shono
Advertisement

এই চতুর্দশীতে কি সত্যিই ভূতেরা আসে?

সত্যিটা জানলে অবাক হবেন! The post এই চতুর্দশীতে কি সত্যিই ভূতেরা আসে? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:00 PM Nov 04, 2018Updated: 04:00 PM Nov 04, 2018

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভূত চতুর্দশী কী ভাবে পালন করতে হয়, তা বাঙালিকে শেখানো নিষ্প্রয়োজন। খেপার গাজনে আর খেপির পূজনের ছলে যে এই পৃথিবীতে হাজির হন তেনারা, সেও কোনও নতুন কথা নয়। অতএব, ঘরের নানা স্থানে চোদ্দটি প্রদীপ দেওয়া, চোদ্দটি শাক খাওয়া, ছেলেদের কপালের ডান দিকে আর মেয়েদের কপালের বাঁদিকে ঘি-তুলসীপাতা-কাজল ধারণের কথা বিশদে বলা মানে মায়ের কাছে মাসির সাতকাহন ব্যাখ্যা!

Advertisement

তার পরেও ভূত শব্দটা বড্ড ঝামেলা করছে! ভূত বলতে কি ওই প্রেত-পিশাচদেরই ধরতে হবে? না কি ভূত শব্দের ব্যাখ্যা করব উপাদান? মাঝে মাঝে আবার মনে হচ্ছে, ভূত শব্দটা আসলে অর্ধেক! ওটার সঙ্গে একটা লেজুড়ও আছে। দুটোয় মিলে পুরো শব্দটা দাঁড়াবে- ভূতপূর্ব! অর্থাৎ এমন কোনও কিছু যার সঙ্গে যোগ রয়েছে অতীতের।

মুশকিল হল, ভূত শব্দের কোনও তাৎপর্যকেই এখানে ব্রাত্য করা যাবে না। ঠেলে দেওয়া যাবে না অপ্রাসঙ্গিক বলে। ভূত বলতে ধরতে হবে পঞ্চভূত বা ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোমকে। লক্ষ্যণীয়, কার্তিকী এই চতুর্দশীতে যে চোদ্দটি প্রদীপ আমরা দিচ্ছি, তাও কিন্তু এই পঞ্চভূতের উপাদানেই তৈরি। ঠিক যেমন আমাদের এই শরীর! মাটি দিয়ে তৈরি হল প্রদীপের কায়া, জলে তা আকার নিল, আগুনে তা হয়ে উঠল প্রাণবন্ত, হাওয়া তাকে দিল আলোকময়তার আশ্বাস এবং মহাশূন্য জেগে রইল তার খোলে।


পাশাপাশি, ভূত শব্দের যোগ ধরে অতীত এবং মৃতদেরও এই চতুর্দশীর সঙ্গে সংযোগ স্বীকার না করে উপায় নেই। এক দিকে লোকবিশ্বাস বলছে, এই চোদ্দটি প্রদীপের আলো অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে। অন্য দিকে বলছে, এই আলো দেখে ঘরে আসবেন মৃত পূর্বপুরুষরা। সেই দিক থেকে দেখলে এই চোদ্দ প্রদীপ দানের পরম্পরা কোথাও একটা গিয়ে মিলে যায় আকাশপ্রদীপ দানের প্রথার সঙ্গেও। সেখানেও যেমন প্রদীপের রূপকে নিজের শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া, প্রদীপের মতোই প্রাণের আলো জ্বালিয়ে শুদ্ধ হওয়া, এখানেও তাই! বিশেষ করে অমাবস্যায় যখন শুরু হবে দেবী-আরাধনা, তখন চিত্তশুদ্ধি ছাড়া কর্তব্যই বা কী!

ভূত চতুর্দশীর সঙ্গে এই পূর্বপুরুষের সূত্র ধরেই ফিরে আসবে যমের কথা। কেউ কেউ এই কার্তিকী চতুর্দশীকে যম চতুর্দশীও বলেন। সেই মত বলে, এই তিথিতে চোদ্দটি প্রদীপ আসলে উৎসর্গ করা হয় মৃত্যুলোকের অধিপতি যমের উদ্দেশেই। সেই আলো দেখে যম বুঝতে পারেন, কোন বংশ পূর্বপুরুষদের বিস্মৃত হয়নি। সেইমতো তিনি ওই বংশের পূর্বপুরুষদের এই একটি দিনের জন্য প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। এভাবে আলগা গাঁথুনিতে এক গল্পের সঙ্গে অন্য গল্পকে নানা নামে বাঁধতে থাকে এই কার্তিক মাসের চতুর্দশী।


