সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেরলের (Kerala) কাসারগোর। পাঁচ বছর আগে দক্ষিণের এই জেলায় এক পরিবারের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল স্থানীয় থানায়। পরিবারের দাবি ছিল, কেরল থেকে মুম্বই যাওয়ার পর, তাঁদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজের নাম আবদুল রশিদ, তাঁর স্ত্রী আয়েশা এবং তাঁদের এক সন্তান। পরিবারের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ জানতে পারে, আবদুল ও তাঁর পরিবার মুম্বই গিয়েছেন ঠিক। কিন্তু তারপরে কী হল? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর শত তদন্তের পরেও জানা যাচ্ছিল না। কেরল পুলিশের তরফে বিষয়টি জানানো হয় এনআইএ (NIA) গোয়েন্দাদের। এই ঘটনার নতুন করে তদন্ত শুরু করে এনআইএ।
১ আগস্ট, ২০১৬। দিল্লির বাটলা হাউস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক মহিলাকে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ওই মহিলার নাম ইয়াসমিন জাহিদ। ২৯ বছরের এই মহিলাকে আরও জেরা করে চোখ কপালে ওঠে এনআইএ গোয়েন্দাদের। ২০১৭ সালে বিশেষ আদালতে দেওয়া চার্জশিটে এনআইএ দাবি করে, কেরলের আয়েশাই দিল্লির ইয়াসমিন। কোলের শিশুকে নিয়ে আফগানিস্তান যাচ্ছিলেন ইসলামিক স্টেট খোরসানে (IS-K) যোগ দিতে। ইরাক এবং সিরিয়ায় জেহাদি হয়ে লড়াই করতে।
[আরও পড়ুন: নয়া রেজিস্ট্রেশন সিরিজ ঘোষণা কেন্দ্রের, ভিন রাজ্যে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত এখন আরও সুবিধাজনক]
গোয়েন্দাদের দাবি, শুধু আয়েশা ওরফে ইয়াসমিন নন, গত পাঁচ বছরে কেরল এবং মহারাষ্ট্র থেকে আইএস-খোরাসানে যোগ দিতে এমন একাধিক পরিবার আফগানিস্তান গিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, নিম্নবিত্ত মুসলিম পরিবারের সামনে দেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন। আফগানিস্তান নিয়ে যাওয়ার আগে ভারতে থেকেই তাদের বিভিন্ন ভাবে মগজ ধোলাই করা হয়েছে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। এক পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে আইএস খোরাসানে যোগ দিয়েছিল প্রায় ২১ পরিবার। যাঁদের বেশির ভাগ কেরলের বাসিন্দা।
নানগড়হর। পাক-আফগান সীমান্তের এই এলাকায় ঘাঁটি জেহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেট খোরসানের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, কৌশলগত দিক থেকে নানগড়হরের মাহাত্ম্য অনেক বেশি। কারণ, এই এলাকা ঘিরে রয়েছে উত্তরপূর্ব ইরান, উত্তর আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান। ২০১৬ সালে ইয়াসমিনকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই গোয়েন্দাদের নজর আছে এই জঙ্গি সংগঠনের উপরে। নজর আরও রাখতে হয়েছে, কারণ একসময়ে আফগানিস্তানের এই জেহাদি সংগঠনের হাত শক্ত করেছিল লস্কর, জইশের মতো পাক জঙ্গিরা। এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে ধরপাকড়ে প্রায় ১৪০০ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছিল তৎকালীন আফগান সরকারের সামনে। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় বলেও দাবি করা হয়।
[আরও পড়ুন: Dooars Tourism: সবুজে ঘেরা ডুয়ার্স ঘোরাবে কাচে মোড়া বিশেষ ট্রেন, খরচ কত জানেন?]
কূটনৈতিক মহলের মতে, কাবুলের জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট খোরসান। এই ঘটনা ভারতীয় গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজকে আরও পুরু করল। কারণ, গত দু’বছরে ধীরে ধীরে খোরসানের কোমর কার্যত ভেঙে দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার মার্কিন সেনার উপর পালটা আঘাত করে খোরসান জঙ্গিরা ফের নিজেদের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দিল।