অর্ণব দাস: ১০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি! শুনে বিষম খেলেন নাকি? নাহ, জানুয়ারির শেষে কেউ আপনাকে এপ্রিল ফুল করছে না। ঘটনা পুরোটাই সত্যি। ১০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি পাওয়া যাচ্ছে এই ধরাধামেই। তার জন্য আপনাকে যেতে হবে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার হিজলপুকুর বটতলা নিউ বিরিয়ানি সেন্টারে। নতুন বছরের গোড়া থেকেই সেখানে লম্বা লাইন। নতুন গজিয়ে ওঠা দোকানে এত্ত লম্বা লাইন! দেখেই কৌতূহল হয়েছিল স্থানীয়দের। খোঁজ নিয়ে দেখতেই তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। তারপর বাকিটা ইতিহাস। ১০ টাকার বিরিয়ানি খেতে এখন দোকানের সামনে সকাল-সন্ধে ভিড় লেগেই থাকে।
কিন্তু ১০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি বিক্রি করা কি আদৌ সম্ভব? অলীক মনে হলেও এই অসাধ্যসাধন করেছেন বাবু কর। তিনি নিউ বিরিয়ানি সেন্টারের মালিক। কীভাবে পারলেন? প্রশ্ন করতেই মিলল চমকপ্রদ তথ্য। জানা গেল, এই ১০ টাকার বিরিয়ানি আসলে তৈরি করা হয়েছে মূলত ছোটদের জন্য। আরও ভাল করে বলতে গেলে, ছোট স্কুলপড়ুয়াদের জন্য। তাই পরিমাণও সাধারণ ফুল প্লেট বিরিয়ানির চাইতে কিছুটা কম। মাংসের পিস ছোট। কিন্তু, তাতে কী? ১০ টাকায় তাই যে অনেক।
[আরও পড়ুন: ফেসবুক-টুইটারের রোজগার নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রর, কড়া নিয়ম ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্যও]
হাবড়ার হিজল পুকুরে ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন বাবু কর। ২০১৩ সালে রান্নার কাজ করতে গোয়ায় যান তিনি। সেখানে পাঁচ বছর কাজ করার পর ২০১৮ সালে ফিরে সল্টলেকের একটি রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজে যোগ দেন। লকডাউনের আগে পর্যন্ত সেখানেই কাজ করতেন তিনি। এরপর করোনা এসে সবকিছু ওলটপালেট করে দেয়। ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের ব্যবসা খোলার। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। শুরু করেন নিজের বিরিয়ানির দোকান।
[আরও পড়ুন: সরস্বতীপুজোয় বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন বাসন্তী মালাই, রইল সহজ রেসিপি]
প্রথমে দোকানে ফুল প্লেট চিকেন বিরিয়ানি ৭০ টাকায়, মাটন বিরিয়ানি ১০০ টাকায়, হাফ প্লেট চিকেন বিরিয়ানি ৫০ টাকায়, মাটন বিরিয়ানি ৮০ টাকায় এবং আলু ও ডিম বিরিয়ানি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর দোকানের পাশেই স্কুল থাকায় পড়ুয়ারা আসত, কিন্তু তাদের সামর্থ্যে না কুলোনোয় বিরিয়ানি জুটত না। মূলত স্কুলপড়ুয়াদের কথা ভেবেই তিনি ১০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি বিক্রির বন্দোবস্ত করেন। পরিমাণ কম হলেও বাবুর বিরিয়ানিতে চিকেন, বাসমতী চাল, আলু সবই রয়েছে। স্বাদের দিক থেকেও কোনও খামতি নেই। ১০ টাকায় যে পরিমাণ দেওয়া হয়, তাতে টিফিনে সহজেই স্কুলের বাচ্চাদের পেট ভরে যায়। তবে ১০ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রি করে লাভ না হলেও বাকি বিরিয়ানি বিক্রি করে তাতেই লাভ পুষিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
১০ টাকার বিরিয়ানির গল্প এখন স্কুলপড়ুয়াদের মারফত মুখে মুখে বহুদূর ছড়িয়েছে। ফলে এখন রোজই বাবুর দোকানের সামনে লাইন। প্রথম ব্যবসায় হাত পাকিয়ে দৃশ্যতই উচ্ছ্বসিত তিনি। জানালেন, ‘‘১০ টাকার চিকেন বিরিয়ানিতে ২০ গ্রামের মাংসের পিস দেওয়া হয়। বাচ্চাদের জন্য এই বিরিয়ানি শুরু করলেও এখন সব বয়সি ক্রেতারাই ভিড় করছেন। দিনে প্রায় ৫০০ জন ক্রেতা ১০ টাকার চিকেন বিরিয়ানি কিনছেন।’’