shono
Advertisement

ফুলে ওঠা নখে প্রচণ্ড ব্যথা? মারাত্মক হতে পারে এই সমস্যা, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর

নখকুনি বলে আমরা যা জানি, সেটা আসলে নখের কোণে সংক্রমণ।
Posted: 09:01 PM Nov 15, 2022Updated: 09:01 PM Nov 15, 2022

লাল, ফুলে ওঠা জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা। চলতি কথায় নখকুনি বলে আমরা যা জানি, সেটা আসলে নখের কোণে সংক্রমণ। জল ঘাঁটলেই বাড়ে। সঠিক চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব। বললেন নাইটেঙ্গল হসপিটালের কনসালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অশোক ঘোষাল। তার কথা লিপিবদ্ধ করলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।

Advertisement

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে হাত ও পা উভয় স্থানের নখের যত্ন ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে রোগজীবাণু দানা বাঁধার সুযোগ পায় না, যা বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নখের যত্ন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তার থেকে সৃষ্ট ইনফেকশন থেকে নখকুনির সৃষ্টি হয়।

কী হয় আসলে?
নখের যে তিনদিক চামড়া দিয়ে ঘেরা থাকে সেখানে চামড়ার পাতলা সাদা পর্দা নখের উপর আটকে থাকে যাকে কিউটিকল বলে। অতিরিক্ত জল ব্যবহারের ফলে এই কিউটিকলের ঢাকনা ভিজে গিয়ে নরম হয়ে ছিঁড়ে যায়। তখন চামড়া ও নখের ফাঁকে জল, ডিটারজেন্ট, বাসন মাজার লিকুইড, সাবান জল, বাথরুম পরিষ্কার করার জিনিস প্রভৃতি যার মধ্যে কোরোসিভ জাতীয় কেমিক্যাল থাকে, তার দ্বারা চামড়ায় ক্ষয় হয়। ফলে কিউটিকল নষ্ট হয়ে নখকুনি সৃষ্টি করে। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় প্যারোনাইকিয়া (Paronychia) বলা হয়।

আবার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের জন্য নখের কোণের চামড়া শুকিয়ে যায়, তখন সেটা খসখসে, শক্ত ও পাকিয়ে যাওয়ায় হাত বা দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়লে, হাতের নখ বা নখের পাশের চামড়া তুলে দেওয়ার প্রবণতা থাকলেও নখকুনি হয়। পেডিকিউর ও ম্যানিকিওরের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি কম নয়। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা নখের উপরের ও ধারের অংশ, কোণগুলো পরিষ্কার করার সময় কিউটিকল আহত করে এবং আস্তরণ সরে গিয়ে জল ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ক্রমাগত ঢুকে নখকুনি হয়।

[আরও পড়ুন: ভরসা স্টেম সেল, ভ্রূণ হত্যা ঠেকাবে বাংলার নতুন প্রযুক্তি, দিশা দেখালেন বাংলার চিকিৎসকরা]

কখন বুঝবেন?
নখের কিউটিকল যখন সমান ও স্বচ্ছ থাকার পরিবর্তে একটু ভেঙে যেতে থাকে বা অনিয়মিত আকার ধারণ করতে শুরু করে, সেটিই হল নখকুনির প্রাথমিক লক্ষণ। প্রথমত, নখের কোণে জল, সাবান বা অন্যান্য কেমিক্যাল লাগার ফলে সংক্রমণ হয়ে নখের কোনের লালচে ভাব কালচে রঙে রূপান্তরিত হয়। সংক্রমণ বেড়ে ক্ষতস্থানে ঘষা লাগলে বা কোনও কিছু ধরতে গেলে, ভিতরে চাপ পড়লে ব্যথা এবং রস বা পুঁজ নির্গত হয়।

