সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অ্যানাবেল-ছোট থেকে বড়, সকলের হাড়হিম করতে নামটাই যথেষ্ট। দেখতে মিষ্টি পুতুল হলেও তার কাণ্ড কারখানা মোটেও মিষ্টি নয়। বরং তার কীর্তিকলাপ আত্মারাম খাঁচাছাড়া করতে যথেষ্ট! বলা হয়, পুতুলে ভর করেছে শয়তান! আপাতত আমেরিকার মুডাস কানেক্টিকাটের ‘লরেন ওয়ারেনস অকাল্ট মিউজিয়ামে’ বন্দি রয়েছে সেই 'শয়তান' পুতুল! কিন্তু সত্যিই কি এখনও বন্দি রয়েছে সে নাকি মন্ত্রবন্ধনীর ফাঁস আলগা করে বেরিয়ে পড়েছে সে? ফের নিজের অশুভ শক্তির খেলা দেখাতে তৈরি হচ্ছে অ্যানাবেল? এক্স হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওয় দানা বাঁধছে রহস্য।
আমেরিকার আটলান্টা শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল চুলের পুতুল। দেওয়ালে চড়ে রীতিমতো কসরত দেখাচ্ছে সে। লোকের পিছনে ধাওয়া করছে। যা দেখে সোশাল মিডিয়ায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিওটি পোস্ট করে এক এক্স ইউজার লেখেন, 'পালানোর পর এই প্রথমবার অ্যানাবেলকে দেখা গেল।' আবার কেউ লিখেছেন,'হারিয়ে যাওয়া অ্যানাবেল পুতুল ডাউনটাউনে লোকজনের পিছু ধাওয়া করেছে।' ভিডিও দেখে দোলাচলে রয়েছেন অনেকে। তাদের কথায়, 'ভিডিও দেখে তো একদম বাস্তব মনে হচ্ছে।' কারও কারও দাবি, মন্ত্রবন্ধনী ভেঙে পালিয়েছে সে।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, অ্যানাবেলকে বশে আনতে আসরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এড ও লরেন ওয়ারেন। এই দম্পতির কথা সারা পৃথিবীর অতিপ্রাকৃতের চর্চাকারী মাত্রেই জানেন। একের পর এক ‘ভূতূড়ে’ ঘটনার পিছনে থাকা অলৌকিক কারণ খুঁজে বের করে সমাধানের চেষ্টা করতেন তাঁরা। হালফিলের ‘কনজুরিং’ সিরিজের ছবিগুলি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বিলক্ষণ চিনবেন তাঁদের। অ্যানাবেল নামের পুতুলটিকে পরীক্ষা করে এই দম্পতি জানিয়ে ছিলেন, মোটেই এই পুতুলটি ‘নিরাপদ’ নয়। এর মধ্যে রয়েছে শয়তানের উপস্থিতিও। বাড়িটিতে ‘ভূত তাড়ানোর শুদ্ধিকরণ’ করে অ্যানাবেলকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান তাঁরা। তারপর থেকে মুডাস কানেক্টিকাটের ‘লরেন ওয়ারেনস অকাল্ট মিউজিয়ামে’ রয়েছে পুতুলটি।
সোশাল মিডিয়ায় জোর চর্চায় জল ঢেলেছেন ওয়ারেন দম্পতির জামাই তথা নিউ ইংল্যান্ড সোসাইটি অফ সাইকিক রিসার্চের ডিরেক্টর টনি স্পেরা। তিনি জানিয়েছেন, অ্যানাবেল নিখোঁজ হয়নি। নিরাপদেই আমাদের হেফাজতে রয়েছে। আমজনতা কোনও বিপদে পড়বে না।" তাহলে আটলান্টা শহরে হেঁটে বে়ড়ানো লালচুলের পুতুলটি কে? নিছক প্র্যাঙ্ক নাকি ফিরছে অ্যানাবেলের সেই আতঙ্ক।
কিন্তু কে এই অ্যানাবেল?
গল্পের সূত্রপাত গত শতাব্দীর সাতের দশকে। ডোনা নামের এক তরুণী নার্স একটি পুতুল উপহার পান। তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর সঙ্গে থাকতেন আরেক বান্ধবী অ্যাঞ্জি। মিষ্টি দেখতে ওই পুতুলটিকে পেয়ে বেশ আহ্লাদই হয়েছিল ডোনার। কিন্তু সময় গড়াতেই শুরু আসল খেলা। তিনি এবং অ্যাঞ্জি দু’জনেই খেয়াল করেন পুতুলটা ঠিক ‘স্বাভাবিক’ নয়। থেকে থেকেই সেটার পজিশন বদলে বদলে যায়। এমনকী এক ঘরে রাখা হলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় অন্য ঘরে। একদিন তাঁরা খুঁজে পেলেন ‘হেল্প মি’ লেখা একটা নোট। একেবারে শিশুর হাতের লেখায়। একদিন দেখা গেল চোখের কোণ থেকে উপচে পড়ছে রক্তের ধারা! স্বাভাবিক ভাবেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে শুরু করলে স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। ডোনা ও তাঁর বান্ধবীও প্রবল ভয় পেয়ে গেলেন।
ক্রমে সময় যত গড়াল তত চড়ল আতঙ্কের পারদ। একদিন অ্যাঞ্জির বয়ফ্রেন্ড লউ ভয়ার্ত কণ্ঠে শোনালেন তাঁর হাড়হিম অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন, মাঝরাতে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলেন তিনি। সারা শরীর ভয়ে ঠান্ডা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর শরীর বেয়ে কে যেন ওঠার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে তাঁর গলা টিপে ধরার! আর সেই ঘাতক কোনও মানুষ নয়, তার শরীরটা এক পুতুলের! লউ যখন এসব গল্প শোনালেন প্রেমিকাকে, তখন আর ব্যাপারটাকে ‘মনের ভুল’ বলে থামিয়ে রাখতে রাজি হলেন না অ্যাঞ্জিরা। তাঁরা দ্বারস্থ হলেন এক মিডিয়ামের। মিডিয়াম মানে যাঁরা ইহজগতে থেকেও অতিপ্রাকৃতের দুনিয়ার সংকেতকে ধরতে পারেন। সেই মিডিয়ামই তুলে ধরলেন এক হতভাগ্য শিশুকন্যার কথা। অ্যানাবেল হিগিন্স নামের সেই সাত বছরের শিশুটি মারা গেলে তার আত্মাকে বন্দি করা হয়েছে ওই পুতুলের মধ্যে! যদিও মিডিয়াম দাবি করলেন, এই আত্মা নেহাতই নিরীহ। কোনও ক্ষতি করার ইচ্ছে এর নেই। কিন্তু পরে ওয়ারেন দম্পতি জানিয়েছিল পুতুলের ভিতরে রয়েছে শয়তানের আত্মা। তারপর তারাই পুতুলটিকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
