ভাল সুদ কে না চান? আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারে স্মল ফাইন্যান্স ব্যাংক অর্থাৎ এসএফবি। কারণ এতে সুদের হার রয়েছে উঁচুর দিকেই। তাছাড়াও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির তুলনায় এসএফবি-র ডিপোজিট নিয়ে বাজারে যথেষ্ট কৌতূহলও রয়েছে। তাই এবার এসএফবি নিয়েই বিস্তারিত তথ্য জানাল ‘টিম সঞ্চয়’
‘ফিক্সড ডিপোজিটের রেট কম’ বলে আমরা যতই গলা ফাটাই না কেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনও ভাল সুদের হার খুঁজে বেড়ান, সুরক্ষার কথা না ভুলে নয় অবশ্য। স্মল ফাইন্যান্স ব্যাংক (SFB) সাম্প্রতিককালে যারা এক স্বতন্ত্র শ্রেণি হিসাবে রিজার্ভ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে, সুদের হার সাধারণভাবে উঁচুর দিকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য কমার্সিয়াল ব্যাংকগুলির তুলনায় SFB-র ডিপোজিট নিয়ে বাজারে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই আমাদের এই লেখা।
প্রথমে SFB-র ব্যাপারে কয়েকটি কথা বলে রাখি। ব্যাংক নিয়ন্ত্রক এ দেশে ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’-এর প্রচেষ্টা জোরদার করতে বদ্ধপরিকর। সরকারও চান, অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যাংকিং-এর মূল স্রোতে আসুন, যাতে তাদের ফাইন্যান্সের ব্যাপারে আর ‘ইনফর্মাল সোর্স’-এর দিকে ছুটে যেতে না হয়। যে দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যত সুষ্ঠু, যত বেশি মানুষের হাতের কাছে, সে দেশের অর্থনীতি তত দৃঢ়। ভারতবর্ষে গত এক-দেড় দশক ধরে মাইক্রোফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছি, বহু প্রান্তিক গোষ্ঠী উপকৃত হয়েছে। SFB-র কল্যাণে আরও একবার আমরা এমনই উন্নতি দেখাতে পারব বলেই মনে করি।
[আরও পড়ুন: অবসর জীবন হোক নির্ভাবনার, জেনে নিন পেনশন দুনিয়ার হাল হকিকত]
অন্য সাধারণ ব্যাংকগুলির মতো, SFB-ও নিজেদের গ্রাহকদের ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একইভাবে এখানেও নানা স্কিম চালু করা হয়েছে, ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক বাড়ানো হয়েছে, নতুন লোন প্রকল্পের অভাব হয়নি। এছাড়াও যে কথা নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, সাধারণ ব্যাংকের তুলনায় SFB-র ডিপোজিটের হার সামান্য হলেও বেশি। আমরা অবশ্য এই বক্তব্যের সঙ্গে স্পষ্ট বলব যে, বিনিয়োগকারী যেন নিজস্ব উপায়ে যাচাই করে নেন। যথারীতি, সব ডিপোজিটই সমস্ত ধরনের গ্রাহকের জন্য নয়। নিজের প্রয়োজন বুঝে নিয়েই সঠিক ডিপোজিট প্রকল্পটি বেছে নিতে হবে বলেই আমরা মনে করি।
নিচের সারণিতে (তালিকা ১) বড় ধরনের কয়েকটি সরকারি কমার্সিয়াল ব্যাংকের এক বছরের ডিপোজিটের কথা বলা হল–
তালিকা ১
ক্রমিক নং | ব্যাংক | মেয়াদ | সাধারণ গ্রাহক | সিনিয়র সিটিজেন |
---|---|---|---|---|
১ | স্টেট ব্যংক অফ ইন্ডিয়া | ১-২ বছর | ৫% | ৫.৫০% |
২ | ব্যংক অফ বরোদা | ১ বছর | ৪.৯০% | ৫.৪০% |
৩ | পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যংক | ১-২ বছর | ৫% | ৫.৫০% |
বি. দ্র.–এখানে রিটেল ডোমেস্টিক টার্ম ডিপোজিটের কথাই বলা হয়েছে, যেগুলি দু’কোটি টাকার কম। প্রতিটি ব্যাংক, যেগুলির নাম করা হল, আলাদা শর্ত রেখেছে ডিপোজিটের ব্যাপারে। গ্রাহক যেন অবশ্যই সেগুলি জেনে নেন। বিশেষ কিছু ডিপোজিট প্রকল্প বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রেই থাকে, সেগুলি আমরা এই তালিকার বাইরে রেখেছি। বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাংক ছাড়াও কোঅপারেটিভ ব্যাংকগুলিও আমরা ধরিনি।
অন্যদিকে শুধুমাত্র SFB-গুলির ডিপোজিট রেট যদি দেখেন, বুঝতে পারবেন তফাত কোথায়। নিচের সারণি (তালিকা ২) দেখুন। এখানেও তিনটি SFB-র কথা আমরা উদাহরণ হিসাবে রাখছি।
ক্রমিক নং | ব্যাংক | ডিপোজিটের মেয়াদ | সাধারণ গ্রাহক |
---|---|---|---|
১ | জন | ১ বছর | ৬.২৫% |
২ | উজ্জীবন | ১-২ বছর | ৬% |
৩ | উৎকর্ষ | ৩৬৫ দিন থেকে ৬৯৯ দিন | ৬.২৫% |
এই সমস্ত ক্ষেত্রেও আপনাকে আলাদাভাবে খোঁজ করতে পরামর্শ দিচ্ছি। কয়েকটি প্রকল্পের জন্য ‘স্পেশ্যাল রেট’ প্রযোজ্য হয়ে থাকে, তবে সেগুলির শর্ত অন্য ধরনের হয়। বাল্ক ডিপোজিট, অর্থাৎ বড় ধরনের লগ্নির জন্য (সাধারণত ২ কোটি টাকার বেশি), বিশেষ কিছু নিয়মকানুন থাকতে পারে। আবার ‘প্রিম্যাচিওর উইথড্রয়াল’ করতে হলে কীভাবে পেনাল্টি দিতে হবে, তাও জেনে নেওয়া উচিত।
তবে শুধু সাবেকি পদ্ধতিতে নেওয়া ডিপোজিটেই ক্ষান্ত নয় আজকের ব্যাংকগুলি, এবং এই দিক দিয়ে SFB-ও কোনও ব্যতিক্রম নয়। যেমন ধরুন, Equitas SFB যেটি কেবল ‘গুগল পে’ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প সম্প্রতি নিয়ে এসেছে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, একাধিক নামী টেকনোলজি সংস্থা (যেমন হোয়াটসঅ্যাপ) আমাদের দেশের পেমেন্টস সেক্টরে ঢুকতে চেয়েছে এখানকার বিরাট সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে।