shono
Advertisement
Dogs

একথালা ভাতেই ভালো থাকা, ভালোবাসাও! পথকুকুরদের জন্য চালু মিড ডি মিল

পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশনের নয়া বিজ্ঞপ্তিতে মুখে হাসি ফুটেছে স্কুলের কচিকাঁচাদের।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 02:26 PM Jun 22, 2025Updated: 02:29 PM Jun 22, 2025

সুমন করাতি, হুগলি: খাবার তো বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকার। তা না পাওয়াই দুর্ভাগ্য। সেই দুর্ভাগ্য যে কতশত মানবেতর প্রাণীর সঙ্গী, তার ঠিক নেই। কিন্তু এক পৃথিবী, এক সমাজে কেনই বা এমন বিভেদ? সেই বিভাজন মেটানোর সহজ সরল সমাধানও অবশ্য ছিল কবীর সুমনের একটি গানে - 'একটা থালায় চারটে রুটি একটু আচার একটু ডাল, একই থালায় দুজন খাবে, যুদ্ধ হয়ত আসছে কাল।' যুদ্ধ আসুক বা না আসুক, চারটে রুটি আমরা খেলে ওরা কি একটাও পেতে পারে না? পারে বইকী। সেই ব্যবস্থাই তো করেছে পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন। দিন দুই আগে জারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মিড ডে মিলের পুষ্টিকর খাবার এখন থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় পথকুকুরদেরও খাওয়ানো হবে। তাতেই হাসি ফুটেছে কচিকাঁচা আর পশুপ্রেমীদের মুখে।

Advertisement

এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন ছাত্রদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। তাতে মিড ডে মিলের উচ্ছিষ্ট খাবার পথকুকুরদের না দেওয়া-সহ একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশুপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন তাতে আপত্তি জানায়। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই নির্দেশিকায় কুকুর-মানুষ সংঘর্ষ আরও বাড়বে। পথকুকুররা অভুক্ত থাকলে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। যার ফলে পড়ুয়াদের বিপদই বাড়বে। এনিয়ে বিশিষ্ট পশুপ্রেমী মানেকা গান্ধীও গত ২ এপ্রিল স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব চিঠি দিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানান। আশ্রয় হোম অ্যান্ড হসপিটাল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও আপত্তি ওঠে।

অবশেষে গত ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন সংশোধিত নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে পথকুকুরদের খাবার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত নির্দেশিকা শুধু পড়ুয়াদেরই নয়, আমাদের চারপাশের অবহেলিত পথকুকুরদের মুখেও হাসি ফোটাবে। এই নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, মিড ডে মিলের পুষ্টিকর খাবার এখন থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় পথকুকুরদেরও খাওয়ানো হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং মানবিক পদক্ষেপ, যা সমাজে সব জীবের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ববোধকে স্মরণ করিয়ে দেয়। স্কুল ক্যান্টিন বা রান্নাঘর থেকে যে উদ্বৃত্ত খাবার প্রায়শই নষ্ট হয়ে যায়, তা এখন থেকে অভুক্ত কুকুরদের ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহৃত হবে। এটি খাদ্যের অপচয় রোধেও একটি কার্যকর পদক্ষেপ।

পথকুকুরদের আদর! নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের ছুটির পর যখন বাচ্চারা তাদের টিফিন বক্স থেকে অবশিষ্ট খাবার পথকুকুরদের সাথে ভাগ করে নেবে, সেই দৃশ্যটি কতটা হৃদয়গ্রাহী হবে ভাবুন তো! এই ছোট ছোট মানবিক কাজগুলি শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগের ফলে কুকুরদেরও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, তারা পুষ্টি পাবে এবং মানুষের আরও 'বন্ধু' হয়ে উঠবে। এই উদ্যোগ শুরু হচ্ছে হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায়।

এনিয়ে ভদ্রেশ্বরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা তাপ্তি পালিত বলেন, ''উদ্বৃত্ত খাবার প্রায় প্রতিদিনই থাকে। সেগুলো পথকুকুরদের ক্ষুধা মেটালে তো ভালই হয়।'' ধনিয়াখালির একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সমাপিকা সিংহরায়ের কথায়, ''আমাদের স্কুলের মিড ডে মিলের বাড়তি খাবার আমরা এমনিতেই ওদের দিয়ে দিই, নষ্ট করার চাইতে কেউ খেতে পাওয়া ঢের ভাল।'' শ্রীরামপুরের বেলুমিল্কীর প্রাথমিক শিক্ষক সুদর্শন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ''আমাদের স্কুলে বেশ কয়েকটি পথকুকুর থাকে, ছাত্রছাত্রীরাই ওদের দেখভাল করে, খাবার দেয়। ওরাও স্কুল পাহারা দেয়। অচেনা কেউ এলে ডাকাডাকি করে সতর্ক করে। কোনো সমস্যা হয় না।''

আশ্রয় হোম অ্যান্ড হসপিটাল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা স্কুল শিক্ষক বিভাস গুপ্ত বলেন, ''আমরা আশা করি, এই ধরনের মানবিক উদ্যোগ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে পড়বে এবং একটি আরও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।'' সব স্কুল এই নির্দেশিকা রূপায়িত করছে কিনা, তা নজরে রাখার দাবিও উঠেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পুষ্টিকর খাবার এবার পথকুকুরদের জন্যও।
  • তাদের জন্য মিড ডে মিল চালু হচ্ছে, নয়া নির্দেশিকা পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশনের।
Advertisement