মোমেন্টাম ইনডেক্সের দিকে রিটেল ইনভেস্টরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন পরশ মাতালিয়া। পরশ স্যামকো মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার। ‘‘আমাদের দেশে ইনডেক্সের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, আর বিশেষ কয়েকটি ইনডেক্স ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। মোমেন্টাম ইনডেক্স আগামিদিনে বিশেষ ভূমিকায় থাকবে এমনই আমার ধারণা,’’ তিনি জানালেন। প্রশ্নোত্তর নীলাঞ্জন দে-র সঙ্গে।
ইদানীং তো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, ইকুইটি নিশ্চিতভাবে বাড়ছে। কেন এমন হচ্ছে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?
শর্ট টার্মে বাজার বাড়া-কমার মূল কারণ ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের চলতি ট্রেন্ড। সাম্প্রতিক কালে আমরা দেখছি যে, মোটা রকম বিদেশি লগ্নি আসছে ভারতীয় বাজারে। গত কয়েকমাসের পরিসংখ্যান দেখতে পারেন। মার্কেটে চাহিদা নতুন করে তৈরি হয়েছে, ভারতে স্টকের দামে তাই বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করছেন। যদি আরও খতিয়ে দেখেন, তাহলে বুঝবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রকের নীতির উপর নজর রাখছেন, এখানে ইন্টারেস্ট রেটের গতিপ্রকৃতির দিকে খেয়াল করে চলছেন। ইতিবাচক ট্রেন্ডের ভিত্তিতেই তঁারা এগিয়ে আসছেন।
স্যামকো মিউচুয়াল ফান্ডের নিজস্ব কৌশল নিয়ে জানতে চাই। কোন সেক্টরে আপনারা ওভারওয়েট আর কোথায় আন্ডারওয়েট?
আমাদের নিজের অ্যালগোরিদম আছে, তাই ব্যবহার করে থাকি ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে। ইন-হাউস অথবা নিজস্ব রিসার্চের ভিত্তিতে এর সৃষ্টি। দু’টি ইকুইটি ফান্ড ইতিমধ্যেই আছে আমাদের। সেখানেও এই কৌশল ব্যবহার করা হয়, অন্য কোনও কিছু নয়। বাই-অ্যান্ড-হোল্ড স্ট্র্যাটেজি শর্তাধীনভাবে প্রয়োগ করা হয়। এই মুহূর্তে আমরা ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং ইনফর্মেশন টেকনোলজি’র বিষয়ে ওভারওয়েট এবং মেটাল, অয়েল অ্যান্ড গ্যাসের ক্ষেত্রে আন্ডারওয়েট।
আপনাদের নতুন ফান্ড, অ্যাক্টিভ মোমেন্টাম ফান্ডের কৌশল কেমন হবে?
মোমেন্টাম কথাটির নেপথে্য আছে পদার্থবিদ্যার এক মৌলিক শিক্ষা। তাই-ই আমরা এখানে প্রয়োগ করব। দেশের প্রথম ‘অ্যাক্টিভ’ মোমেন্টাম ফান্ড হবে এই নতুন স্কিম। যে সমস্ত স্টকে ইদানীং ভাল অগ্রগতি এসেছে ও সেগুলি শর্ট এবং মিডিয়াম টার্মে আরও বাড়বে বলে বোঝা যাচ্ছে, সেই সব স্টকই থাকতে পারে আমাদের তালিকায়। চেষ্টা করব কোনও ‘বায়াস’ বা পক্ষপাত না রাখতে, আর কোনও তথাকথিত ‘ইমোশন’ বা আবেগও আমাদের পক্ষে জরুরি ভূমিকায় থাকবে না। সেইভাবেই ম্যানেজ করা হবে সমগ্র পোর্টফোলিও।
[আরও পড়ুন: কতটা ঝুঁকি নেবেন, রিস্ক ফ্যাক্টরই বা কতটা, জেনে নিন লগ্নির ফান্ডা]
মোমেন্টাম ইনডেক্স তো সেভাবে পরিচিত নয়…
হ্যাঁ, কেবল মোমেন্টামের সূচকের ভিত্তিতে লগ্নি হয়েছে এমন অ্যাসেটের পরিমাণ বেশ কম। তবে আগামিদিনে নিশ্চয় পরিস্থিতি বদলে যাবে। মোমেন্টাম ইনডেক্স, মনে রাখুন, ভাল পারফরম্যান্সের অনুকূলে থেকেছে বহু বার। এই যে সূচকটির কথা বলছি, সেটির ‘বেস ডেট’ হচ্ছে এপ্রিল ২০০৫। বস্তুত, Nifty Midcap 150 Momentum 50 Index প্রায় ২১ শতাংশ ‘Price CAGR’ দিয়েছে ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত। আর যদি তুলনা করতে হয়, এই একই সময়ের মধে্য Nifty 500 Price CAGR দিয়েছে ১২ শতাংশ। এই তথ্যটি লক্ষণীয় বলে মনে করছি।
সাধারণ ইনভেস্টর কীভাবে এই নতুন ফান্ডের স্ট্র্যাটেজি বুঝতে পারবেন?
এখানে আমরা ক্রিকেটের উদাহরণ টেনে আমাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করছি। ভারতীয় মানেই ক্রিকেট-ভক্ত, তাই এই বিশ্লেষণ সহজবোধ্য হবে বলেই ধারণা। ধরে নিন এমন একটি ক্রিকেট টিম আছে, যেখানে কয়েক জন প্লেয়ার ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলছেন, তাঁদের ফর্ম বেশ সন্তোষজনক বলেই গণ্য। তাঁরা তো টিমের মধে্য থেকে যাবেন, যেমন হয়েই থাকে। তবে আরও কিছু এমন প্লেয়ারও আছেন, তাঁদের ফর্ম নেই আর তাই তাঁরা দল থেকে বাদ পড়তে পারেন। একইভাবে, মোমেন্টামের কৌশলের কথা ভাবুন। আপনি ‘উইনিং পোর্টফোলিও’ চান? ভাল কথা, বেছে নিন সেই সমস্ত স্টক যেগুলি ফর্মে আছে, আর যথাযথ পারফরম্যান্সও দিতে থাকবে। এবং অন্যদিকে যে স্টকগুলি তা দিতে পারছে না, সেগুলিকে সরিয়ে দিন। সঙ্গে রাখবেন না। ইনভেস্টররা যেন এই কথাটির মর্মার্থ বোঝেন, লগ্নির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে নিন সব কিছু।