Advertisement
আর্জেন্টিনার প্রথম ফুটবল বিশ্বজয়ের নেপথ্য নায়ক ভোপালে জন্মানো পাকিস্তানি কোচ! কীভাবে?
ভারতে মেসির গোট কনসার্ট শেষে গল্পটি আবারও প্রচারের আলোয় এসেছে।
১৯৭৮ সাল। তখন রাজনৈতিকভাবে উত্তাল আর্জেন্টিনা। গণতন্ত্র ছিল বিপর্যস্ত। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে তখন কায়েম একনায়কতন্ত্র। এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেও আর্জেন্টিনা সেই বছর হকি এবং ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল। হকির আসর বসেছিল মার্চে। জুনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফুটবলের মহাযজ্ঞ।
হকি বিশ্বকাপ খেলতে পাক দল যখন বুয়েনস আইরেসে অবতরণ করে, তখন কোচ ওয়াহিদ খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আমি কোনও ইউরোপীয় দলকে পেনাল্টি কর্নারের মাধ্যমে বিশ্বকাপ জেতার জন্য হকির খেলার সৌন্দর্য নষ্ট করতে দেব না।"
সেই সময় পাকিস্তান ছিল হকিতে অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালের পর থেকে বিশ্বমঞ্চে বারবার শিরোপা জিততে ব্যর্থ হচ্ছিল। ১৯৭২ অলিম্পিকে দ্বিতীয়, ১৯৭৩ বিশ্বকাপে চতুর্থ, ১৯৭৫ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় এবং ১৯৭৬ অলিম্পিকে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল তারা। এই পরিস্থিতিতে ওয়াহিদ খানের এমন মন্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
অনেকেই বলেন দলের ম্যানেজারের এহেন মন্তব্যই তাতিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের। প্রথম ম্যাচ থেকেই দুর্ধর্ষ ফর্মে দেখা যায় তাঁদের। পাকিস্তানের শৈলীতে মুগ্ধ হয়েছিলেন হকিপ্রেমীরা। পরবর্তীতে আবদুল ওয়াহিদ খান বলেছিলেন, "সেই সময় অনেকেই আমাদের পতাকা চিনত না। হকির মাধ্যমেই আমাদের পতাকা চিনতে শুরু করে অনেকে।"
পাকিস্তান তাদের ছ'টি পুল ম্যাচের সমস্ত ম্যাচে জিতেছিল। এরপর পোলো গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনাল পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে এবং ফাইনালে হল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে প্রথম দেশ হিসাবে দু'বার বিশ্বজয়ের শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
গোটা টুর্নামেন্টে ৩৫টি গোল করে পাকিস্তান। সেই সময় এটাই ছিল সর্বোচ্চ গোলের নতুন রেকর্ড। গোটা প্রতিযোগিতায় মাত্র ৪টি গোল হজম করেছিল তারা।
১৯৩৬ সালে ভোপালের রায়পুর নামে এক গ্রামে জন্মেছিলেন ওয়াহিদ। ১৯৪৯ সালে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে গিয়ে করাচির পিআইবি কলোনিতে বসবাস শুরু করেন। এই ওয়াহিদই ছিলেন আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপজয়ের অনুপ্রেরণা। কীভাবে?
আর্জেন্টিনায় হকিতে তখন চমকপ্রদ পারফরম্যান্স করছে পাকিস্তান। যা মনে ধরেছিল সিজার লুইস মেনোত্তির। যিনি আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বজয়ী কোচ। মেনোত্তি সদলবলে, তাঁর কোচিং স্টাফদের সঙ্গে পাকিস্তানের খেলা দেখতে এসেছিলেন। ফুটবল বিশ্বকাপ তখন মাত্র দু'মাস দূরে।
সেই সময় তাঁরা নোটও নিয়েছিলেন। এমনকী তাঁকে পাকিস্তানের অনুশীলন সেশনেও দেখা গিয়েছিল। সমস্ত কিছুই আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। তখন পুল পর্ব শেষের দিকে। সেদিন ছিল বিশ্রামবার। পাকিস্তানের ম্যানেজার ওয়াহিদ খানকে জানানো হল, মেনোত্তি ব্যক্তিগত বিমানে করে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এই ওয়াহিদ খান কিন্তু ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে পাকিস্তানের স্বর্ণপদক জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন।
দু'জনের মধ্যে কী কী আলোচনা হয়েছিল সেদিন? জানা যায়, মেনোত্তিকে কিছু কৌশল শিখিয়েছিলেন ওয়াহিদ। পাক ম্যানেজার জোর দিয়েছিলেন বিশেষ কিছু দিকে। যখন মাঝমাঠ অচল হয়ে পড়ে সেই সময় উইঙ্গারদের ব্যবহার করতে হবে। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাঁক খুঁজে না পেলে মিডফিল্ডে বলের দখল রেখে তাঁদের হতাশ করতে হবে। এতে ডিফেন্ডাররা সামনে এগিয়ে আসতে বাধ্য হবে এবং ফলে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে।
Published By: Prasenjit DuttaPosted: 08:56 PM Dec 16, 2025Updated: 08:56 PM Dec 16, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
