সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সাধুর পর্দাফাঁস। মাদুলি, তাবিজ নিলেই মিলবে চাকরি। রোগমুক্তি হবে নিমেষেই। এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে পূজার্চনার নামে আশ্রমের অন্দরে মহিলা ভক্তদের উপর যৌন নির্যাতন চালাত এক সাধু। শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা থানার অচিন্ত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের আই প্লট এলাকার বিষ্ণুপুরের সাধুর কুকীর্তির কথা ফাঁস করেন গ্রামেরই এক তরুণীর মা ও মামা। ঘটনা জানাজানি হতেই সাধুকে গাছে বেঁধে শুরু হয় গণধোলাই। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের হাত থেকে ওই সাধু ও তাঁর দুই সাগরেদকে উদ্ধার করে আটক করে। নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষ্ণুপুরে হঠাৎই গজিয়ে উঠেছিল ‘মহানমিস্থলি আশ্রম’ নামে একটি আশ্রম। সেখানে এলাকার বহু মানুষের যাতায়াত ছিল। আশ্রমের প্রধান মহারাজ অমলেশ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেই স্থানীয়দের অভিযোগ। মহারাজ নিজেকে কৃষ্ণের অবতার বলে পরিচয় দিত। আশ্রমে আড়ম্বর করে কৃষ্ণের পুজো হত। তন্ত্রমন্ত্রের কথা বলে মানুষের রোগ ও শোক থেকে মুক্তির জন্য মাদুলি, জলপড়া দিত ওই মহারাজ। অভিযোগ, অমলেশ চক্রবর্তী ও তার দু’জন সাগরেদ কালিপদ সাউ ও রঞ্জন মাইতি মিলে আশ্রমে আসলে মধুচক্র চালাত। বাসিন্দাদের দাবি, ওই আশ্রমে অবিবাহিতা বহু মহিলার আসা-যাওয়া ছিল। কৃষ্ণের নাম করে ওই মহিলাদের দিয়ে নানা কুকর্ম করানো হত।
[আরও পড়ুন: আল কায়দার নির্দেশে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ, মুম্বই থেকে ধৃত ডায়মন্ড হারবারের ২ যুবক]
কিছু না জেনেই একইভাবে অশ্লীল মেসেজ ও কুপ্রস্তাব পাঠাতে থাকেন সেই সাধু। পর্দাফাঁস হয় তখনই। তরুণীর পরিবার বিষয়টি গ্রামের মানুষকে প্রমাণস্বরূপ দেখায়। তা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। তারপর আশ্রম থেকে সাধুকে ঘাড়ধাক্কা দিতে দিতে বাইরে বের করে এনে চলে গণধোলাই। অভিযুক্তকে গাছে বেঁধে রেখে খবর দেওয়া হয় পাথরপ্রতিমা থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাধু ও তার দুই সাগরেদকে ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে। তিনজনকেই আটক করে নিয়ে আসা হয় থানায়।
[আরও পড়ুন: বাদ নয় জহর! তৃণমূলের রাজ্যসভার নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন সাংসদ]
আশ্রমে যাতায়াতকারী কয়েকজন স্থানীয় মহিলা জানিয়েছেন, মহারাজকে তাঁরা ‘গুরুদেব’ বলেই মানতেন। এসব বিষয়ে কিছুই জানতেন না তাঁরা। এদিকে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সাধু মহারাজ জানিয়েছেন, যে তরুণীর পরিবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তা সঠিক নয়। তরুণীকে আটকে রেখে ও ওই তরুণীকে কিছু বলতে না দিয়েই পরিবারটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই অন্যায়ভাবে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম দিচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে আটক হওয়া অভিযুক্ত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।