ঋণ চান ঠিকই, কিন্তু নিজের স্টক ব্যবহার করে। তাই তো? আজ্ঞে হ্যাঁ, তা-ও সম্ভব। মার্কেটের পরিভাষায় একে বলা হয় ল্যাস। অর্থাৎ লোন এগেনস্ট শেয়ারস। এই নিয়ে ইনভেস্টরদের আগ্রহ উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। কী তা, বিশদে জানালেন নীলাঞ্জন দে
নিজের স্টক বা অন্য অ্যাসেটের অংশ ব্যবহার করে অনেকেই লোন নিতে চান। প্লেজ করে অর্থাৎ অ্যাসেটটি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার চল বহুদিন ধরেই আছে, ইদানিং শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ধার নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বেশ কিছু সংস্থা (ব্যাংক ছাড়াও) লোন এগেনস্ট শেয়ার (বা সংক্ষেপে ল্যাস) দিতে আজকাল রাজি। এই নিয়েই আজ আমাদের লিড স্টোরি। ‘ল্যাস’-এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য-
#স্বল্প প্রসেসিং ফি, বা প্লেজ করার চার্জ
#রিনিওয়াল ফি যদি থাকে, তা-ও কম
#কোনও ফোরক্লোজার বা প্রিপেমেন্ট চার্জ সাধারণত থাকে না
#খুব সহজে লোন পাওয়া সম্ভব, কয়েকটি সাধারণ শর্ত পূরণ হলেই করা যেতে পারে।
সব থেকে বড় সুবিধা, যেটির কথা লোন তথা ঋণ-প্রদানকারী সংস্থাগুলি বার বার বলে থাকে, তা হল মূল অ্যাসেটের কোনওরকম ক্ষতি হবে না। পুরো প্রক্রিয়াতে যদি সংশ্লিষ্ট গ্রাহক যথেষ্ট নিয়ম মেনে চলেন অ্যাসেসটি অটুট থাকবে। যথাসময় সুদ দিতে হবে অবশ্য বা মূল টাকা সুদ-সমেত ফেরত দিয়ে ‘কোল্যাটেরাল’টি ঋণমুক্ত করে নিতে হবে, সেই দায় গ্রাহকের। তা না হলে প্রধান অ্যাসেটে হাত পড়বে।
উদাহরণ: Tata Capital-এর ল্যাস অফার
নিজের ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট প্লেজ করায় সুবিধা দিচ্ছে Tata Capital। অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ ভ্যালু (অর্থাৎ যে অ্যাসেট বাঁধা রাখা হবে, সেই অ্যাসেটের ভ্যালু) পর্যন্ত লোন পাওয়া যাবে। ইকুইটির ক্ষেত্রে যা ৫০ শতাংশ, তাই ডেট (যেমন বন্ড বা ডেট ফান্ড) হলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। টাটা ক্যাপিটালের মতে, সর্বোচ্চ লোনের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা হতে পারে।
কীসের ভিত্তিতে ল্যাস নেবে সংস্থাটি?
#ইকুইটি শেয়ার (মানে স্টক)
#মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট
#নন-কনভারটিবল ডেবেঞ্চার
#বন্ড বা অনুরূপ ডেট/ঋণপত্র
#নির্দিষ্ট সরকারি স্কিম
[আরও পড়ুন: বাড়ছে খরচ! কোন বিনিয়োগে মিলতে পারে সমস্যার সমাধান?]
এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই-
#ল্যাস নেওয়া সত্ত্বেও ইনভেস্টর নিজের সমস্ত অধিকার রাখতে পারবেন। যেমন, ডিভিডেন্ড যদি ঘোষিত হয়ে থাকে, তিনি সেই ডিভিডেন্ড অবশ্যই পাবেন।
#লোন সংস্থা বলে দেবে ঠিক কোন স্টকগুলি অনুমোদিত। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে টাটা ক্যাপিটালই জানিয়ে দেবে।
#সমস্ত শেয়ার যেন ডিম্যাট করানো থাকে। নচেৎ লোনের আবেদন গ্রাহ্য হবে না। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল হোল্ডিং ফর্মে তা গ্রাহ্য হবে।
#প্রতিদিন পোর্টফোলিওর রি-ভ্যালুয়েশন করা হবে। তবে লগ্নিকারী যেন খেয়াল রাখেন মার্কেটের সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি। যদি খুব বেশি দাম পড়ে যায়, ‘ইন্টারিম’ রি-ভ্যালুয়েশন করতে পারেন কর্তৃপক্ষ।
#ইন্টারেস্ট যখন দেওয়ার সময় আসবে, তখন সংস্থা জানিয়ে দেবে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে। ইসিএস, চেক বা পে অর্ডার ব্যবহার করে সুদ দিতে পারেন বিনিয়োগকারী।
ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে কী হতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা বাজাজ ফিনান্সের উদাহরণ ব্যবহার করে দিচ্ছি। বলে রাখা উচিত প্রথমেই যে কোনও রকম পক্ষপাত নেই আমাদের। নিচের পয়েন্টগুলি দেখুন।
#ডিপোজিট ভাঙানোর কোনও প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র প্লেজ করলেই যথেষ্ট।
#বাজাজের মতে, ৭৫ শতাংশ ভ্যালু পর্যন্ত লোন পাবেন গ্রাহকরা। সঠিক পদ্ধতিতে দরখাস্ত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লোন পাওয়া সম্ভব হবে। কোনও ক্রেডিট স্কোর যাচাই করা হবে না, এ-ও জানানো হচ্ছে।
#সাধারণত গ্রাহকরা নতুন আমানতের ক্ষেত্রে তিন মাস অতিবাহিত হলে ঋণের জন্য দরখাস্ত করতে পারেন।
#বাজাজের মতে, আমানতে যা সুদ পাবেন গ্রাহক, লোন নিতে হলে সেই সুদের হারের সঙ্গে দুই শতাংশ যোগ দিয়ে সুদ দেবেন তিনি।