শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: বাবরশা! হোয়াট ইজ দিস? গত জানুয়ারি মাসে শীতের সময় হুগলির কামারপুকুর যাওয়ার পথে চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই মোড়ে গাড়ি থামিয়ে চা পান করতে নেমেছিলেন সস্ত্রীক জন স্টিফেন। সুদূর মার্কিন মুলুক থেকে এসেছিলেন তিনি। ক্ষীরপাই হালদার দিঘির মোড়ে দোকানের শো কেশে সাজানো বিচিত্র ওই খাবারের ধরণ দেখে দোকানিকে এই প্রশ্নই করেছিলেন। জন স্টিফেন একজন লোকসংস্কৃতি গবেষক। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গবেষণা করছেন লোকসংস্কৃতি নিয়ে। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ক্ষীরপাইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী তনুপ ঘোষ। তিনি জন স্টিফেনকে ভাঙা ইংরেজিতে বুঝিয়েছিলেন, এ নেম অফ এ সুইট মেড অফ……।
সেই বাবরশার জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) তকমা পেতে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করল ক্ষীরপাই পুরসভা কর্তৃপক্ষ ও ক্ষীরপাই পুরসভার ব্যবসায়ীরা।
ক্ষীরপাই পুর শহর বিখ্যাত তার বাবরশা মিষ্টির জন্য। ক্ষীরপাই পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন ধরনের মিষ্টি ভূ-ভারতে নেই। তাহলে তার জিআই তকমা পাবে না কেন? বলাই বাহুল্য, বাবরশা মিষ্টির জিআই তকমার দাবি কয়েক বছরের। ক্ষীরপাই পুর শহর প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন। তার আগে থেকেও প্রাচীন জনপদ হিসাবে খ্যাত ক্ষীরপাই। এখানে আর্মেনিয়ানরা কুঠি বানিয়েছিল ইংরেজ আমলে। ময়দা ও ঘিয়ের ময়াম দিয়ে মেখে ঘিয়ে ভাজা শত ছিদ্র এই মিষ্টির জন্ম নিয়ে নানা কথা প্রচলিত।
[আরও পড়ুন: গেরুয়া বিতর্কের মাঝে মেয়র ফিরহাদের বাড়িতে অরিজিৎ সিং, তুঙ্গে রাজনৈতিক জল্পনা]
ক্ষীরপাই পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭৪০ থেকে ১৭৬০ সালে বর্গির আক্রমণ ঠেকাতে এডওয়ার্ড বাবর নামে এক ব্রিটিশ প্রশাসক এসেছিলেন ক্ষীরপাইয়ে। তখন সেই জনপদের অলিতে-গলিতে তৈরি হত এই মিষ্টি। কোনও নাম ছিল না। কথিত আছে, এডওয়ার্ডের দাপটে বর্গি হানা থেমে গিয়েছিল। খুশি হয়ে এক মিষ্টি ব্যবসায়ী নাকি তাঁকে ঘিয়ের কড়া পাকে ভেজে এই মিষ্টি খাইয়ে ছিলেন। তাতেই এডওয়ার্ডের দিল খুশ হয়ে যায়। তাঁর নামেই নাকি সেই মিষ্টির নাম হয়ে যায় বাবরশা। যদিও এই নামকরণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
কিন্তু নামে কি এসে যায়! বললেন ক্ষীরপাই পুরসভার টানা ৩০ বছরের চেয়ারম্যান দুর্গাশংকর পান। তিনি বলেন, “এই ধরণের মিষ্টি ভূ-ভারতে নেই। তাই আমাদের অনেক দিনের দাবি এই মিষ্টির জিআই তকমার। গত কয়েক বছর ধরে আমরা চেষ্টা করে চলেছি। এখানকার ব্যবসায়ীরাও অনেক দিন থেকে দাবি করে আসছেন।”
[আরও পড়ুন: ‘শিলিগুড়ির বিধবাকে রক্ষিতা বানিয়ে ফুর্তি’, সৌমিত্রর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুজাতা]
মূলত রসগোল্লার জিআই তকমার বিতর্কের সময়ই এই বাবরশার জিআই তকমার বিষয়টিও সামনে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, “সব বাধা কাটিয়ে শুক্রবার বাবরশা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র আমরা তুলে দিয়েছি জেলা প্রশাসনের হাতে। আর তার কপি দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের কাছেও।” ক্ষীরপাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তথা পুর শহর তৃণমূল সভাপতি বীরেশ্বর পাহাড়ি বলেন, “ক্ষীরপাই শহরের ব্যবসায়ীরা অনেক দিন ধরেই বাবরশা মিষ্টির জিআই তকমার দাবি করে আসছেন। আমরাও চাই এই মিষ্টি জিআই তকমা পাক। জিআই তকমার জন্য সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে।”