দিন যায়, বছর এগোয়। তবে সোনার গুরুত্ব কমে না। আদি হোক বা নব্য-বাজার অর্থনীতিতে সোনা প্রাসঙ্গিক ছিল, আছে, থাকবেও। তবে শুধু বিশ্ব অর্থনীতি নয়, ভারতের আর্থিক মানচিত্রেও মুদ্রাস্ফীতির ছায়া ঘনিয়ে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাটি কামড়ে খেলে চলেছে সোনা। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। সদ্য প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের রিপোর্ট ঘেঁটে তথ্য সংকলন করল টিম সঞ্চয়
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘গোল্ড আউটলুক ২০২৩’ রিপোর্ট। রিপোর্টে একদিকে যেমন ২০২২ সালে সোনা-বাজারের পারফরম্যান্স জরিপ করা হয়েছে, তেমনই আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের সম্ভাব্য পারফরম্যান্স কেমন হতে পারে, কী কী ট্রেন্ড মুখ্য আকর্ষণ হতে পারে–তুলে ধরা হয়েছে সেই ছবিও। একইসঙ্গে রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা, বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসাবে সোনা কতটা প্রাসঙ্গিক হতে পারে, তা নিয়ে।
সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়ার পর বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি বিবর্তনের মুখে দঁাড়িয়ে। মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি। আর তারই জেরে এই ফল। ২০২৩ সালেও এটাই হবে বিচার্য বিষয়। অর্থাৎ তেইশের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করা ও সেই প্রেক্ষিতে সোনার পারফরম্যান্স বিচারের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হবে মুদ্রাস্ফীতির হার এবং তা নিবারণে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির হস্তক্ষেপের পারস্পরিক সম্পর্ক।
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ–
১. অতীত বলছে, স্বল্প মুদ্রাস্ফীতি এবং উপার্জনের স্বল্পতা বরাবরই সোনার পক্ষে ইতিবাচক সাব্যস্ত হয়েছে।
২. ডলারের দামে পরিবর্তনের জন্য সোনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
৩. ‘টেল রিস্ক হেজ’ হিসাবে সোনার মূল্য বাড়াতে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দায়ী হতে পারে।
৪. আগামী বছর চিনের অর্থনৈতিক বিকাশ গতি পেতে পারে। ফলে গ্রাহকদের কাছে সোনার চাহিদা বাড়তে পারে।
৫. দীর্ঘমেয়াদী বন্ড ইল্ডের চাহিদা বেশি থাকবে। তবে তাতে সোনার ফলাফলে প্রভাব পড়বে না।
৬. অর্থনীতির শ্লথ গতির জেরে পণে্যর উপর চাপ বাড়বে। আর তা সোনার বাজারবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৭. সামগ্রিকভাবে, এই সব কিছুর প্রভাব এই পূর্বাভাসই দেয় যে সোনার পারফরম্যান্স বছরভর স্থিতিশীল এবং ইতিবাচক থাকবে।
[আরও পড়ুন: সঞ্চয় করুন ভবিষ্যতের জন্য, জেনে নিন পোস্ট অফিস সেভিংস স্কিমের কথা]
তবে এটাও ঠিক যে, এ কথা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই যে, ২০২৩ সালজুড়ে একটা অনিশ্চয়তার বাতাবরণ যেমন থাকবে, তেমনই তার মধে্যও সোনার ভাল ফল করা নিয়ে উচ্চ প্রত্যাশাও থাকবে। এই অনিশ্চয়তার নেপথে্য একাধিক কারণ থাকতে পারে। যেমন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির কড়াকড়ি, যার ফলে সোনার দামে বড় পতন হতে পারে। আবার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে্য সুদের হার বৃদ্ধি আটকে দেওয়া বা হার কমিয়ে দেওয়ার মতো কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির আচমকা পদক্ষেপের জেরে টালমাটাল হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘটতে পারে stagflation-এর মতো ঘটনা। আশাব্যঞ্জক বিষয় হল, অতীতেও সোনার বাজার এই ধরনের প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে কিন্তু ডুবে যায়নি। বরং ইতিবাচকভাবেই ফলাফল করেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, মনে করা হচ্ছে-আগামী বছর বিশ্বব্যাপী জিডিপি মাত্র ২.১ শতাংশ বাড়বে। পৃথিবীজোড়া অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বাদ দিলে বিগত চার দশকের মধে্য এটাই বিশ্বব্যাপী গ্রোথের শ্লথতম পর্যায়। যার ফলে এটি আইএমএফ-এর নির্ধারিত বিশ্বব্যাপী মন্দার সংজ্ঞাকেও সিদ্ধ করছে, যা হল যখন গ্রোথ বা বিকাশ ২.৫ শতাংশের নিচে চলে যায়। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, এ কথা মোটামুটি অনিবার্য যে, আগামী বছর মুদ্রাস্ফীতির হার কমবে। কারণ পণ্যমূল্য আরও কমবে। সামনের রাস্তা একেবারে প্রশস্ত নয়, চড়াই-উতরাই অবশ্যই আছে। তবে তা সত্ত্বেও সোনার বাজার হতাশ করবে না বলেই পূর্বাভাস মিলেছে রিপোর্টে।