নব্যেন্দু হাজরা: টানা সাত মাস। আঁধার কাটিয়ে নববর্ষেও আশার সোনালি রেখা দেখতে পাচ্ছে না সোনাপট্টি। মাঝে একটা দিন, তারপরই হালখাতা। কিন্তু পয়লা বৈশাখে এবার অনুষ্ঠান করে নতুন খাতা খোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এমনকী অক্ষয় তৃতীয়াতেও নয়। কারণ, করোনার জেরে টানা লকডাউনে থমকে গিয়েছে সারা দেশ।
করোনার জের অর্থনৈতিক হতাশার ধাক্কাটা বউবাজারের স্বর্ণব্যবসায়ীদের উপর অনেক বেশি। যেহেতু তাঁদের বিপর্যয়ের সূচনা হয় গতবছরের সেপ্টেম্বরে। এই এলাকা দিয়ে ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে মাটি বসে যায়। তাতেই ঘটে যায় ভয়াবহ বিপত্তি। তারপর আর ব্যবসার হাল ফেরেনি সোনাপট্টিতে। বাড়ি ভেঙে পড়া থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের স্থানান্তর। মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কারণে স্যাকরাপাড়া, দুর্গাপিতুরি লেনে ধস নামতে শুরু করে। একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। তাতেই গোটা এলাকা ফাঁকা করে দেয় প্রশাসন। তল্লাটজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোনার গয়নার কারখানা মুহূর্তে চাপা পড়েছিল ভাঙার বাড়ির অন্দরে। সেই আতঙ্কেই নড়ে গিয়েছে এখানকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের প্রায় সাড়ে তিনশো দোকান। বউবাজারের ক্রেতারাও এলাকায় বাড়ি ভাঙার আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নেন সোনাপট্টি থেকে। মাঝে গিয়েছে বিয়ের মরশুম। আবার তা শুরুও হচ্ছে বৈশাখ থেকে। কিন্তু তাতেও বিশেষ লক্ষ্মী আসেনি এখানকার দোকানে। এরপর পরিস্থিতি সামলে ফেব্রুয়ারি মাসে দোকানদাররা ঘুরে দাঁড়ানর চেষ্টা করলে ফের তাদের উপর নেমে আসে করোনার প্রকোপ। ফলে অধরাই থেকে যায় দোকানীদের লক্ষ্মীলাভের আশা। গয়নার বাজার ক্রমাগত মন্দার মুখ দেখতে থাকে। এবারের বৈশাখেও তাই অন্ধকারেই এখানকার কারিগররা। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই স্বর্ণশিল্পীদের আর্থিক সাহায্য শুরু করা হচ্ছে স্বর্ণব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠনের তরফে। শিল্পীদের চিহ্নিত করে অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। ভবিষ্যতে আরও পাঠানো হবে বলেই জানা গিয়েছে। সোনা ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাবেন, যাতে লকডাউন শেষে ব্যবসার জন্য লোন নিলে অন্তত তিন মাস তাঁদের সুদে ছাড় দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন:করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি ‘মাস্টার প্ল্যান’, কাজ শুরু পুলিশ ও পুরসভার]
স্যাকরাপাড়া লেনের এক ব্যবসায়ী জানান, “লকডাউনের জেরে সব সেক্টরের অবস্থা খারাপ। লকডাউন ভাঙলেও মানুষ আগের মতো আর সোনা কিনবেন কিনা তাতেও সন্দেহ রয়েছে। তাই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কে জানে!” অন্যবার পয়লা বৈশাখে গোটা এলাকা গমগম করে। কিন্তু এবার সেখানেই সব থেকে বেশি অন্ধকার। আর এই অন্ধকার পরিস্থিতি শুরু হয়েছে গত বছর থেকেই। লকডাউনের পরেও এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে কারিগরদের জন্য প্যাকেজ দাবি করবেন বলে জানান স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে। এখন দেখার ভবিষ্যতে কবে তাদের লক্ষ্মীলাভ হয়।
[আরও পড়ুন:করোনা নিয়ে অধিকৃত কাশ্মীরে নোংরা খেলা পাকিস্তানের! ফাঁস চাঞ্চল্যকর তথ্য]
The post বিপর্যয় কাটছে না সোনাপট্টির, করোনার কোপে মন্দায় বউবাজারের স্বর্ণব্যবসা appeared first on Sangbad Pratidin.
