সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঠিক যেন 'মৃত্যুপুরী'। চারদিকে ধ্বংসের ছবি স্পষ্ট। এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহ। পোড়া বারুদের গন্ধে বাতাস ভারী। সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝখান থেকে হেঁটে আসছেন এক ব্যক্তি। হাতে জলের বালতি। পরিবারের জন্য একটু পানীয় জল খুঁজতে বেরিয়েছেন তিনি। গত ১০ মাস ধরে হামাস নিধনে গোটা গাজায় রক্তক্ষয়ী অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি হানায় অবশিষ্ট নেই কোনও কুয়ো! এক ফোঁটা জলের জন্য এখন হাহাকার গোটা গাজা জুড়ে।
হামাস জঙ্গিদের নিধনে গাজার হাসপাতাল, স্কুল, ধর্মীয়স্থান, শরণার্থী সর্বত্র হামলা চালানো হচ্ছে। কারণ তেল আভিভের অভিযোগ, ওই জায়গাগুলোতে ঘাঁটি গেড়েছে জেহাদিরা। ফলে উত্তর থেকে দক্ষিণ, যতদিন যাচ্ছে আরও ভয়াবহ হচ্ছে গাজার পরিস্থিতি। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। ঠিক মতো পৌঁছছেনা ত্রাণ। তীব্র হয়েছে খাদ্য সংকট। না আছে পানীয় জল, না আছে সারাদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করার জল। ইজরায়েলি সেনার অভিযানে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সমস্ত কুয়ো। জলের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। প্রকোপ বাড়ছে নানা ভাইরাসের। যার মধ্যে আতঙ্ক ধরাচ্ছে পোলিও-র বাড়বাড়ন্ত। গাজার বিভিন্ন ড্রেন থেকে নেওয়া নমুনায় এর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: গুলিতে রক্তাক্ত, তবু স্ট্রেচারে উঠতে চাননি ট্রাম্প! কেন, জানালেন নিজেই]
এনিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে আহমেদ আল-শনবরী নামে এক প্যালেস্তিনীয় জানিয়েছেন, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির পুরোপুরি ধবংস হয়ে গিয়েছে। সেখানে কোনও কুয়ো নেই। গত ১০ মাস ধরে জল সরবরাহ ঠিকমতো হচ্ছে না। পরিবারকে দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল এনে দেওয়ার জন্য রোজ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন তিনি। কিন্তু উত্তর গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল চষে ফেলেও কোনও কোনও দিন খালি হাতে ফিরতে হয় তাঁকে। এই একই ছবি দেখা যাচ্ছে গাজার অন্যান্য জায়গাতেও। এই সময় তীব্র গরমে একটু পানীয় জলের খোঁজে ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়ায় শিশুরাও।
এনিয়ে রাষ্ট্র সংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ছিল জলসংকট। গাজায় ভূস্তরীয় জলের ৯৭ শতাংশ দূষিত এবং পানের অযোগ্য। গত ১০ মাস ধরে ইজরায়েলের অভিযানে সেই পরিস্থিতি এখন চরমে পৌঁছেছে। এদিকে, ইজরায়েলের অভিযানের ফলে গাজায় তীব্র হয়েছে ওষুধের সংকটও। যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। গাজায় জারি রয়েছে মৃত্যুমিছিল। মৃতের সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছে ৩৮ হাজার। হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে মৃতদেহে। আহতের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে সবকিছু সামাল দিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে। এর মাঝেই গত এপ্রিল মাস থেকে দেখা দিয়েছে ওষুধের আকাল।