সেই গল্পের ধারা বলে নরক নামে এক মহাপরাক্রান্ত অসুরবীরের কথাও। নরক ছিলেন প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা। তাঁর অত্যাচারে পৃথিবী ত্রস্ত হয়ে ওঠে। স্বর্গলোক আক্রমণ করে নরক হরণ করেন পারিজাত বৃক্ষ এবং ইন্দ্রের মাতা অদিতির কানের দুলও। তখন দেবরাজ ইন্দ্র উপায় না দেখে আসেন দ্বারকায়। শরণ নেন কৃষ্ণের। অতঃপর কৃষ্ণ রওনা দেন নরকবধের উদ্দেশ্যে। একা নন, সঙ্গে থাকেন প্রিয়তমা পত্নী সত্যভামাও। তবে, যুদ্ধে কিছু বেগ পেতে হয় কৃষ্ণের মতো অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধাকেও। একসময় নরকের অস্ত্রের আঘাতে তিনি সাময়িক ভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সেই সময় যুদ্ধ পরিচালনা করেন সত্যভামা। যাই হোক, জ্ঞান ফিরে পেয়ে নরককে বধ করেন কৃষ্ণ। তাঁর আঘাত এবং বিজয় লাভের সংবাদ যখন পৌঁছয় দ্বারকায়, তখন যাদবরা প্রদীপ জ্বালিয়ে সারা নগর আলোকিত করে। কৃষ্ণের জয় ও কুশল উদযাপনে। সেই থেকে যে দিনটিতে নরককে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ, সেই কার্তিক মাসের চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীতে দীপদানের প্রথা শুরু হয়।

নরক শব্দটিকে আবার দেখা যেতে পারে যমলোকের সঙ্গে এক করেও! চতুর্দশীর চোদ্দটি প্রদীপের আলো সাময়িক ভাবে হলেও তো নরকবাস থেকে মুক্তি দিচ্ছে পূর্বপুরুষদের! তাই ভূত চতুর্দশীকে চিনছি নরক চতুর্দশী বলেও! আক্ষরিক অর্থ আর অন্তরের অর্থ মিলে ভূত চতুর্দশী নিয়ে এ এক আশ্চর্য মায়াজাল তৈরি করেছ ভারতীয় সভ্যতা।

আর ওই চোদ্দ শাক? চোদ্দটি শাকপাতার এত মাহাত্ম্য যে তা অপদেবতার হাত থেকে রক্ষা করবে?

বুঝতে অসুবিধা হয় না, চোদ্দ সংখ্যাটা এখানে নিতান্তই চতুর্দশীর সাযুজ্যে আরোপিত! আর এই শাকভক্ষণ শরীরকেও নিরাপদে রাখে বইকি! হেমন্তর এই পটভূমি দ্রুত বদলে যাবে শীতের কুয়াশার প্রেক্ষাপটে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় শরীরে কিছু ধকলও পড়ে বটে! শরীরকে তার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতেই এই চোদ্দটি শাক ভক্ষণ! যা একই সঙ্গে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় বহু পুরনো শিকড়ের কাছে। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার উৎসবের কাছে। হেমন্তের সময় থেকে শীতের জন্য খাদ্যসঞ্চয়ের সেই প্রথাই যেন ফিরে আসে এই চোদ্দ শাক খাওয়ার মধ্যে দিয়ে।

নিজেকে ফিরে পাওয়ার এই প্রথার গায়ে পাশাপাশি জুড়ে যায় শরীর এবং ঘরবাড়ি শুদ্ধ রাখা। স্নান, ঘরের আনাচ-কানাচ সাফাই মনে করিয়ে দেয় ঋতু পরিবর্তনের কালে নিজকে যত্নে রাখার কথা। স্নান করলে শরীর রুক্ষ হবে না, শীতবোধও কমবে। ঘর পরিচ্ছন্ন থাকলে শীতের রুক্ষ আবহাওয়ায় কষ্ট পেতে হবে না ধুলো থেকে আসা শ্বাসকষ্টে।

সব চেয়ে বড় কথা, চতুর্দশীর ঠিক পরের দিনেই তো অমাবস্যার মহাঘোরা যামে শুরু হবে দেবী কালীর আরাধনা। উৎসবের সেই পরম মুহূর্তের প্রস্তুতিপর্বে নিজেকে শুদ্ধ না রাখলে চলে! চতুর্দশীর চোদ্দ প্রদীপে তো সেই আলোকময়ী দেবীরই আবাহন!

The post এই চতুর্দশীতে কি সত্যিই ভূতেরা আসে? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement