অবসরের পর কোন পেনশন প্ল্যানটি আপনার জন্য যথাযথ হবে, এ নিয়ে যুক্তিতর্ক কখনও শেষ হবে না। তাই জরুরি হল উদ্দেশ্যটা কী-তা আগে নির্ধারণ করা। আর দ্বিতীয়ত, ক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক প্ল্যানটি বেছে নেওয়া। যদি অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আয় প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে চয়ন করুন ‘ইমিডিয়েট অ্যানুইটি’। আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে, তাহলে নিতে পারেন ‘ডেফার্ড অ্যানুইটি’। গাইডলাইন এঁকে দিলেন নীলাঞ্জন দে
গ্যারান্টিড ইনকাম পেতে অবসরের পর অনেকেই চান, সেই স্থায়ী রোজগার যদি কিঞ্চিৎ স্বল্প হয়, তাও। বিশেষত, স্টক মার্কেটের অনিশ্চয়তার বাইরে যদি কোনও আকর্ষণ থেকে থাকে, তা হল-স্বল্প হলেও প্রতিশ্রুত রিটার্ন। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য যদি ট্যাক্স-এফিসিয়েন্ট উপার্জন কেউ নিশ্চিতরূপে দিতে পারে, তা ইনসিওরেন্স সেক্টর। তবে এই ধরনের আয় অবশ্যই শর্তাধীন হয়, বিনিয়োগকারীদের জন্য একগুচ্ছ খরচও (এক্সপেন্সেস) থাকে, তা-ও মনে রাখা আপনার কর্তব্য।
একাধিক উপায়ে জীবন বিমা কোম্পানিগুলি এ ধরনের ইনকামের পরিকল্পনা করতে পারে বিভিন্ন প্রোডাক্টের মাধ্যমে। একবার লগ্নি করেও তার সুবিধা পাওয়া সম্ভব। আবার নিয়মিত প্রিমিয়াম দেওয়ার পরও তা নেওয়া যেতে পারে। বয়স্ক নাগরিক নিজের ক্ষমতা বুঝে নিয়ে সঠিক প্ল্যানটি বেছে নেবেন, তাই আশা করা যায়। ইনকাম কোন রূপে নেবেন, কতদিন বাদে বাদে পাবেন, এই সমস্ত জরুরি কথা আগেই ভেবে নেবেন, না হলে সঠিক প্ল্যানের সুযোগ-সুবিধাগুলি পূর্ণ মাত্রায় পাবেন না।
[আরও পড়ুন: দ্রুত পালটাচ্ছে বিনিয়োগের ধরন-ধারণ, ক্ষুদ্র লগ্নিকারীরা পা ফেলুন মেপে]
রিটায়ারমেন্টের পর প্রধানত দু-তিন শ্রেণীর প্রোডাক্টের প্রতি আপনি নজর দিতে পারেন। যদি অবসর নেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রোজগারের কথা ভাবেন, তাহলে ‘ইমিডিয়েট অ্যানুইটি’ আপনার পক্ষে ভাল হবে। না হলে ‘ডেফার্ড অ্যানুইটি’ আপনার প্রয়োজন মেটাবে, অর্থাৎ উপার্জন শুরু হবে নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করলেই। এই শেষোক্ত শ্রেণির প্রোডাক্ট, মনে রাখবেন, সাধারণত অবসর নেওয়ার কয়েক বছর আগেই নিয়ে নিতে হয়, না হলে খরচাপাতির বহর বেড়ে যায়। আবার যদি নিজের পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবে থাকেন তাহলে ‘রিটার্ন অফ পারচেজ প্রাইস’ জাতীয় বিকল্পও নিতে পারেন, ইনসিওরেন্স সংস্থাগুলি জানাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে যে টাকার বিনিয়োগ করেছিলেন, তা আপনি ফেরত পাবেন। অবশ্যই এক্ষেত্রে বিশেষ কয়কটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
উদাহরণ: সম্পূর্ণ বিনা পক্ষপাতে আইসিআইসিআই প্রুডেনসিয়াল গ্যারান্টিড পেনশন প্ল্যানের কথা বলা যায়। কোম্পানির হিসাব মতো দীর্ঘ তিরিশ বছরের জন্য স্থায়ী রোজগার পাওয়া সম্ভব এবং তা ট্যাক্স-মুক্তও বটে। ইনসিওরেন্স প্ল্যানের লাইফ কভারও আছে, বলাই বাহুল্য। একটি ‘ইলাসট্রেশন’-এর ভিত্তিতে বোঝানো যায়, যদি কেউ মাসিক ৩০,০০০ টাকা প্রিমিয়াম হিসাবে জমা দেন দশ বছরের জন্য, তাহলে এক কোটি টাকার সুবিধা পাবেন, সমস্ত শর্ত মানার পর।
এই প্রসঙ্গে নিচের পয়েন্টগুলি দেখুন –
ট্যাক্স বেনিফিট : সেকশন 10 (10D)-র অন্তর্গত, এছাড়াও সেকশন 80C-র ছাড়।
আগে থেকে ঠিক করে রাখা দিনে (ধরুন জন্মদিন) নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেতে পারেন।
লাইফ কভার : পলিসি টার্মের জন্য বলবৎ থাকবে।
লোন: সারেন্ডার ভ্যালুর ৮০% পর্যন্ত লোন পেতে পারেন।
বিশদে জানতে চাইলে লগ্নিকারী যেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেন। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠক জানেন, আমরা সর্বদা রিস্ক নিয়ে জেনে-বুঝে নিতে বলি, তাই এখানেও ব্যতিক্রম হবে না বলেই আশা করি। বিশেষ নজর থাকুক সম্ভাব্য খরচের (এক্সপেন্স) উপর, এ-ও আমরা বারবার বলে রাখছি।
অ্যানুইটি: বেশ কয়েকটি ভাগ আছে অ্যানুইটির, এগুলির মধ্যে থেকে আমরা কিছু বাছাই করা বিকল্পের কথা নিচের তালিকায় দিলাম।
বিঃদ্রঃ
(১) গ্রাহক নিজের অ্যানুইটির পরিমাপ আগে বেছে নিতে পারেন।
২) পেআউট কতদিন অন্তর নেবেন তাও ঠিক করুন, কত বছর বয়স থেকে এই সুবিধা পেতে চান, তা জানিয়ে রাখতে হবে।
৩) জয়েন্ট অ্যানুইটির ক্ষেত্রে বয়স সংক্রান্ত নীতি দু’জনের জন্যেই প্রযোজ্য হবে।
যে বিকল্পই নিন না কেন, যথাযথ প্রোডাক্টের অভাবে আপনার রিটায়ারমেন্ট-জনিত পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না। এ প্রসঙ্গে মনে রাখুন
# ইনফ্লেশনের বৃদ্ধি অনেকভাবেই অ্যানুইটি প্রোডাক্টকে ভোঁতা করে দিতে পারে।
# তাই ৫, ১০ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য অপেক্ষা করে যদি পেআউট চান, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির অভিঘাত কেমন হবে, তার একটা ধারণা তৈরি করুন আজই।
#দরকার বুঝলে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও ‘ফ্রি লুক’ পিরিয়ডের সদ্ব্যবহার করুন।
# NPS-এর সূত্রে যদি প্রোডাক্ট কেনেন (PFRDA-র নিয়ম মেনে) তার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করা নীতি সম্পর্কে অবগত থাকুন।
# ট্যাক্স-সংক্রান্ত নিয়মাবলী জানা খুব জরুরি। এছাড়াও নমিনেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, রাইডার ইত্যাদির ব্যাপারে মনে যেন পরিষ্কার ধারণা থাকে।