অ্যাকিউট প্যারোনাইকিয়ার ক্ষেত্রে নখের গোড়ার দিকে চামড়ার নিচে সাদা শক্ত পুঁজ জমে ফুলে থাকে যা ভীষণ বেদনাদায়ক হয়। ক্রনিক প্যারোনাইকিয়ায় নখের তিনদিকে ও চামড়ার ভাঁজে হালকা লালচে ও ফোলা ভাব, সামান্য ব্যথা অনুভূত হয়। ফলে নখ ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না। নখ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ না হলেও একদম অস্বচ্ছও নয়। সুস্থ নখের ভিতর থেকে লালচে রং, রক্তনালি, টিস্যু দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ইনফেকশন হলে নখের রং হলদেটে বা কালচে রঙের হয়, অস্বচ্ছতা থাকে। নখের ডগায় প্রদাহ হলে নখ খানিকটা নিচের জায়গা থেকে সরে যেতে পারে। ক্রনিক প্যারোনাইকিয়া দীর্ঘদিন ধরে থাকে। বিশেষ করে যাঁরা জল ঘাঁটার কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ জলের ব্যবহারের ফলে কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অ্যাকিউট প্যারোনাইকিয়ায় পরিণত হয়।

চিকিৎসা করলে সারে?
অ্যাকিউট প্যারোনাইকিয়ায় নখের পিছনে পুঁজ জমে আঙুলে দপদপে ব্যথা হয়। তখন পুঁজকে পরিষ্কার করা, গরমজলে ফোটানো সুচ বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে ফুটো করে, প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে ব্লেড দিয়ে স্থানটিতে সামান্য কেটে পুঁজ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ সেবন করা জরুরি। ব্যথার জন্য অ্যান্টাসিডের সঙ্গে পেইনকিলার জাতীয় অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ওষুধ দিতে হবে এবং অবশ্যই ক্ষতস্থানে গরম জলে ডেটল, বিটাডাইন সহযোগে একটু চাপ দিয়ে সেঁক দিতে হবে যাতে আবার পুঁজের সৃষ্টি না হয়। অ্যন্টিফাংগাল মলম লাগানো উচিত।

ক্রনিক প্যারোনাইকিয়ায় দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকায় জল ও অন্যান্য রাসায়নিকের অহেতুক ব্যবহার কমাতে হবে নচেৎ এর প্রদাহ কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রয়োজনে জলের কাজ করলে শুকনো পরিষ্কার রুমাল বা তুলো দিয়ে হাত ও পায়ের নখের কোণ চেপে জল বের করে মুছে নেওয়া উচিত। সম্ভব হলে বাজারচলতি ভাল সহজলভ্য ময়শ্চারাইজার, ভেসলিন জাতীয় লুব্রিক‌্যান্ট ওয়াটার রিপেলেন্ট ক্রিম হাতে লাগানো থাকলে জলের সঙ্গে ত্বকের সাক্ষাৎ কম হয় ও জল নখের ভিতরে কম প্রবেশ করে।

নখের সাধারণ যত্ন কীভাবে নেবেন? 
হাত ও পায়ের নখের সুস্বাস্থ্য সর্বদা বজায় রাখতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় জলের কাজ, কোরোসিভ জাতীয় রাসায়নিকের ব্যবহার খুব কম করতে হবে।
নখ কামড়ানো ও চামড়া টেনে ছেঁড়া অনুচিত।
পার্লারের চেয়ে বাড়িতেই পেডিকিওর ও ম্যানিকিওর করা বেশি স্বাস্থ্যসম্মত‌। যন্ত্রপাতি ভাল করে গরম জলে ফুটিয়ে প্রত্যেককে আলাদা করে ব্যবহার করাতে হবে। পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, নখের ধার বা কিউটিকলে যেন আঘাত না লাগে।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
খুব কম মাত্রায় জলের ব্যবহার নখকে রক্ষা করে।

[আরও পড়ুন: শীত পড়তেই ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠছে? এই চার মরশুমি ফলেই হবে মুশকিল আসান]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement