shono
Advertisement

শীতের মরশুমে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করে মোটা টাকা আয়ের সুযোগ, জানুন পদ্ধতি

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Posted: 03:45 PM Jan 19, 2022Updated: 03:45 PM Jan 19, 2022

শীতকালে খেজুর গুড় বা নলেন গুড় ছাড়া বাঙালির চলে না। শীত মানেই পিঠে-পুলি-পায়েস, আর খেজুর গুড় ছাড়া এসব ভাবাই যায় না। বর্তমানে অবশ‌্য ভেজালের যুগে এই গুড়ের স্বাদ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। খেজুর রস থেকে নলেন গুড় তৈরি করে বিক্রি করে ভাল আয়ের সুযোগ রয়েছে। লিখেছেন ডিএইএসআই-এর সাহায্যকারী আশরাফুল হক ও রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ‌্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শস‌্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজল সেনগুপ্ত।

Advertisement

খেজুর গাছ কেটে গায়ে নল লাগিয়ে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তার জন‌্য অনেকে একে নলেন গুড় ( Molasses) বলে থাকেন। গাছের গায়ে নলি কাটার জন‌্য এক বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন যা এখন অনেকের নেই। হয়তো গুড়ের স্বাদ কমে যাওয়ার এটাও একটা কারণ। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে সেই রস ঘণ্টাখানেক ধরে জ্বাল দিয়ে (ফুটিয়ে) গুড় তৈরি করা হয়। খেজুর গাছে আগেরদিন বিকেল বেলায় মাটির কলসি বা হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরেরদিন সকালে সেই মাটির পাত্রে জমা রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। প্রথমে রস ছেঁকে নেওয়া হয়। এতে অনেক ময়লা, পোকা-মাকড়, মৌমাছি, পিঁপড়ে বাদ দেওয়া যায়। এরপর বড় আকারের টিনের পাত্রে বা মাটির পাত্রে রস ফোটানো বা জ্বাল দেওয়া হয়। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ফোটানোর পর উপরে ভেসে ওঠা ফেনা ছেঁকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে রসে থাকা ময়লা বা অবাঞ্ছিত দ্রব‌্য ফেলে দেওয়া যায়। রসে প্রচুর জল থাকে এবং রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুড় তৈরির সময় এই জল বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায়। তাই চারদিক সাদা হয়ে যায়। রস ফোটানোর সময় একটানা অনবরত নেড়ে যেতে হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর রস ঘন হয়ে ঝোলা গুড় তৈরি হয়। কখনও কখনও ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গুড় তৈরি হয়েছে কি না বোঝার জন‌্য এক স্থানীয়/গ্রামীণ পদ্ধতি আছে তা হল, একটা পাত্রে ঠান্ডা জল নিয়ে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা গুড় ঢাললে তা দিয়ে যদি একটা বল/ডেলা তৈরি করা যায় তবে বুঝতে হবে গুড় তৈরি হয়ে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: বন্যায় জমি হারিয়ে ভাসমান বাগানে সবজি চাষ সুন্দরবনের চাষিদের, স্বীকৃতি দিল রাষ্ট্রসংঘ]

খেজুর গুড়ের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ‌্য:

• প্রতি শীতে (৩-৪ মাস ধরে) একটা গাছ থেকে প্রায় ৭-৮০ লিটার রস পাওয়া যায়।
• কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ এবং মাঘ, এই ৩-৪ মাস ধরে রস পাওয়া যায়। তবে আবহাওয়া, বিশেষ করে ঠান্ডার উপর তা নির্ভর করে।
• প্রথমদিকে রসের গুণগত মান ভাল থাকে। গুড় বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ১০ লিটার রস থেকে যে পরিমাণ গুড় পাওয়া যায়, পরবর্তীকালে তা থেকে অনেক কম গুড় পাওয়া যায়।
• ১ কেজি গুড় তৈরি করতে প্রায় ৪০ টাকার মতো জ্বালানি লাগে।
• বর্তমান বাজারদর অনুসারে ১ কেজি খেজুর গুড় বিক্রি করে প্রায় ১০০-১১০ টাকা লাভ হয় (গ্রামের লোকেদের কথা অনুসারে)।

[আরও পড়ুন: ধান-পাট ছেড়ে গাঁদা ফুলের চাষ, মুনাফা বাড়াতে সরকারি সাহায্যের আরজি মুর্শিদাবাদের কৃষকদের]

• কার্তিক মাসের রস থেকে যে গুড় তৈরি হয় তার স্বাদ ও মান সবচেয়ে ভাল। পরে ঠান্ডা পড়ে গেলে গুড়ের মান কিছুটা খারাপ হয়।
• গুড় তৈরির সময় এবং তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও তা ভালভাবে এবং ঘন ঘন নাড়ানো দরকার (একে ‘ঘেঁটে’ দেওয়াও বলে)। এতে গুড় তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয় এবং রসের মধ্যে থাকা জল তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয় এবং রসের মধ্যে থাকা জল তাড়াতাড়ি মরে যায় (বাষ্পীভূত হয়)।
• আসল বা খাঁটি গুড় নরম। চিনি না মেশালে গুড় নরম থাকে। চিনিতে ভেজাল থাকলে তা শক্ত হয়।
• মাটির পাত্রে পরিষ্কার কাপড় পেতে (মার্কিন কাপড়) তার উপর গুড় ঢালা হয়। ক্রমশ তা শক্ত হয়ে পাটালি গুড়ে পরিণত হয়।
• ভাল গুড় পাওয়ার জন‌্য গাছের উপর দিককার কিছু পাতা ছেঁটে, যেখান থেকে রস বের করা হবে, সেখানকার ছাল সরিয়ে বা চেঁচে পরিষ্কার করা হয়। এরপর বেশ কয়েকদিন ধরে ধীরে ধীরে সেই জায়গাটা আরও ভালভাবে চেঁচে, কাঠে বাঁদা করার মতো মসৃণ ও সমতল করা হয়। এর প্রায় ৭-৮ দিন পর সেখানে ‘চোখ’ কাটতে হয়। পরে সেই চোখে নল/নলি/চুঙ্গি/ফানেল লাগিয়ে তার মাধ‌্যমে রস সংগ্রহ করা হয়।
• খাঁটি গুড় নরম এবং কালচে লাল রঙের হয়। শক্ত এবং হালকা রঙের চকচকে গুড় মানে তাতে ভেজাল হিসাবে চিনি মেশানো হয়েছে।
• গাছ কাটা বা চোখ কাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ব‌্যাপার। এর উপর রসের মান এবং পরিমাণ নির্ভর করে।
• এক-একটা গাছ ৪-৫ দিন পরপর কাটা হয়। অনেক সময় সপ্তাহে ৫-৬ দিন। অর্থাৎ প্রতিদিনই গাছ কাটা হয়। অনেকে কাটার পর সেখানে চুন দেন। রসের হাঁড়িতে অনেকে চুন মেশান (ওঁদের মতে চুন দিলে রস পরিষ্কার থাকে)।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement