে মার্কিন বিমান হানায় মৃত্যু হয় তার। তারপর সংগঠনের রাশ ধরে আবু আয়ুব আল মাসরি ও পরবর্তীতে আসে আবু বকর আল বাগদাদি। তারপর ২০১৪-১৫ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া (ISIS)। সেই সময় থেকেই ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানের খোরাসান প্রদেশে জন্ম নেয় ISIS-K। ইসলামের হয়ে জেহাদের নামে সংগঠনটি এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ২০১৫ সাল থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার নেতৃত্বে থাক মিত্রবাহিনীর উপর হামলা চালাতে শুরু করে তারা।
[আরও পড়ুন: Afghanistan Blast: কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের নেপথ্যে পাকিস্তানের ‘মানসপুত্র’ ফারুকি!]
কার নেতৃত্বে চলছে ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)?
আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়ার পর সংগঠনটির প্রথম প্রধান বা ‘আমির’ ছিল হাফিজ সইদ খান নামের এক পাকিস্তানি নাগরিক। তখন থেকেই লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ ও আল কায়দার মতো পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা শুরু হয় খোরাসানের। আর গোটাটাই হয় কুখ্যাত পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নেতৃত্বে। তারপর দলটির দায়িত্ব নেয় আবু ওমর খোরাসানি। ২০২০ সালের মে মাসে খোরাসানিকে গ্রেপ্তার করে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী। তারপর থেকে কাবুলের পুল-ই-চারখি জেলেই ছিল সে। গত রবিবার অর্থাৎ ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে তালিবান। তার দু’দিন পরেই ওমর খোরাসানিকে জেল থেকে বের করে হত্যা করে তালিবান জঙ্গিরা। রাষ্ট্রসংঘের এক রিপোর্ট মোতাবেক আবু ওমর খোরাসানি ওরফে মওলাই জিয়াউল হকের জায়গায় এবার ইসলামক স্টেট খোরাসান শাখার প্রধান হয়েছে মওলাই আসলাম ফারুকি।
কতটা শক্তিশালী ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)?
আমেরিকার প্রতিরক্ষা গবেষণা সংক্রান্ত সংস্থা ‘Strategic and International Studies’-এর মতে, ২০১৭-১৮ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের উপর অন্তত ১০০টি হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)। একই সময়ে মার্কিন, আফগান ও পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে অন্তত ২৫০টি হামলা চালিয়েছে সংগঠনটি। এর মধ্যে কাবুলের গুরুদ্বারে শিখদের উপর হামলা অন্যতম। ওই হামলা ২৭ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া, কাবুল বিমানবন্দর ও ২০২০ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে রকেট হামলা চলে তারা। এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে ১৫০০ থেকে ২০০০ আইএস (খোরাসান) জঙ্গি রয়েছে বলে খবর।
তালিবান ও ইসলায়ক স্টেট (খোরাসান)-এর মধ্য সংঘাত কেন?
তালিবান ও ইসলামিক স্টেট (খোরাসান) দুই গোষ্ঠীই মূলত শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পক্ষে। নিজেদের মতো ইসলামের ব্যাখ্যা করে ইসলামীয় আমিরশাহী গড়ে তুলতে চাইছে তারা। যেমন, তালিবরা দেওবন্দি ইসলামের অনুসারী। আর আইএস সৌদি উদ্ভূত সালাফি ইসলামে বিশ্বাসী। প্রায়ই একদলের জঙ্গি ভোলপালটে অন্য দলে যোগ দেয়। ওসামা বিন লাদেনের জমানায় আল কায়দার সঙ্গে সখ্য ছিল আইএস-এর। পরবর্তী আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির সময় দুই সংগঠনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। আল কায়দা ঘনিষ্ঠ তালিবানেরও বিরোধিতা শুরু করে আইএস।
তবে ক্ষমতা দখল নিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই দুই সংগঠনের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। আইএস মনে করে তালিবান আসল খিলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে নয়। আইএসের দাবি, তালিবান আমেরিকার ‘মোল্লা ব্র্যাডলি’ প্রকল্পের অঙ্গ। মৌলবাদীদের মতে, ওই প্রকল্পে জেহাদি সংগঠনের একাংশকে নিজেদের দিকে টেনে সেগুলিকে দুর্বল করে দেয় আমেরিকা। বিশেষত ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের নানগরহার প্রদেশে আইএসের খোরাসান শাখা তৈরি হওয়ার পরেই বিরোধ বাড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় দু’পক্ষের নানা গোষ্ঠীর। কূটনীতিকদের মতে, আইএসের মোকাবিলা করতেই তালিবানকে সমর্থন শুরু করে রাশিয়া। পরে নানগরহর প্রদেশে আমেরিকান অভিযানের ফলে আইএস বড় ধাক্কা খায়।