সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জঙ্গিরা কেড়ে নিয়েছিল স্বামীর প্রাণ। শহিদ মেজর স্বামীর কফিনবন্দি দেহ আর এক বছরের কম সময়ের বিবাহিত জীবনের স্মৃতি আঁকড়েই বেঁচে রয়েছেন নিকিতা ধৌনদিয়াল। স্বামীকে শ্রদ্ধা জানাতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা শুরু করেন পুলওয়ামায় নিহত বিভূতি ধৌনদিয়ালের স্ত্রী। শর্ট সার্ভিস কমিশন এক্সাম এবং ইন্টারভিউ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এবার লক্ষ্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বামীর মতোই দেশের জন্য কিছু করা।
প্রেমের বিয়ে। কিন্তু নবদম্পতির একসঙ্গে বিশেষ সময় কাটেনি। কারণ, দেশ বাঁচানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ৫৫ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে যোগ দেন মেজর বিভূতি ধৌনদিয়াল। সদ্য বিবাহিতদের দেখা হত না। ফোনে প্রতিদিন অল্প সময় কথা হত। বিবাহবার্ষিকীর পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন দু’জনে।
কিন্তু গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বদলে গেল সবকিছুই। পুলওয়ামায় প্রায় ২০ ঘণ্টা জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই চলে জওয়ানদের। তাতে মোট তিনজন সেনার মৃত্যু হয়। নিহতদের তালিকায় ছিলেন বিভূতি। ফোনে স্বামী মৃত্যুর খবর পেয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন বিভূতির স্ত্রী নিকিতা। কাঁদতেও ভুলে গিয়েছিলেন। দেরাদুনের বাড়িতে পৌঁছয় মেজরের কফিনবন্দি দেহ। ঘরের বীর ছেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় গোটা এলাকা। নিকিতা তবুও কাঁদতে পারেননি। স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে কফিনে হাত ঠেকিয়ে আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারেননি নিকিতা। অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। স্বামীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর মুহূর্তেও মুখে ছিল সমান কাঠিন্য। কফিনের কাছে দাঁড়িয়ে স্বামীকে স্যালুট করেন। তারপর কফিনের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি।’
[আরও পড়ুন: বিবাহবিচ্ছেদেই শেষ নয় সন্তানের দায়িত্ব, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের]
এমবিএ করা নিকিতা নয়ডায় এক বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর চাকরিতেও যেন মন বসাতে পারছিলেন না তিনি। নিহত মেজরের স্ত্রী জানান, কঠিন সময়ে পরিজনদের পাশে পেয়েছেন। তাঁর শাশুড়ি চাইতেন বিভূতির স্ত্রীও যোগ দিন সেনাবাহিনীতে। সেই অনুযায়ী কঠিন প্রস্তুতি শুরু করে দেন নিকিতা। তিনি বলেন, “বিভূ মারা যাওয়ার মাত্র ছ’মাস পরে আমি শর্ট সার্ভিস কমিশন এক্সাম বা এসএসসি দিয়েছি। এটাই আমার বিভূকে হারানোর যন্ত্রণা ভোলার একমাত্র রাস্তা। যখন আমি পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছি বিভূর পরীক্ষা দেওয়ার সময় অনুভূতি কেমন ছিল। ওর ভয়, আতঙ্কের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমার। এটাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছে।”
ইন্টারভিউয়ের সময় প্রশ্ন করা হয়, আমাদের কত দিন বিয়ে হয়েছে। উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘দু’বছর বিয়ে হয়েছে।’ কিন্তু প্রশ্নকর্তারা বলেন, ‘আমরা শুনেছিলাম মাত্র ন’মাস বিয়ে হয়েছিল শহিদ মেজরের।’ নিকিতা বলেন, ‘বিভূ মারা গিয়েছে ঠিকই। তাতেও আমাদেক বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি।’ স্বজনহারানোর যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে স্বামীর দেশপ্রেমকে মর্যাদা দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চলেছেন নিকিতা। আপাতত চেন্নাইতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার চিন্তাভাবনাতেই ব্যস্ত শহিদের স্ত্রী।
The post জঙ্গি হামলায় শহিদ মেজর, স্বামীর দেশপ্রেমকে মর্যাদা দিয়ে সেনায় যোগ দিচ্ছেন স্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.